করোনা আক্রান্তদের মাঝে অন্তত ৪৮ ভাগ রোগী দুর্বলতা ও অবসাদ জটিলতায় ভুগছেন। আর আক্রান্তদের মধ্যে যারা মারা গেছেন, তাদের ৬৭ ভাগই এই জটিলতায় (দুর্বলতা ও অবসাদ) ভুগেছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া করোনা রোগীদের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের তিন চিকিৎসক যৌথভাবে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। তিন চিকিৎসক হলেন- চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুযত পাল, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এবং চমেক হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া (আইসিইউ) বিভাগের মেডিকেল অফিসার বন্বী চক্রবর্তী। এছাড়া চমেক ও সাউদার্ন মেডিকেল কলেজের চারজন শিক্ষার্থী এই গবেষণায় সহযোগী হিসেবে ছিলেন।
গবেষকরা জানান- গত বছরের (২০২০ সালের) এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর সময়কালে এ গবেষণার জন্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। চমেক ও জেনারেল হাসপাতালের মোট ৯৩ জন করোনা রোগীর উপর এ গবেষণা চালানো হয়। গবেষণার সারমর্ম অনুযায়ী- ৯৩ জন করোনা রোগীর মধ্যে আক্রান্তকালীন সময়ে শারীরিক দুর্বলতার পাশাপাশি অবসাদের শিকার হয়েছেন ৪৫ জন। যা মোট সংখ্যার ৪৮ শতাংশ। আক্রান্ত ৯৩ জনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। যাদের ১০ জনই দুর্বলতা ও অবসাদ জটিলতায় ভুগেছেন। অর্থাৎ আক্রান্তদের মধ্যে যারা মারা গেছেন, তাদের ৬৭ ভাগই এই জটিলতায় ভুগেছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন- করোনায় আক্রান্ত অনেকের প্রচণ্ড রকম শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি ও অবসাদ জটিলতা দেখা যায়। অন্য কোনো উপসর্গ বা লক্ষ্মণ না থাকলেও অনেকেই এই জটিলতায় (দুর্বলতা, ক্লান্তি ও অবসাদ) ভুগেন। অনেকের হাঁটাচলা করার শক্তিটুকুও থাকে না। ভীষণ ক্লান্তি বোধ চলে আসে। করোনা আক্রান্তদের প্রতি একশ জনে ৪৮ জন রোগী এ জটিলতার সম্মুখীন হয়েছেন উল্লেখ করে গবেষণা টিমের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. সুযত পাল বলেন- আক্রান্তকালীন সময়ে তো আছেই, কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠার পরও রোগীর দীর্ঘদিন দুর্বলতা, ক্লান্তি ও অবসাদ জটিলতা দেখা যাচ্ছে। এটি কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এ ধরনের জটিলতা দেখা দিলে রোগীকে যথেষ্ট পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সুযত পাল বলেন- ভিটামিন ও খনিজযুক্ত খাবার, বেশি করে আমিষ ও প্রচুর পানি পান করতে হবে। যথেষ্ট ঘুম এবং বিশ্রাম নিতে হবে।
গবেষণা বলছে- দুর্বলতা ও অবসাদ জটিলতা ছাড়াও করোনা আক্রান্তদের ৭১ শতাংশ (৬৬ জন) রোগী জ্বরে ভুগেছেন। সর্দি-কাশির জটিলতায় ভুগেছেন ৬৫.৬ শতাংশ (৬১ জন) রোগী। ৫০ ভাগ রোগী নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্টকর অনুভূতির (ডিফিকাল্ট ব্রেথিং) সম্মুখীন হয়েছেন। তাছাড়া ১৫ শতাংশ গলা ব্যাথায় ও ডায়রিয়ায় ভুগেছেন ১৪ শতাংশ। মাংসপেশিতে ব্যাথ্যা ও মাথা ব্যাথায় ভুগেছেন ১১ শতাংশ। বুকের ব্যাথায় ৯.৭ শতাংশ, নাক দিয়ে সর্দি পড়া জটিলতায় ৯.৭ শতাংশ এবং স্বাদ ও গন্ধ না পাওয়ার জটিলতায় ভুগেছেন ৯.৭ শতাংশ রোগী।
‘রোগের উপসর্গ এবং কোভিড সংক্রমনে মারাত্মকতার সম্পর্ক’ (ইনভেস্টিগেটিং দ্যা রিলেশনশীপ বিটুইন ক্লিনিক্যাল ফিচারস এন্ড ফাটালিটি ইনফেকশনসঃ রিপোর্ট ফ্রম টু কোভিড হসপিটাল) শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধটি এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে উপস্থাপন করা হয়েছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে উপস্থাপনের পর প্রবন্ধটি বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।