এক সময়ে আমার খুব পছন্দের অভ্যাস ছিল সকালে বিছানা ছাড়ার পূর্বেই পত্রিকায় চোখ বুলানো। ইদানীং মনে হচ্ছে আমার অত্যন্ত প্রিয় সেই অনেক পুরোনো অভ্যাস আমার মন আঁকড়ে ধরে রাখার পরিবর্তে তা যতো দ্রুত সম্ভব ত্যাগ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেছে। এর মূল কারণ হিসেবে পত্রিকায় প্রকাশিত অত্যন্ত ঘৃণিত ধর্ষণ, জঘণ্য হত্যাকাণ্ড, সড়ক দুর্ঘটনা, চুরি–ডাকাতিসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম দায়ী।
আমাদের দেশের অনেক অনেক পুরোনো ব্যাধি ধর্ষণ ইদানীং জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি ধর্ষণ যে ধর্ষিতা এবং তার পরিবারের সারা জীবনের কান্না, সমাজের বোঝা, দেশের কলঙ্ক ইত্যাদি তা এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিগণ যদি বিন্দু মাত্র অনুধাবন করতে পারতো তা হলে এমন সেরা মন্দ কাজ বন্ধ হওয়ার পরিবর্তে কখনো এভাবে বৃদ্ধি পেতো না। এদের চক্ষুলজ্জা বা বিবেক এতোই লোপ পেয়েছে যে, নিজের ঔরষজাত কন্যাকে পর্যন্ত মানুষ নামের কিছু পশু যেন …। একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, এ কাজের শাস্তি সম্পর্কে সকলকে সচেতন করার পাশাপাশি বিরত থাকতে তথা সুশিক্ষা দানের মাধ্যমে নিরুৎসাহিত করার কাজে ন্যস্ত দেশের বিদ্যাপীঠের সম্মানিত শিক্ষকগণ, ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনে পারদর্শীগণও এ কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। তবে এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের সম্মানিত শিক্ষকগণের কৌশল ভিন্ন তথা ভালো নম্বর বা বৃত্তি পাইয়ে দেয়া বা গবেষণার কাজে সহযোগিতা করা ইত্যাদি কৌশল অবলম্বনপূর্বক ছাত্রীকে এ কাজে বাধ্য করা হয়।
আমাদের দেশের ৪ বছরের শিশু হতে ৬০ বছরের বৃদ্ধা কেউই যেন নিজের ইজ্জত রক্ষায় বর্তমানে নিরাপদ নয়। ধর্ষণের শিকার হওয়া অনেকে আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটালেও জীবিতগণ বেঁচে থেকে আমরণ কলঙ্কের বোঝা বহন করে বেড়ায়, তাঁর পরিবারের সদস্যগণ অনন্তকাল মানসিক শাস্তি ভোগ করে। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্ষিতাকে বাঁকা চোখে দেখলেও ধর্ষক যে বীরদর্পে সমাজে ঘুরে বেড়ায় সে দিকে তাদের তেমন খেয়াল থাকে না। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা সকল অপকর্মের সেরা এমন জঘন্যতম কাজ জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার মূল কারণ হলো প্রকৃত অপরাধীগণের (ক) যে কোনো উপায়ে শাস্তি হতে মুক্তি পাওয়া বা (খ) শাস্তির পরিমাণ কম হওয়া বা (গ) শাস্তি হতে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা। ফলে এমন অমানুষগণ একাধিক বার এমন খারাপ কাজে লিপ্ত হতে দ্বিধাবোধ করে না। আমাদের দেশে প্রচলিত আইনে একাজে লিপ্তকারীগণের কঠোর শাস্তির বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা বাস্তবায়িত হয় না। ফলে প্রকৃত শাস্তির ভয় না থাকায় এটি চিরতরে বন্ধ বা হ্রাস পাচ্ছে না। প্রত্যেক ধর্মগ্রন্থেই ধর্ষণের কুফল তথা কঠোর শাস্তির বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা এমন নরপশুদের যত দ্রুত সম্ভব কঠিন শাস্তির আওয়ায় এনে তা ব্যাপকারে প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এটি অনেকাংশে হ্রাস পাবে।