নগরীর আউটার স্টেডিয়াম এলাকাটিকে দৃষ্টিনন্দন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। সে হিসেবে আউটার স্টেডিয়ামকে ঘিরে বেশকিছু কাজও সম্পন্ন হয়েছিল। মাঠ ও ওয়াকওয়ের কাজটা সম্পন্ন হলে এলাকাটি চট্টগ্রাম নগরীর একটি সৌন্দর্যময় জায়গা হিসেবে পরিচিতি লাভ করতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা আর হয়নি। তার উপর পরিকল্পনা মাফিক কাজ না হওয়ায় শোভা বর্ধনের নামে করা আউটার স্টেডিয়ামের কাজগুলো এক ধরনের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে।
এক সময় আউটার স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশে মার্কেট করার চেষ্টা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিশিষ্ট নাগরিকদের আন্দোলনের মুখে তা হতে পারেনি। এরপর দীর্ঘ দিন অবহেলায় পড়েছিল আউটার স্টেডিয়াম। দুই বছর আগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এই আউটার স্টেডিয়াম এবং তৎসংলগ্ন এলাকাকে সুন্দর করে গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নেয়। যে প্রকল্পে ছিল মুক্ত মঞ্চ, পাবলিক টয়লেট, একটি টি স্টল, ছোট্ট একটি নার্সারি এবং যাত্রী ছাউনি। ভেতরের অংশে ওয়াকওয়ে এবং সবশেষে মাঠ।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হয়নি। এই প্রকল্পের ডিজাইন করেছিলেন স্বাপ্নিক ডিজাইন স্টুডিওর তিনজন আর্কিটেক্ট। তারা হলেন আর্চিমান দাশ, অরিত্র দে এবং সুলতান আহমেদ। আর তাদের সাথে ছিলেন আর্কিটেক্ট জেরিনা হোসেন। তিনি জানান, এই প্রকল্পে আউটার স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশটা রাখা হয়েছিল একেবারে খোলা। পশ্চিম পাশে কোনায় মুক্ত মঞ্চ, তারপর নিচে পাবলিক টয়লেট এবং যেহেতু টয়লেট নিচে সে হিসেবে রাস্তার সাথে সমান যে অংশটাতে ছাদ স্থাপিত হবে সেখানে একটি টি স্টল বসানোর পরিকল্পনা ছিল। যা দিয়ে প্রকল্পটির রক্ষণাবেক্ষণের কাজটা সম্পন্ন করা যাবে। কিন্ত সার্কিট হাউজের সামনে বসানো হয়েছে পুলিশ বক্স। যেটা পরিকল্পনায় ছিল না। আর এই পুলিশ বক্সের পাশে বসানো হয়েছিল স্টিল স্ট্রাকচারে বেশ কিছু টি-স্টল। কিছুদিন আগে সিটি কর্পোরেশন সে স্ট্রাকচার ভেঙে দিলেও গতকাল পর্যন্ত ছোট বড় মিলে ১৪টি চায়ের দোকান বসেছে আউটার স্টেডিয়াম এলাকাজুড়ে। ফলে একদিকে যেমন ব্যাহত হয়েছে শোভা বর্ধনের পরিকল্পনাটি, তেমনি দিন দিন দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশে বাস স্টপের দুপাশে বসানো হয়েছে দুটি দোকান। এর পরপরই অপর পাবলিক টয়লেটের উপর প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে আরো একটি দোকান। অবশ্য তার পরেই রয়েছে পরিকল্পনায় থাকা নার্সারিটা। কিন্তু পরিকল্পনা মাফিক কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় দিন দিন শ্রী হারাচ্ছে আউটার স্টেডিয়ামের এই এলাকাটি। গতকালও দেখা গেছে, আউটার স্টেডিয়ামের চারপাশে যে অংশটুকু শুকনো ছিল সেটি ভ্যান গাড়ির গ্যারেজে পরিণত করা হয়েছে। পাশাপাশি যাত্রী ছাউনি এবং বসার যে সব জায়গা রাখা হয়েছে কেবল সার্কিট হাউজ প্রান্তের অংশটা বাদ দিয়ে বাকি সব ছিন্নমূল মানুষের দখলে চলে গেছে। ফলে সৌন্দর্য বর্ধনের যে উদ্দেশ্য ছিল সেটা বলতে গেলে হোঁচট খেয়েছে। তাছাড়া যে সমস্ত দোকানগুলো বসানো হয়েছে সেসব দোকানের বর্জ্য এবং ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে আউটার স্টেডিয়ামের ভেতর এবং বাহিরের অংশে। এতে স্থানটি যেমন অপরিচ্ছন্ন হচ্ছে, তেমনি দূষিত হচ্ছে পরিবেশও। পাশাপাশি যে মুক্তমঞ্চটি করা হয়েছিল সেখানে এখনো পর্যন্ত কোনো অনুষ্ঠান করা না হলেও সন্ধ্যায় ছেলে-মেয়েদের আড্ডা জমে। ফলে জায়গাটি খাবারের প্যাকেট আর বাদামের খোসায় অপরিচ্ছন্ন করে ফেলছে তারা।
গতকাল আউটার স্টেডিয়াম এলাকার দোকানদাররা জানালেন, তারা বসছে এক রকম আতংক নিয়ে। কখন যে বাঙ পেটরা নিয়ে দৌঁড় দিতে হয় তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই তাদের পক্ষে পর্যাপ্ত ময়লা ফেলার ডাস্টবিন বসানো সম্ভব নয়। তার উপর সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ঠিকমত ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে না বলে অভিযোগ করেছেন তারা। যে কারণে সুন্দর এলাকাটি পরিণত হচ্ছে অসুন্দরে। আর দিন দিন এভাবে ময়লা আবর্জনা পড়তে পড়তে আউটার স্টেডিয়ামের মাঠের অংশটা আবারো আবর্জনার স্তুপে পরিণত হচ্ছে।