ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বিচারে গত এক বছরে বাংলাদেশে দুর্নীতি পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হয়েছে, তাতে তাদের বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের এক ধাপ অবনমন ঘটেছে। তাদের প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচকের (সিপিআই) ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভাল থেকে খারাপ) বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৪৭ নম্বরে। ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী গতবারও এ তালিকায় বাংলাদেশ ১৪৭ নম্বরে ছিল। আবার অধঃক্রম অনুযায়ী (খারাপ থেকে ভালো) বিবেচনা করলে বাংলাদেশ অবস্থান এবার ১৮০ দেশের মধ্যে দ্বাদশ, যেখানে গতবছর ছিল ত্রয়োদশ অবস্থানে। খবর বিডিনিউজের।
১০০ ভিত্তিতে এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর তিন বছর পর ১ কমে ২৫ হয়েছে। এই স্কেলে শূন্য স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ১০০ স্কোরকে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বোচ্চ সুশাসনের দেশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের ২০২২ সালের দুর্নীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বার্লিনভিত্তিক সংস্থা টিআই গতকাল মঙ্গলবার তাদের এই বার্ষিক সূচক প্রকাশ করে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এবারের প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক এবং বাংলাদেশের দুর্নীতির পরস্থিতি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সূচকে বাংলাদেশের নিম্ন স্কোর ও অবস্থান সার্বিক কোনো অগ্রগতি যেমন নির্দেশ করে না, তেমনি দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণেও অস্বস্তিকর স্থবিরতার প্রমাণ দেয়। এটি আরও প্রমাণ করে যে, ‘জিরো টলারেন্সের’ অঙ্গীকারসহ সরকারের দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন পর্যায়ের ঘোষণা সত্ত্বেও আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও কাঠামোগত দুর্বলতায় বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থানের কোনো উন্নতি হচ্ছে না।
এই সূচকে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় এবারও দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে বাজে অবস্থা কেবল আফগানিস্তানের। ২৪ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তান ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভাল থেকে খারাপ) রয়েছে তালিকার ১৫০ নম্বরে। দেখা যাচ্ছে, তালেবান শাসনে থাকা আফগানিস্তানের স্কোর গতবারের চেয়ে ৮ বেড়েছে। আর তালিকার ঊর্ধ্বক্রমে ১৭৪তম অবস্থান থেকে ২৪ ধাপ উন্নতি হয়েছে।
গতবারের মতই দক্ষিণ এশিয়ায় ৬৮ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে (ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী ২৫ নম্বরে) আছে ভুটান। এরপর ভারত ও মালদ্বীপ ৮৫ (স্কোর ৪০), শ্রীলঙ্কা ১০১ (স্কোর ৩৬), নেপাল ১১০ (স্কোর ৩৪), পাকিস্তান ১৪০তম (স্কোর ২৭) । ২৫ স্কোরে বাংলাদেশের সঙ্গে সূচকের একই অবস্থানের রয়েছে গিনি ও ইরান।
সূচক বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। সর্বশেষ এগারো বছরে বাংলাদেশের স্কোর ঘুরেফিরে ২৫ থেকে ২৮ এর মধ্যেই রয়েছে।
প্রতিবেদনের সারমর্মে বাংলাদেশের অবনমনের পেছনে কিছু কারণ তুলে ধরা হয়। ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে শুধুই ‘রাজনৈতিক বক্তব্যে’ সীমাবদ্ধ রাখা, মহামারীকালে সরকারি খাতে সুরক্ষাসামগ্রী থেকে শুরু করে সাধারণের কাছে বিভিন্ন সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম, অর্থ পাচারের রিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া, রাজনীতি ও ব্যবসায়ীক পরিমণ্ডলে প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত সরকারি ও আমলাতান্ত্রিক বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে সেখানে।
টিআই এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবারের সূচকে ১৮০টি দেশের গড় স্কোর গতবারের মতই ৪৩। তালিকায় এবার সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া; তাদের স্কোর ১২। সর্বোচ্চ ৯০ স্কোর নিয়ে গতবারের মতই তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ডেনমার্ক। এর পরে রয়েছে ফিনল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড, নরওয়ে, সিঙ্গাপুর, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ড।