আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যখন বাংলাদেশে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে নির্মূল করার চেষ্টা করা হয়েছিল, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছিল, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার, গুপ্ত হত্যা, বিনা বিচারে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা, বিনা বিচারে জেল দিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াস ছিল সেই সময়ের ক্ষমতাসীনদের। সেই সময়ে যখন আওয়ামী লীগের অসহায় অবস্থা ছিল, তখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তখন জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন আখতারুজ্জামান বাবু ভাই। দলের প্রয়োজনে তাঁকে হাত খুলে সাহায্য করতে দেখেছি। দলের জন্য খরচ করতে দেখেছিলাম। তখন থেকেই আদর্শিক নেতা হিসেবে আমরা তাঁকে স্মরণ করতাম।
গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুভাই সদা সদালাপী মানুষ ছিলেন, দানশীল ছিলেন। সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল, একদিকে তিনি রাজনীতিবিদ ছিলেন, আরেক দিকে ছিলেন প্রতিষ্ঠিত সফল ব্যবসায়ী। বাংলাদেশে সাধারণত ব্যবসায়ীরাই ব্যবসায়ী হন। রাজনীতিকে তারা ব্যবসায়ীক কাজে লাগান। এখানে বাবু ভাই ছিলেন ভিন্ন প্রকৃতির। তিনি ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতিকে আদর্শ হিসেবে নিয়েছিলেন। জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগের অনেকের কাছেই তিনি ছিলেন অনেকটা ত্রাণকর্তার মতো। আজকাল বাবু ভাইয়ের মতো মানুষদের অভাব অনুভব করি।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন এমপি, মরহুমের সন্তান ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী, চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, আবুল কালাম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এ কে এম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব, শাহাজাদা মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট মির্জা কছির উদ্দিন, অ্যাডভোকেট জহির উদ্দিন, প্রদীপ দাশ, খোরশেদ আলম, আবু জাফর, বোরহান উদ্দিন এমরান, ডা. তিমির বরণ চৌধুরী, গোলাম ফারুক ডলার, অ্যাডভোকেট আবদুল হান্নান চৌধুরী মঞ্জু, আবদুল কাদের সুজন, নুরুল আবছার চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ, অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক, বিজয় কুমার বড়ুয়া, নাছির আহমদ চেয়ারম্যান, সেলিম নবী, বিজন চক্রবর্ত্তী, দক্ষিণ জেলা যুবলীগ সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মো. জোবায়ের, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী গালিব, দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা প্রমুখ।
স্মরণসভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে আসতে হয় রাজনীতি শিখতে, জানতে। চট্টগ্রামে আসলে জাতীয় রাজনীতির সিগন্যাল পাওয়া যায়। এটি বঙ্গবন্ধু বুঝতেন বলেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, বার্তা পাঠিয়েছেন- ‘চট্টগ্রাম জাগলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হবে’। এটা ইতিহাসে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন। চট্টগ্রামের মানুষ বীরসন্তান। তিনি বলেন, বাবু ভাই রাজনীতিবিদ ছিলেন। ৭৫’র বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরে টাকার জন্যে, ব্যবসার জন্যে কতজনের বিচ্যুতি হয়েছে। কিন্তু বাবু ভাই বঙ্গবন্ধুর রক্তের সাথে বেঈমানি করেননি। যে কারণে বাবু ভাই সকলের মাঝে আদর্শ হয়ে আছেন, আইডল হয়ে আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যের পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। যে কারণে আজকে তিনি স্মরণীয়, বরণীয় হয়ে আছেন। বাবু ভাই চট্টগ্রামের মানুষের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত সত্য, সেই নাম মুছে যায়নি, মুছে যাবে না, তিনি চিরদিন বেঁচে থাকবেন মানুষের মনে। বাবু ভাই গভীর হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। তাঁর হৃদয়ে মানুষের ভালোবাসা ছিলো। বাবু ভাই চট্টগ্রামের হলেও তিনি বাংলাদেশ জয় করেছেন।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, আমার বাবা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ৮ বছর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু এই সময়ে বাবার অনুপস্থিতি আমি অনুভব করিনি। তিনি জনপথে জনরবে সবার হৃদয়ে আজ পর্যন্ত বেঁচে আছেন। তাঁর প্রত্যেকটা কর্ম প্রত্যেক কিছু দিয়ে আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন। তিনি যে নেই, সেটা মনে হয় না। মনে হয় বাবা বিদেশে গিয়েছেন। একজন নাগরিক হিসেবে বলতে চাই, তাঁর আদর্শকে বুকে ধারণ করে রাখতে পারি। পিতার ত্যাগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে আমার বাবাকে জেলে দিয়েছিলেন। এরশাদ সময়ে বাবা জেলে ছিলেন। আজকের তরুণ প্রজন্মকে আখতারুজ্জামান বাবুর আদর্শ ধারণ করার আহ্বান জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, তাঁর সুযোগ্য কন্যা আমাদের মহান নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকে বাংলাদেশকে একটি অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল হবে সেটা ছিল একটা স্বপ্ন। কাল্পনিক চিন্তা ছিল আমাদের। শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম টানেল হচ্ছে চট্টগ্রামে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে অবিশ্বাস্য উন্নয়ন চলছে। আমরা প্রত্যেকটি সূচকে ইতিবাচক উন্নতির দিকে যাচ্ছি। যে কারণে বিশ্বের দরবারে আমাদের একটি সম্মানজনক অবস্থান তৈরি হয়েছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আখতারুজ্জামান চৌধুরী এমন একজন নেতা, যিনি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে আওয়ামী লীগের জন্য নিজের যা কিছু ছিল সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তৃণমূল থেকে দলের সভাপতিমন্ডলী থেকে শুরু করে প্রত্যেক নেতাকর্মীর হৃদয়ে আখতারুজ্জামান চৌধুরী স্থান করে নিয়েছে। যতদিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি থাকবে, ততদিন আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীর হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন।