অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন যেমন হয়েছে, তেমনি বেড়েছে প্রবৃদ্ধিও। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের (২০২৩–২৪) প্রথম দুই মাসে (জুলাই–আগস্ট) রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। সঙ্গে বেড়েছে প্রবৃদ্ধি। এই দুই মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯৩৫ কোটি মার্কিন ডলার। আয় হয়েছে ৯৩৭ কোটি ডলার।
আয় বেশি হয়েছে ০.২৬ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে আয় হয়েছিল ৮৫৯ কোটি ডলার। সে ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৯.১২ শতাংশ। সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। পরিসংখ্যান থেকে আরও জানা যায়, একক মাস হিসাবে আগস্ট মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। তবে গত বছর একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। আগস্ট মাসে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৮৭ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৪৭৮ কোটি ডলার। আয় কম হয়েছে ১.৮১ শতাংশ। আর গত বছর একই সময় আয় হয়েছে ৪৬০ কোটি ডলার। সে ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৩.৮০ শতাংশ। ইপিবির তথ্য মতে, জুলাই–আগস্ট মাসে গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল সাত হাজার ৮৮ কোটি ডলার। আয় হয়েছে সাত হাজার ৯৯ কোটি ডলার। আয় বেশি হয়েছে শূন্য দশমিক ১.৪৬ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছে সাত হাজার ১১ কোটি ডলার। সে ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১২.৪৬ শতাংশ। একইভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২০ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ১৯ কোটি ডলার। আয় কম হয়েছে ৪.৩২ শতাংশ। এছাড়া গত বছরের একই সময়ে আয় হয়েছে ২২ কোটি ডলার। সে ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১২.৭৩ শতাংশ। এছাড়া উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৯১৩ কোটি ডলার। আয় হয়েছে ৯১৩ কোটি ডলার। আর গত বছরের একই সময়ে আয় হয়েছে ৮৩৩ কোটি ডলার। সে ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৯.৬৬ শতাংশ।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান দুটি খাত। সদ্য সমাপ্ত ২০২২–২০২৩ অর্থবছরে এ দুটি খাতেই বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২১–২০২২ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১০৩ কোটি ডলার আর ২০২২–২০২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ২১৬১ কোটি ডলার। এক্ষেত্রে ২.৭৫% প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অপরদিকে ২০২১–২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৫২০৮ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছিল আর ২০২২–২০২৩ অর্থবছরে ৫৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এক্ষেত্রে ৬.৬৭ % প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রেমিট্যান্স আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয়। রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ৫০টি রপ্তানিকারক দেশের একটি আর এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ ২০টি রপ্তানিকারক দেশের একটি।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেক বছর ধরে বাংলাদেশ পণ্যের বহুমুখীকরণ নিয়ে কথা বললেও এ বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ আর স্বল্পোন্নত দেশ থাকবে না। তখন কঠিন প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে। বাংলাদেশের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে কৌশল নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী কাজ করা। এলডিসি থেকে উত্তরণ–পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বাড়াতে হবে রপ্তানি। আর রপ্তানি বাড়াতে হলে পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে। একই সঙ্গে শুল্ক কাঠামো আধুনিকায়নে জোর দিতে হবে।
তাঁরা বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বৃদ্ধির বিকল্প নেই। রেমিট্যান্স বৃদ্ধি করতে হলে বিদেশে বেশি বেশি লোক পাঠাতে হবে। আর রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশকে উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে হলে বেশি করে শিল্পায়ন করতে হবে। ব্যাপক শিল্পায়নই কেবল একটি দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পারে। শিল্প উদ্যোক্তারা নতুন নতুন কলকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে লোকজনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, নতুন পণ্য উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটায়, আবার সেই পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। ফলে তারা একদিকে আমদানি কমিয়ে পরনির্ভরতা কমায়, অপরদিকে পণ্য রপ্তানি করে দেশকে এগিয়ে নেয়। সুতরাং উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতা দিতে হবে। শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের যোগান দিতে হবে। ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা করতে হবে।