শক্তির বিচারে জিম্বাবুয়ের চাইতে অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটটা এখন চলছে জোড়াতালি দেওয়া অভাবের সংসারের মতো। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নিজেদের প্রস্তুতির জন্য জিম্বাবুয়েকে ডেকে এনেছিল বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচের সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচেই জিতেছে বাংলাদেশ। তবে যে উদ্দেশ্যে আনা হয়েছিল জিম্বাবুয়েকে সেটা পূরণ হয়েছে কিনা প্রথম তিন ম্যাচে সে প্রশ্ন থেকেই গেল। কারণ সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার ব্যাটাররা নিজেদের সামর্থের পরিচয় দিতে পারেনি।
যাদের নিয়ে বিশ্বকাপে আশায় বুক বাধছেন সেই টপ অর্ডার ব্যাটাররা ব্যর্থ হয়েছেন প্রথম তিন ম্যাচেই। তবে বোলাররা ঠিকই নিজেদের প্রস্তুতিটা সেরেছেন দারুণভাবে। বিশেষ করে দীর্ঘ দিন পর দলে ফেরা পেসার সাইফউদ্দিন যেন নতুন করে চেনালেন নিজেকে। তাসকিন, শরীফুলরাও পেসের আগুনে পুড়িয়েছে জিম্বাবুয়ের ব্যাটারদের। রিশাদ, মেহেদী হাসানরাও ঘূর্ণির অনুশীলনটা বেশ ভালই করেছেন। তবে প্রশ্ন চিহ্ন রেখে দিল ব্যাটাররা। কারন টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন দুইশ কিংবা আড়াইশ রান নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে গতকাল আগে ব্যাট করে কোনমতে দেড়শ পার করতে পেরেছে বাংলাদেশ। যা দিয়ে বিশ্বকাপে নির্ভর করা যাবে না। তারপরও আগের দুই ম্যাচের মতো তৃতীয় ম্যাচেও বোলারদের দৃঢ়তায় টানা তৃতীয় জয় তুলে নিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলেছে বাংলাদেশ। জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এই ম্যাচে জয়টা ৯ রানের। এই ম্যাচেও ব্যাট হাতে সফল তরুণ তাওহিদ হৃদয়। আরেক তরুণ জাকির আলিও দিলেন নিজের যোগ্যতার প্রমাণ। তবে টপ অর্ডারের ব্যাটারদের নিয়ে কপালে চিন্তার ভাজ পড়ারই কথা টিম ম্যানেজম্যান্টের। যদিও সিরিজের এখনো দুটি ম্যাচ বাকি। সে দুই ম্যাচে নিশ্চয়ই নিজেদের ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করবেন লিটন–শান্তরা।
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা যথারীতি নড়বড়ে। যেমনটি নড়বড়ে লিটন দাশের ব্যাটিং। টানা তিন ম্যাচে ব্যর্থ হলেন বাংলাদেশ দলের এই ওপেনার। শুধু তাই নয়, শট নির্বাচনেও যেন বার বার ভুল করছেন লিটন। না হয় গতকাল একই ওভারে কেন তিনবার স্কুইপ খেলার চেষ্টা করবেন। টানা দুইবার ব্যর্থ হওয়ার পর আবার সে একই শট খেলতে গিয়ে হলেন বোল্ড। আরো একবার ব্যর্থ লিটনের ব্যাট। ২৮ রানের উদ্বোধনী জুটিতে লিটনের অবদান ১৫ বলে ১২। যা মোটেও টি–টোয়েন্টির ব্যাটিং নয়। মুজারাবানির বলে বোল্ড হন লিটন। এই মুজারাবানি প্রথম দুই ওভারে দুই রান দিয়ে নিয়েছেন লিটনের উইকেট। প্রথম দুই ম্যাচে ২১ আর ১৬ রান করা শান্ত গতকাল করেন ৬ রান। আর তিন ম্যাচে লিটনের সংগ্রহ ১, ২৩ এবং ১২। তানজিদ তামিম এবং তাওহিদ হৃদয় মিলে তৃতীয় উইকেটে যোগ করেন ৩১ রান। ২২ বলে ২১ রান করে ফিরেন তামিম।
৬০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন জাকির আলি এবং তাওহিদ হৃদয়। সিরিজের তিন ম্যাচেই দুর্দান্ত খেলা তাওহিদ হৃদয় এই ম্যাচেও টানলেন দলকে। জাকির আলিকে নিয়ে ৫৯ বলে গড়েন ৮৭ রানের জুটি। তবে ১৯ তম ওভারে এসে এক রানের ব্যবধানে দুজনকে ফেরান মুজারাবানি। আগের দুই ম্যাচে সুযোগ না থাকায় হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি হৃদয়। তবে গতকাল ঠিকই অর্ধ শতক তুলে নিয়েছেন। ৩৮ বলে ৩টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে ৫৭ রান করে ফিরেন হৃদয়। কিন্তু জাকির আলি পারেননি অর্ধ শতকটি তুলে নিতে। তিনি ফিরেছেন ৩৪ বলে ৩টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে ৪৪ রান করে। এদুজন যতক্ষণ ছিলেন ততক্ষণ বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। তবে শেষ পর্যন্ত ১৬৫ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। জিম্বাবুয়ের সফল বোলার মুজারাবানি ১৪ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
লক্ষ্যটা ১৬৬ রানের। আগের দুই ম্যাচে আগে ব্যাট করে দেড়শ রানও করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। এই ম্যাচে রান টপকাতে গিয়ে শুরুটা যথারীতি বিবর্ণ। নিজের প্রথম ওভারে প্রথম আঘাতটা হানেন সাইফউদ্দিন। ওপেনার জয়লর্ড গাম্বিকে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানিয়ে ফেরান সাইফউদ্দিন। ১৬ রানে প্রথম উইকেটের পতন। ৮ রান পর তানজিম সাকিবের আঘাত। তার শিকার ব্রায়ান বানেট। সাইফউদ্দিন নিজের দ্বিতীয় ওভারে আবার আঘাত হানেন। এবার তার শিকার ক্রেইগ এরভিন। ৩৩ রানে তিন উইকেট নেই জিম্বাবুয়ের। নিজের প্রথম ওভারে এসে জিম্বাবুয়েক সবচাইতে বড় ধাক্কাটা দেন রিশাদ হোসেন। উইকেটের পেছনে জাকিরের ক্যাচে পরিণত করে রিশাদ ফেরান সিকান্দার রাজাকে। ১ রান করেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। অন্য বোলারদের মত মাহমুদউল্লাহও নিজের প্রথম ওভারে নিলেন উইকেট। তার শিকার মারুমানি। ইনিংসের সূচনা করতে নামা মারুমানি একাই লড়াই করেছেন। শেষ পর্যন্ত তিনিও দিলেন রনে ভঙ্গ। সাইফউদ্দিনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ২৬ বলে ৩১ রান করেন এই ওপেনার। প্রথম স্পেলে দুই ওভার বল করলেও উইকেট পাননি তাসকিন। তবে দ্বিতীয় স্পেলে এসে ঠিকই উইকেট শিকারির তালিকায় নাম লেখালেন এই পেসার। ফেরালেন ক্লাইভ মাদান্দেকে। ১৬ বলে ১১ রান করেন এই ব্যাটার। বাংলাদেশের পক্ষে বোলিং সূচনা করতে আসা তানভীর ইসলাম প্রথম স্পেলের দুই ওভারে উইকেট পাননি। তবে পরের স্পেলের শেষ ওভারে তিনিও নাম লেখালেন উইকেট শিকারির তালিকায়। তিনি ফেরালেন জনাথন ক্যাম্পেবেলকে। আগের ম্যাচে অভিষেক হওয়া জনাথন করেছিলেন ৪৫ রান। গতকাল করলেন ২১ রান। পরের ওভারে লুক জংবিকে ফিরিয়ে নিজের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নিলেন রিশাদ। সিরিজে প্রথমবারের মতো খেলতে নামা ফারাজ আকরাম মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে নিয়ে ৫৪ রানের জুটিও গড়েছিলেন। তবে শেষ ওভারে মাসাকাদজাকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন সাইফউদ্দিন। এই ৫৪ রানের মধ্যে ১৩ রান করেন মাসাকাদজা। শেষ পর্যন্ত ১৫৬ রানে থামে জিম্বাবুয়ের ইনিংস। যা সিরিজে তাদের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ফারাজ আকরাম অপরাজিত ছিলেন ১৯ বলে ৩৪ রান করে। বাংলাদেশের পক্ষে সফল বোলার ৪২ রানে ৩ উইকেট নেওয়া সাইফউদ্দিন। ২টি উইকেট নিয়েছেন রিশাদ হোসেন।