বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ। জাতিসংঘের অধীনস্থ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১৯৮০ সাল থেকে সকল সদস্য দেশে এটি পালিত হয়ে আসছে। এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘পর্যটন ও গ্রামীণ উন্নয়ন‘।
দিবসটির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় ও পর্যটনকেন্দ্রের সঙ্গে সেতুবন্ধন গড়ে তোলা। এ ছাড়াও পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া এ দিবসের অন্যতম লক্ষ্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তির পর বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমপ্রসারণের ধারাবাহিকতায় বিশ্বব্যাপী পর্যটন ব্যবসার প্রসার ঘটে। এ অবস্থায় পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিবর্গ ও ভোক্তাশ্রেণির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে আন্তর্জাতিক ভ্রমণবিষয়ক সংস্থা বা আইইউওটিও। এ সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী পর্যটন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রসারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রাজস্ব আয়ে বিশেষ অবদান রাখার প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে রাষ্ট্রসংঘের একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানরূপে যুক্ত হয়। সংস্থাটির কার্যক্রম আরও জোরদার করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রসংঘের বাৎসরিক সম্মেলনের সময় এই সংস্থার সদস্যভূক্ত দেশগুলো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা, পর্যালোচনার মাধ্যমে করণীয় ঠিক করার মাধ্যমে বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছিল।
সেন্ট অগাস্টিন বলেছেন, ‘পৃথিবী একটা বই আর যারা ভ্রমণ করে না তারা বইটি পড়তে পারে না‘। এ রকম অনেক বড় বড় সাহিত্যিক কিংবা মনীষী ভ্রমণ নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু করোনার বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের পর্যটন খাতও অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। কেউ বেড়ানোর কথা চিন্তা দূরে থাক, ঘর থেকে বের হতেই ভয় হতো সবার। তবে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে সবকিছু। নতুন স্বাভাবিকতায় তাই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় রয়েছে দেশের পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা। আবার খুলছে হোটেল, মোটেলসহ পর্যটন স্পট। দর্শনার্থীও দিন দিন বাড়ছে। সংশ্লিষ্টদের আশা, নতুন কোনো সংকট তৈরি না হলে তারা করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন। পর্যটন খাতকে বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। করোনার এ সময়ে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছিল, কিন্তু প্রকৃতি আপন মনে বেড়ে উঠেছে। করোনা পরিস্থিতি একটু একটু করে স্বাভাবিক হচ্ছে দেখে মানুষ আবার বের হচ্ছে ঘর থেকে, বেরিয়ে পড়ছে দূরে কোথাও, প্রকৃতির হাতছানি আকুল করে দিচ্ছে। মুক্ত বাতাসে স্বাদ নিয়ে মানসিক প্রশান্তি উপভোগ করছে। করোনা লকডাউন–পরবর্তী এক নতুন সময়ে পর্যটন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাঁরা।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত ১৭ আগস্ট থেকে কঙবাজারসহ দেশের বেশ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে– কঙবাজার, কুয়াকাটা, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চলনবিল, হালতিবিল, মাধবকুণ্ড, লাউয়াছড়া, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, জাফলং, টাঙ্গুয়ার হাওর, হাকালুকির হাওর ও সবুজ চা বাগানসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। হোটেল, মোটেল, কটেজ, রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বিনোদন কেন্দ্র সর্বত্র ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। ১ সেপ্টেম্বর থেকে খুলেছে বাংলাদেশের দার্জিলিং খ্যাত পর্যটন কেন্দ্র রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি। ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পে প্রায় পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সার্বিকভাবে এই খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ১২ হাজার কোটি টাকা। এ কারণে মহামারী কেটে গেলেও এর ধকল সামলে উঠতে পর্যটন খাতের অন্তত দুই বছর লেগে যেতে পারে। লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও সুরক্ষা সহযোগিতা জরুরি।
এ বছর বাদ দিলে আমরা বলতে পারি, ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস’ এলে প্রতি বছরই ঘটা করে দিবসটি পালন করা হয়। এতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা থাকে, যদিও তা ফলপ্রসূ হয় না। পর্যটন একটি বহুমুখী শিল্প। নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান সরাসরি পর্যটকদের সেবা দিয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে দু’চারটি ছাড়া বাকি সবগুলো প্রতিষ্ঠানই ছোট আয়তনের এবং স্বল্পপূঁজির। ফলে এদের পক্ষে গণমাধ্যমে প্রমোশন কার্যক্রম চালানোর ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হয় না। এদের সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে যে, প্রতি বছর পর্যটন দিবস পালন করলেই যে পর্যটনের উন্নতি সাধিত হয় এমন নয়। এজন্য প্রয়োজন বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে নতুন উদ্দীপনা সঞ্চারিত করা।