দেশের দীর্ঘতম জিপলাইন ও সর্বোচ্চ ক্লাইম্বিং ওয়াল মানিকছড়িতে

পাহাড়ের পর্যটনে নতুন মাত্রা

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | বুধবার , ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে দেশের দীর্ঘতম জিপলাইন, সবচেয়ে উঁচু ক্লাইম্বিং ওয়াল, ওয়াটার জিপলাইন, ট্রি টপ ওয়াকিংসহ এডভেঞ্চার ও ইকো ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তুলেছে উপজেলা প্রশাসন। সবুজ পাহাড় ও লেকের সৌর্ন্দয দেখার পাশাপাশি এখানে রয়েছে ক্যাম্পিং করার সুযোগ।

উঁচুনিচু সবুজ টিলাপাহাড় ও তিনটি কৃত্রিম লেক নিয়ে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে গড়ে ওঠেছে ডিসি এডভেঞ্চার ও ইকোট্যুরিজম পার্ক। আয়তনে ১৬০ একর। পার্বত্য চট্টগ্রামে এডভেঞ্চার নির্ভর এতো বড় পরিসরে পার্ক এটিই প্রথম। ইতোমধ্যে পার্কটি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রকৃতি দর্শনের পাশাপাশি বিভিন্ন এডভেঞ্চার রাইডে অংশ নিচ্ছে পর্যটকরা।

চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা তরুণ পর্যটক ফাহাদ হোসেন বলেন, এখানে অনেক থ্রিলিং পাওয়া গেছে। ক্যাম্পিং করার জন্য তাবু রয়েছে। এখানকার ভিন্নতা হল একসাথে এতো এডভেঞ্চার এক্টিভিটিস দেশের অন্য কোথাও নেই। জিপলাইন, হাইকিং, ওয়াল হাইকিং করেছি। খুবই এনজয় করেছি। ইয়াসির আযম নামে আরেক পর্যটক বলেন, এখানে ইকো ট্যুরিজম পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়েছে। প্রকৃতিকে অক্ষুণ্ন রেখে এতো সুন্দর একটি পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। সত্যিই মুগ্ধ করার মতো। নেচারকে কাজে লাগিয়ে এখানে পর্যটনের বিকাশ হয়েছে। এছাড়া এডভেঞ্চার এক্টিভিটিসের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পর্যটক তানিম ইবনে ইউসুফ ও আজগর বলেন, শহরের অদূরে এসে প্রকৃতির সাথে থাকার যে অনূভূতি সেটা আমরা এখানে পেয়েছি। আমরা ক্যাম্পিং করেছি তাবুতে। দারুণ অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তরুণ পর্যটকদের কাছে পার্কটি নতুন গন্তব্য হয়ে উঠবে। এখানে ভিন্নধর্মী এডভেঞ্চার এক্টিভিটিসে অংশ নিয়েছি। বেশ দারুণ অভিজ্ঞতা। পুরো পার্কটি প্রকৃতিবান্ধব। জিপলাইন, জায়ান্ট সুইং, ট্রি টপ এক্টিভিটিসি অংশ নিয়েছি। খুব ভালো লেগেছে। এখানে প্রকৃতিকে অক্ষত রাখা হয়েছে। ডিসি এডভেঞ্চার ও ইকোট্যুরিজম পার্কের অপারেশন হেড এবং ওয়াইল্ডারনেস বিডির প্রতিষ্ঠাতা সাদাব ইয়াসির বলেন, এডভেঞ্চার এক্টিভিটির মধ্যে রয়েছে সাইক্লিং, মাউন্টেইন বাইকিং, হাইকিং। ডিসি পার্কের পুরো সীমানাজুড়ে একটা হাইকিং ট্রেইল হচ্ছে। বাংলাদেশে এতো সুন্দর ভিউ নিয়ে জিপলাইন কোথাও নেই। এছাড়া ট্রি টপ ওয়াকিং রয়েছে। পর্যটকরা এখানকার সব এডভেঞ্চার এক্টিভিটি এনজয় করতে পারেন। লেকে কায়াকিং রয়েছে। এছাড়া ট্র্যাডিশনাল বাঁশের ভেলাও রয়েছে। ওয়াটার জিপলাইনের পাশাপাশি ক্লাইম্বিং ওয়ালের চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রতিটি এডভেঞ্চার রাইডের জন্য পর্যাপ্ত গাইড ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এভভেঞ্চারভিত্তিক বিভিন্ন রাইডের অংশগ্রহণকারীদের জন্য গাইডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। হেলমেটসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখানে ক্যাম্পিং ট্যুরে তাবুবাসের ৮৫০ টাকার প্যাকেজ আছে। এই টাকার মধ্যে তিন বেলা খাবার অর্ন্তভুক্ত রয়েছে। এছাড়া সব এডভেঞ্চার এক্টিভিটির প্যাকেজ ৮০০ টাকা।

মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রক্তিম চৌধুরী বলেন, এই মুর্হূতে একটা ডিজিটাল সার্ভে করে মাস্টার প্ল্যান করা দরকার। এটা যেহেতু বনে ঘেরা টিলা ও লেকবেষ্টিত তাই এখানে একটা ওয়াচ টাওয়ার বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বেড়াতে আসা পর্যটকদের রাত্রি যাপনের জন্য ক্যাম্পিংয়ের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে রির্সোটও নির্মাণ করা হবে। এটি অনেক বড় একটি পার্ক। অবকাঠামো নির্মাণে প্রচুর অর্থায়ন প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে পর্যটন মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন বোর্ড ও পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে আর্থিক সহায়তা চাইব। পর্যটকদের আর্কষণ বাড়াতে মাউন্টেইন বাইকিং, সুইমিং, জঙ্গল ট্রাকিংসহ বিভিন্ন ধরনের এক্টিভিটিস চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই শীতে একটা ক্যাম্পিং ট্যুর এবং প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চাই।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, এখানে অবশ্যই নিরাপত্তার কোন ঝুঁকি নেই। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি এখানে মানিকছড়ি থানা পুলিশ নিরাপত্তা দিবে। পর্যটকরা এখানকার মনোরম প্রকৃতি মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করতে পারবেন।

পুরো জেলায় পর্যটনকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে এমন প্রকৃতিবান্ধব পর্যটন গড়ে তেলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসন মো. সহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, এখানে জনজীবনের যাতে একটা গতি আসে সে লক্ষ্যে পর্যটন কেন্দ্র বিকশিত করা হচ্ছে। সকলের সাথে সমন্বয় করে জেলা প্রশাসন পর্যটনের উন্নয়ন করছে। ইতোমধ্যে আলুটিলা দেশিবিদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তারাই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের যে বৈশিষ্ট্য রয়েছে তাকে অক্ষুণ রেখে মানিকছড়ি ডিসি এডভেঞ্চার ও ইকোট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। পার্কটিতে ১০০ প্রজাতির ৩০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। ১৬০ একর পার্কের ৫১ একর টিলা ভূমি অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে আসা পর্যটকরা একটা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরতে পারবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদাদা চলে গেলেন, প্রাণে বাঁচলো দুই নাতি
পরবর্তী নিবন্ধ২৮ মামলার আসামি ও ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত নুরু সহযোগীসহ গ্রেপ্তার