বিশ্বের ১৮০টি দেশের দুর্নীতিচিত্র গত এক বছর বিশ্লেষণ করে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। বার্লিনভিত্তিক এই দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার প্রকাশিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচকে’ (সিপিআই) এ বছর বাংলাদেশের অবস্থানের অবনমন ঘটেছে দুই ধাপ, তবে স্কোর গতবারের সমান।
বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের ২০২০ সালের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা এই সূচকে গত দুই বছরের মত ২৬ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভালো থেকে খারাপ) ১৪৬ নম্বরে। আর উল্টোভাবে, অধঃক্রম (খারাপ থেকে ভালো) অনুযায়ী ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় এবার বাংলাদেশ রয়েছে দ্বাদশ স্থানে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, এই ফলাফল হতাশা ব্যঞ্জক বলে মনে করছি। স্কোরে কোনো উন্নতি হয়নি। অন্যদিকে আমাদের অবস্থান দুই ধাপ নিচে নেমে এসেছে। আমাদের আরও হতাশা হচ্ছে- এবারও দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনিম্নতে রয়েছে। একমাত্র আফগানিস্তানের পর বাংলাদেশের অবস্থান। আফগানিস্তানের স্কোর ১৯ এ আছে। ১০০ ভিত্তির এই সূচকে শূন্য স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ১০০ স্কোরকে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বোচ্চ সুশাসনের দেশ হিসেবে বিবেচনা করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। আগে দশভিত্তিক সূচকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরা হলেও ২০১২ সাল থেকে ১০০ ভিত্তির এই সূচক প্রকাশ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, নিচের দিক থেকে হিসেবে করলে বাংলাদেশের র্যাঙ্কিং কমেছে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত আমরা সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিলাম, তারপর ওপর থেকে ক্রমাগত র্যাঙ্কিং বেড়েছে। আমরা মনে করি যেসব উপাদান ফলাফলের ওপরে কাজ করেছে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে- প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা অন্যতম কারণ। আমাদের রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের বড় ধরণের নিরসন হয়েছে। আবার দুর্নীতি ও বিচারহীনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাথের্র দ্বন্দ্ব বিরাজ করতে দেখা যায়। রাজনীতিকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জনের উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
টিআই জানায়, এবারের সূচকে গড় স্কোর হল-৪৩। এ বছর ৫৩টি দেশ ৪৩ স্কোর বা তার বেশি পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি স্কোর করেছে ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ড, তারা ১০০ মধ্যে ৮৮ স্কোর পেয়েছে। সবচেয়ে নিম্ন স্কোর ১২ পেয়েছে দক্ষিণ সুদান ও সোমালিয়া। এবার ৬২ দেশের স্কোর বেড়েছে। ৭০টি দেশের স্কোর আগের মতই রয়েছে এবং ৪৮টি দেশের স্কোর নেমে এসেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের ১০০ এর মধ্যে ২৬ পেয়েছে। নিচের দিক থেকে হিসাব করলে দ্বাদশ এবং ওপর থেকে হিসেব করলে ১৪৬তম। ২০১৮ ও ২০১৯ সালের সমান স্কোর। ২০১৯ সালের তুলনায় নিচের দিকে চতুর্দশ থেকে দ্বাদশে নেমে এসেছে। এটাই বেশি আলোচিত হয়। টিআইবি নির্বাহী পরিচালক বলেন, বাংলাদেশের ২০০১ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত স্কোরে ক্রমাগত অগ্রগতি হয়েছে, এই জন্য আমরা সন্তুষ্ট। তবে স্কোর ২০ এর কোটাতে স্থির হয়ে আছে। যেটি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য ও হতাশাজনক বলে আমরা মনে করছি।