দুই বছরে ১৪ হাতি হত্যা

অবৈধ বসতি ও ফসলের ক্ষেত রক্ষার অজুহাত

চকরিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়া, রামু ও ইদগাঁওতে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর গত দুই মাসে অন্তত চারটি হাতিকে হত্যা করা হয়েছে। পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গুলি করে ও বৈদ্যুতিক শকের ফাঁদ পেতে এসব হাতিকে মেরে ফেলা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, সংরক্ষিত বনের ভেতর নির্মিত অবৈধ বসতি ও ফসলের ক্ষেত রক্ষার অজুহাতে হাতি হত্যায় মেতে উঠেছে দুর্বৃত্তরা। এ নিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও কক্সবাজারের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর গত দুই বছরে অন্তত ১৪টি হাতি হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু বিপদাপন্ন হাতি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নেয়নি কার্যকর কোনো উদ্যোগ। গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের রাজঘাট বনবিটে সর্বশেষ হাতি হত্যার ঘটনা ঘটে। ওইদিন ফসলের ক্ষেত নষ্ট করার আশঙ্কা থেকে হাতিটির ওপর নিষ্ঠুরতা চালায় দুর্বৃত্তরা। মাথা ও বাঁ চোখের মধ্যাংশে গুলিবিদ্ধ হয় হাতিটি। রোববার দুপুরে কাঠুরেদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বনকর্মীরা। এ সময় কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা দেবু লাল দত্ত ও চকরিয়া বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী চিকিৎসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তারা হাতিটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন। পরে ময়নাতদন্ত শেষে হাতিটিকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করেছে বনবিভাগ। রাজঘাট বনবিট কর্মকর্তা মো. হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বন্যপ্রাণী চিকিৎসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হাতিটি স্ত্রী লিঙ্গের। বয়স প্রায় ৩৫ বছর হবে। এর আগে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে একই বনবিভাগের খুটাখালী বনবিটের কালাপাড়ায় একটি বাচ্চা হাতিকে গুলি করে মেরে ফেলার পর গোপনে মাটিচাপা দেওয়া হয়। পরে বনকর্মীরা খবর পেয়ে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাচ্চা হাতিটির মাথায় সরাসরি গুলি করা হয়েছিল। এ ঘটনায় খুটাখালী ফরেস্ট বিট কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় এজাহারনামীয় দুজনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন খুটাখালী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কালা পাড়ার জাকের আহমদের দুই ছেলে মো. নাছির উদ্দিন ও মো. মিজান। এদিকে একের পর এক হাতি হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন বন্যপ্রাণী চিকিৎসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, হাতি হত্যায় কারা জড়িত এবং কোথা থেকে এসব অস্ত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে-তা নিয়ে পুলিশের কাজ করা উচিত। না হলে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে হাতি রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে।
কক্সবাজারের বন ও পরিবেশ সচেতন একাধিক ব্যক্তি আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ এবং কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বনবিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর প্রায় ২০ হাজারের বেশি অবৈধ বসতি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে ফাঁসিয়াখালী বনবিটের উচিতারবিলে বন্যহাতির অভয়ারণ্য। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটাও।
বনের জমি সমতল করে ফসলের ক্ষেত তৈরির অভিযোগ তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে মানুষ-হাতি দ্বন্ধ। সচেতন মহলের অভিযোগ, অবৈধ বসতিগুলোতে রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। তা ব্যবহার করেই পাতা হচ্ছে বৈদ্যুতিক ফাঁদ।
এদিকে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বাচ্চা হাতি হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ওই আসামি আদালতে জবানবন্দি দেন এবং হাতি হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। এ প্রসঙ্গে চকরিয়া থানার ওসি শাকের মো. যুবায়ের বলেন, হাতি হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করলেও অস্ত্র কোথা থেকে আসছে-তা জানা জরুরি। মামলার তদন্তকারী কর্মকতা নূর-ই খোদা সিদ্দিকীকে ওই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক দীপক শর্মা দীপু বলেন, বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল ফিরিয়ে দিতে হবে। এটি সম্ভব হবে ইটভাটাগুলো ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে। এজন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগসহ প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজার জেলা পরিষদের ডাক বাংলোয় অফিস সহায়কের ঝুলন্ত লাশ
পরবর্তী নিবন্ধখাগড়াছড়িতে রফিকের চেয়ে সম্পদে এগিয়ে নির্মলেন্দু, শিক্ষায় খলিল