দুর্গাপূজাএলেই খুশিতে মনটা চনমনে হয়ে উঠতো, একেতো প্রকৃতি তখন শরৎ বন্দনায় উন্মুখ! শিশিরের টুপটুপ ছন্দ মাঝে মাঝে বৃষ্টি মনে হতো, দুর্বাঘাস মাড়িয়ে শিশির কণাতে হাঁটতাম খালি পায়ে, পা ভেজাতাম শীতল হতাম, আর ভোরের আলোতে শিশিরদানা জ্বলজ্বল করতো হীরের টুকরোর মতো! আহা! কী সুন্দর দৃশ্যপট! কী স্বর্গীয় সুষমা! আমাদের বাড়ির পাশেই হিন্দুপাড়া! সেখানে দুর্গাপূজার মহাধুমধামে পূজা মণ্ডপ সাজতো, শাখ, কাঁশা, ঢাক আর মুহূর্মুহূ উলুধ্বনি তে মন উতলা হতো, মাইকে হারানো দিনের গান বাজতো, ‘তুমি আজ কত দূরে, তুমি আজ কত দূরে’ তুমি টা কে বোঝার বয়স হয়নি, কিশোরীই ছিলাম! তারপরও মনের গহীন কোণে অদৃশ্য এক তুমি যেনো কুলুকুলু ধ্বনি তুলতো, একটা অজানা উপলব্ধি, অনুভূতিতে মন উড়াল দিত কি এক কল্পনার রাজ্যে, গানের সুরে তাই উন্মাতাল হতাম, ও পলাশ ও শিমুল, মধুমালতী ডাকে আয়, প্রেম একবার এসেছিল নীরবে…..‘প্রতিমা দেখার জন্য ছুটে যেতাম শচীন মামা আর মীরা মামীদের বাড়ি দাশ পাড়ায়। উনারা আমাদের আত্মীয়তুল্য, মেজোমামার বন্ধু, বাবার ছাত্র, আমন্ত্রিত হয়েই যেতাম, বিস্ময় দৃষ্টিতে প্রতিমা দেখতাম, বান্ধবী ছিল অনু, পাশে সে থাকতো, ব্রাহ্মণ মন্ত্রপাঠ করে চলেছে অবিরাম, পূজার নানা উপকরণ তার সামনে, আমি দেখতাম আর ভাবতাম কী সুন্দর এই ধর্মীয় আনন্দযজ্ঞ! সেই শিশুকাল থেকেই যে এই আনন্দানুভূতি আমাদের চেতনাকে দোলা দিয়েছিল, তা এখনো আছে, কোনদিন উন্মাদনা দেখিনি, উগ্রতা বুঝিনি, আজ আর গ্রামে যাই না, তাই খালবিল গাছপালা ভেদ করে মাইকে লতা, হেমন্ত, সন্ধ্যা, আরতি, মান্নাদে শ্যামল মিত্র, জগন্ময় মিত্র দের সুর আর বাণী, শাখ ঢাক আর উলুধ্বনি কানে বাজে না, মনটা পূজা এলেই উড়াল দেয় আমার গ্রামের বাড়িতে।