জো বাইডেন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট। বলতে গেলে সারা বিশ্বের নেতৃত্ব যার হাতে। কিন্তু এই ‘জো বাইডেন’ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নন। গত বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জো বাইডেন যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পথে ছিলেন, তখন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জন্ম নেয় দুই বাঘ শাবক। বাঘিনী থেকে দুধ না পেয়ে একটি শাবক মারা গেলেও মুমূর্ষু আরেকটি শাবককে গভীর মমতায় সারিয়ে তোলেন চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ। ওই সময় শাবকটির নাম রাখা হয় ‘জো বাইডেন’। এতদিন ডা. শুভ নিজের মতো করে বড় করছিলেন শাবকটিকে। সময় যতই গড়িয়েছে চিড়িয়াখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে ততই খেলাধুলায় কাটিয়েছে শাবকটি। এখন শাবকটি সুস্থ সবল হয়েছে। তাই অন্য বাঘের সঙ্গ পাওয়ার জন্য খাঁচায় দেওয়া হয়েছে ‘জো বাইডেনকে’। প্রাথমিকভাবে ১৮শ বর্গফুটের আলাদা খাঁচায় রাখা হয়েছে সেটিকে। পরবর্তীতে অন্য বাঘের সাথে বড় খাঁচায় ছেড়ে দেওয়া হবে শাবকটিকে।
চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন বাঘবিহীন থাকার পর ২০০৩ সালে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দুটি বাঘ আনা হয়। বাঘ দুটির নাম দেয়া হয়েছিল ‘চন্দ্র’ ও ‘পূর্ণিমা’। ২০০৬ সালে ‘চন্দ্র’ মারা যায়। বয়স হওয়ার কারণে গর্ভধারণও সম্ভব ছিল না পূর্ণিমার। এর মধ্যে ২০০৯ সালে পূর্ণিমার ক্যান্সার ধরা পড়ে। ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর মারা যায় ‘পূর্ণিমা’। এরপর পুনরায় চার বছর আবারো বাঘবিহীন হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা।
এদিকে চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে শ্রীহীন হয়ে পড়ে দেশের বেসরকারিভাবে পরিচালিত একমাত্র চিড়িয়াখানাটি। পরবর্তীতে অনেক চিঠি চালাচালির পর ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর দুটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার সংযোজন করা হয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানার নিজস্ব অর্থায়নে ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাঘ দুটি আনা হয়। চিড়িয়াখানায় বাঘ দুটির নাম রাখা হয় ‘রাজ’ ও ‘পরী’। ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই প্রথমবারের মতো তিনটি শাবকের জন্ম দেয় পরী। এর মধ্যে বিরল প্রজাতির দুটি সাদা বাঘও জন্ম দেয়। তন্মধ্যে একটি সাদা বাঘ মারা গেলেও অন্য সাদা বাঘিনীটি এখনো চিড়িখানার শোভা বাড়াচ্ছে। সাদা বাঘিনীর নাম রাখা হয় ‘শুভ্রা’ ও ডোরাকাটা অন্য বাঘটির বাম রাখা হয় ‘জয়া’। ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর পরী আরও দুটি শাবকের জন্ম দেয়। পরেরদিনই একটি মারা যায়। বেঁচে থাকা অন্য শাবকটি জন্মের পর থেকেই মুমূর্ষু অবস্থায় রাখা হয় ইনকিউবেটরে। পরে তিন মাস পৃথক খাঁচায় নিবিড় পরিচর্যার পর সুস্থ হওয়ায় এটি অন্যদের সাথে খাচায় দেওয়া হয়। এসময় বিশ্বে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে আলোচিত ভাইরাসের নামের সাথে মিলিয়ে বাঘটির নাম রাখা হয় ‘করোনা’।
পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর পরীর মেয়ে বাঘিনী জয়ার ঘরে জন্ম নেয় তিনটি শাবক। এর মধ্যে ১৫ নভেম্বর একটি এবং ১৮ নভেম্বর আরও একটি শাবক মারা যায়। এক্ষেত্রেও মুমূর্ষু অন্য শাবকটি সেবা শুশ্রুষার দায়িত্বে নেন চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ। শাবকটি নাম রাখেন ‘জো বাইডেন’। প্রায় ৫ মাস পর গতকাল (২১ এপ্রিল) জো বাইডেনকে আলাদা খাঁচায় দেওয়া হয়।
ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা ৬টি। ৬টি বাঘ রাখার মতো পর্যাপ্ত খাঁচা ছিল না। তাই বাঘের জন্য ৭ হাজার বর্গফুটের একটি বড় খাঁচা বানানো হয়েছে। এটি আগের খাঁচার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। বাইডেনকে প্রথমে ১৮শ বর্গফুটের আলাদা একটি খাঁচায় রাখা হয়েছে। কয়েকদিন গেলে বড় খাঁচায় ছেড়ে দেওয়া হবে। সেখানে অন্য বাঘের সাথে মিশে সে নিজের সঙ্গীনী খুঁজে নেবে।’
নতুন খাঁচার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাঘের বেড়ে উঠার জন্য যে ধরনের পরিবেশ প্রয়োজন, ঠিক সেভাবে নতুন খাঁচাটি তৈরি করা হয়েছে। বাঘ যাতে লাফালাফি করতে পারে, গাছে উপরে নীচে চড়তে পারে, চাইলে যাতে লুকোতে পারে, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। খাঁচার পরিবেশটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে বাঘেরা স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করে। নতুন খাঁচাটি পুরো বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গর্জিয়াস একটি বাঘের খাঁচা। এ ধরনের খাঁচা অন্য চিড়িয়াখানাতে নেই। দর্শনার্থীরাও খাঁচাটি দেখে স্বস্তি পাবেন, আনন্দ পাবেন। বাঘগুলোও স্বাচ্ছ্যন্দে থাকতে পারবে।’
বাঘের নাম ‘জো বাইডেন’ রাখার বিষয়ে ডা. শুভ বলেন, ‘গত বছর যখন বাঘটি জন্ম নেয় তখন আমেরিকার ৪৬তম মার্কিন নির্বাচন চলছিল। নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিল। এটি বিশ্বের আলোচিত নির্বাচন ছিল। এজন্য বাঘের ছানাটির নাম রাখা হয়েছিল ‘জো বাইডেন’।