দুবাই পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি ও গরু চুরির মূল হোতা তৌহিদকে (৩১) হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম জেলা। গত সোমবার বিকেলে তাকে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা পিবিআই ইন্সপেক্টর মো. দিদারুল ফেরদৌস জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার তৌহিদ চকরিয়া উপজেলার চিরিংগা ইউনিয়নের কারিয়া ঘোনা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে।
জানা যায়, গত ২০ জানুয়ারিতে সংঘটিত বোয়ালখালীর শাকপুরা এলাকায় পুলিশ পরিচয়ে প্রজ্ঞাবংশ বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের বৌদ্ধ বিহারের মূর্তিতে থাকা স্বর্ণের চেইন ও লকেট চুরির ঘটনায় করা ক্লু–লেস মামলায় এই চোরকে পিবিআই গ্রেপ্তার করে। বোয়ালখালীর ওই বৌদ্ধ বিহারে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় ৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেছিলেন প্রজ্ঞাবংশ বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ শীল প্রিয় ভিক্ষু (৩৬)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জানুয়ারি রাত পৌনে ২টার দিকে বোয়ালখালীর শাকপুরা ইউনিয়নের ওই বৌদ্ধ বিহারে অজ্ঞাতনামা চার দুষ্কৃতিকারী প্রবেশ করে বৌদ্ধ বিহারের সেবক অংসাই সিং মারমার (১৭) রুমের তালা ভেঙে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখায়। পরে তাকে জিম্মি করে মন্দিরের অধ্যক্ষের রুমে প্রবেশ করে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। তারা নিজেদের প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে সবাইকে এক রুমে বেঁধে ফেলে। পরে স্টিলের আলমারির তালা ভেঙে নগদ টাকা, বৌদ্ধ বিহারে মূর্তিতে রাখা স্বর্ণের চেইন, লকেট, আইপিএস ও দান বাঙের টাকা লুট করে নিয়ে যায়। পরে বোয়ালখালী থানা পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও ক্লু–লেস এ মামলার কোনো রহস্য উদঘাটন বা কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় মামলাটি জেলা পিবিআইর কাছে চলে যায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত পিবিআই ইন্সপেক্টর মো. দিদারুল ফেরদৌস দীর্ঘ চার মাস তথ্য উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে গোপন সংবাদের মাধ্যমে বিদেশে পালিয়ে যাবার সময় তৌহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা যায়, এর আগেও গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর রাতে বোয়ালখালীর পশ্চিম শাকপুরায় শাহ আমানত ভবনে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় ভবনের ৮টি ফ্ল্যাট থেকে ১৩টি মোবাইল, ৭ ভরি স্বর্ণ, নগদ টাকা ও জামা–কাপড় লুট করে ডাকাত দল। এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কর্ণফুলীর জুলধা ইউনিয়নের দুধ বেপারী মো. নাজেমের একতলা বাড়িতে পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এতে ডাকাতরা পরিবারের সবাইকে হাত পা বেঁধে প্রায় ৩ ভরি স্বর্ণ, দুই লক্ষ টাকা, দুটি মোবাইল ফোনসহ কাপড় চোপড় লুট করে নিয়ে যায়। থানা পুলিশ এ মামলারও কোনো কূল কিনারা করতে না পারায় ডিবির কাছে চলে যায়। এ দুটি মামলাতেও তৌহিদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার তৌহিদ চকরিয়ার গরু চোর নইব্যা চোর (ইউপি চেয়ারম্যান নবী) গ্রুপের অন্যতম সদস্য। নইব্যা চোরের মতো তৌহিদ নিজেও চকরিয়ায় বিলাসবহুল বাড়ি করেছে। যার পেশা গরু চুরি আর ডাকাতি করা। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, কর্ণফুলী ও বোয়ালখালী এলাকাতে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত অন্তত ১০টি ডাকাতি ও গরু চুরির ঘটনা ঘটে। সে সব ঘটনার মূল হোতা এই তৌহিদ। এই চক্রের সদস্যরা গ্রাম ছাড়িয়ে শহরেও মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও সিটবিহীন নোহা গাড়ি নিয়ে চুরি ও ডাকাতি করত। কোনো ঘটনায় বাধা পেলে ফাঁকা গুলি চালাত। এদের রয়েছে ২০–২৫ জনের গ্যাং। বেশির ভাগ গ্যাংয়ের ডাকাত চকরিয়া এলাকার। পুরো চকরিয়ায় এদের বলয়।