বাঁশিরাম পাড়া। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের সীমান্তের গ্রাম। গ্রামে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া কুবেলশ্বর ত্রিপুরা, ইমেষ চাকমও মানসী চাকমা। তারা সবাই লম্বাছড়া জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী। প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে ৩ ঘন্টা পায়ে হেঁটে স্কুলে যায়। আগে তাদের ছোট মেরুং বিদ্যালয়ে যেতে আরো বেশি সময় লাগত। জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ হওয়ায় তাদের দূরত্ব অনেকটায় কমেছে। লম্বাছড়া আশপাশের ১৫ গ্রামের শিক্ষার্থীদে নতুন ঠিকানা এই বিদ্যালয়।
খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ঝরে পরা রোধে উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। সমপ্রতি জেলার দুর্গম লম্বাছড়া গ্রামে জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ নির্মাণ শেষে পাঠদান শুরু হয়েছে। এতে মাধ্যমিকে পাঠগ্রহণে সুযোগ পাবে অন্তত দুর্গম জালবান্দা, গুলছড়ি, রাইন্যা পাড়া, ভুতো ছড়া, বাঁশিরাম পাড়া, বাজাইছড়া, হেম কার্বারি পাড়াসহ ১৫ গ্রামের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীরা।
ছবির মতো সুন্দর দীঘিনালার লম্বাছড়া গ্রাম। আশপাশে ১৫টি গ্রাম থাকলেও শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল না কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়লেও মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় অনেকে শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে যায়। মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পরা রোধে এগিয়ে আসে জেলা প্রশাসন। ২০২৩ সালে ডিসেম্বরে বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর করেন জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান। বছর না ঘুরতেই ৩০ অক্টোবর থেকে বিদ্যালয়ের নতুন পাকা ভবনে পাঠদান শুরু হয়। নতুন ভবনেরও উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক।
দীর্ঘদিন পর গ্রামের পাশে স্কুল হওয়ায় খুশি শিক্ষার্থীরা। স্বস্তিতে অভিভাবকরাও। লম্বাছড়া গ্রামের অভিভাবক সঞ্চয় বিকাশ চাকমা জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও এখানে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল না। পায়ে হেঁটে অনেক ছোট মেরুং উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে হতো। বর্ষাকালে আরো বেশি কষ্ট হতো। দূরত্বের কারণে পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাওয় সম্ভব হতো না। জেলা প্রশাসন স্কুল হওয়ায় আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। আর দূরে হেঁটে স্কুল যেতে হবে না। শিক্ষার্থীদের ঝরে পরা কমবে। স্কুল প্রতিষ্ঠার ১ একর জমি দান করেন খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নয়নময় ত্রিপুরা।
তিনি বলেন, দুর্গম পাহাড়ে অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করাতে পারে না। এছাড়া স্কুল না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীরা বাল্য বিবাহের শিকার হতো। অনেক গ্রাম আছে যেখান থেকে ছোট মেরুং স্কুলে যেতে দুই ঘন্টার বেশি সময় লাগত। এখানে ১৫ গ্রামের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করতে পারবে। আগে তারা দেড় থেকে দুই ঘন্টা পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে যেত। এখন সেই কষ্ট দূর হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ঝরে পরা রোধ করার পাশাপাশি বিদ্যালয়ে ল্যাবসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর কথা বলছে লম্বাছড়া জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক আবরণ ত্রিপুরা। দুর্গম গ্রামের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে আবাসিক ছাত্রাবাস নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, এখানে ঝরা পরার শঙ্কা বেশি। আমাদের লক্ষ্য হলো এখানে একটি আবাসিক ভবন তৈরিসহ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করা। যাতে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করতে পারে। পর্যায়ক্রম কলেজেও পাঠদান করা হবে।
পাহাড়ের সামগ্রিক উন্নয়নে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরত্ব দেওয়ায় পাশাপাশি দুর্গম গ্রামের নাগরিক সুবিধা উন্নয়নে পরিকল্পনার কথা জানান খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, দুর্গম এলাকার শিক্ষা ,স্বাস্থ্য ও সড়ক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।