এবার পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে হালদার পাড় ভেঙে ফটিকছড়িতে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। বন্যার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন হালদাপাড়ের কৃষকরা। দুর্যোগ কাটিয়ে ফের স্বপ্ন দেখেন তারা। ব্যস্ত হয়ে পড়েন ভান্ডারি মুলা, লাল আলু ও আখসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজি চাষের কাজে। কখনো সফল হন, আবার কখনো নিমজ্জিত হতে হয়ে ব্যর্থতার গ্লানিতে। তবে গত কয়েক বছর ধরে ভান্ডারি মুলা মানে জাপানি হাইব্রিড মুলা চাষে সফল হয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলার কৃষকরা। মাইজভান্ডার দরবার শরীফে মাঘের মেলায় জাপানি মুলা বিক্রি হওয়াতে নাম পরিবর্তন হয়ে সবাই এটির নাম রেখেছে ভান্ডারি মুলা। সারাদেশে ভান্ডারি মুলা নামটিও ছড়িয়ে পড়েছে। বেড়েছে কদর।
চলতি মৌসুমে চাষ করা সেই রোপা জাপানি মুলায় নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা। সেই স্বপ্নে বিভোর এখন ফটিকছড়ি উপজেলার সুয়াবিল নাসির মোহাম্মদ ঘাট, খিরামের সর্তা খালের পাড়সহ হালদা পাড়ের কৃষকরা। জাপানি মুলা, লাল আলুসহ শীতকালীন শাকসবজি চারা রোপণের ব্যস্ততা শেষ। এখন চলছে চারাগাছের পরিচর্যা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, চলতি বছরে ফটিকছড়িতে ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে রোপা জাপানি মুলা, লাল আলু, আখ, শীতকালীন সবজি চাষে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কঠোর পরিশ্রম করছেন উপজেলার কৃষকেরা। ইতোমধ্যে কিছু কিছু জমিতে চারা গাছ বড় হতে শুরু করেছে। আবার কিছু কৃষকের জমিতে ফলানো শীতকালীন আগাম সবজি বিক্রি করাও শুরু করেছেন। কৃষকেরা জানান, এবার কৃষি কাজে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে সার ও বীজ। এছাড়া শ্রমিকের খরচ ও বীজের দামও অনেক বেশি।
গত বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার হালদা নদীর নাসির মোহাম্মদ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, শীতকালীন শাকসবজি আর জাপানি হাইব্রিড মুলা গাছে সবুজ চাদরে ঢেকে গেছে হালদা নদীর দুই তীর। শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুকে জেগে ওঠা ছোট–বড় অসংখ্য চরেও করা হয়েছে শাকসবজির আবাদ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা।
এ সময় উপজেলার সবচেয়ে বড় মুলা চাষি মো. সোহেলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এবারের বন্যায় নদীর চর ৩–৪ ফুট উঁচু হয়ে গেছে। চর উপরে শুকনো হলেও নিচে এখনো ভেজা তাই চারাগাছ ভালো হয়েছে। তবে শেষ মুহুর্তে কী হবে তা এখনো অজানা। গত বছর ৮০ শতক জায়গায় মুলা চাষ এবং ১২০ শতক জায়গায় লাল আলু চাষ করেছে সোহেল। সে বছর একেকটি মুলা সর্বোচ্চ ১২ কেজি পর্যন্ত হয়েছিল। ১ লাখ টাকা খরচ করে তখন লাভ হয়েছিল প্রায় আড়াই লাখ টাকা। তবে গতবারের তুলনায় এবার দ্বিগুণ মুলা চাষ করেছে সে। আগামী মাইজভাণ্ডারের মাঘের মেলাকে কেন্দ্র করে চলছে মুলা গাছের পরিচর্যা। আশা করছে সব ঠিক থাকলে গত বছরের চেয়ে এবার ভালো ফলন হবে।
এছাড়াও সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দৌলতপুর ইউনিয়নের কুম্ভারপাড়া, নাইচ্যারকুল ও নাজিরহাট চর, সুয়াবিল ইউনিয়নের ভাঙা দিঘির পাড়, পূর্ব–সুয়াবিল, মন্দাকিনী ও হালদারকূল এবং সুন্দরপুর ইউনিয়নের এককুলীয়া, পাঁচ পুকুরিয়া, সুন্দরপুর চর ও হারুয়াল ছড়ি এলাকার হালদার দুই তীরের প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তীর্ণ চরের জমিতে শীতকালীন শাকসবজির চাষাবাদ হয়েছে। এসব খেতে রোপণ করা হয়েছে মুলা, লাল আলু, বেগুন, মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মিষ্টি কুমড়া ও টমেটোসহ নানা রকম সবজি।
কুম্ভারপাড়া গ্রামের কৃষক মুহাম্মদ রুবেল উদ্দিন বলেন, শুরুতে মুলা, বেগুন, ফুলকপি ও বাঁধাকপির ফলন ভালো হয়েছে। এখন মরিচ রোপণ করেছি। আশা করছি ফলন ভালো হবে।
সুয়াবিল গ্রামের সবজি চাষি মুহাম্মদ মুন্না বলেন, গত কয়েক বছর মুলা চাষ ভালো হয়েছে। এ বছরও সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকায় লাভের মুখ দেখব বলে আশা করছি।
উপজেলা কৃষি হাসানুজ্জামান বলেন, এ অঞ্চলের চরের কৃষকেরা বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল সবজির চাষাবাদ করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন। হালদা চরের মাটিগুলো অন্যান্য জায়গার মাটির চেয়ে অনেক বেশি উর্বর এবং ফলনশীল যাকে এক কথায় সোনার মাটি বলা যায়। কৃষকদের মধ্যে সরকার কর্তৃক ন্যায্য মূল্যের সার ও কীটনাশক সরবরাহ করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে চাহিদা পূরণের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও ভূমিকা রয়েছে এ সকল চাষিদের।