আনোয়ারার দুই প্রান্তের দুই প্রকল্প ঘিরে লাখো মানুষের কষ্টের হাহাকার দীর্ঘদিনের। স্থানীয়রা বর্তমান সরকারের কাছে দ্রুত এ দুই প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেখতে চান।
উপজেলার রায়পুর ও জুঁইদন্ডি ইউনিয়নের সীমারেখায় অবস্থিত সাপমারা খালের ওপর বাশের সাঁকোটি দুই ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষ মানুষের দুঃখ হিসেবে পরিচিত। সেই সাথে উপজেলার চাতরি ইউনিয়নের বাকখাইনের স্লুইচগেটটি বিভিন্ন ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের জীবন–জীবিকায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। বর্ষা ছাড়াও সারা বছর এ অঞ্চলের শত শত একর জমি জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে।
স্থানীয় আবদুর রহিম বলেন, সাপমারা খালের উপর একটা সেতুর জন্য এলাকাবাসীর আক্ষেপ দীর্ঘদিনের। বিগত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও সাপমারা খালের বাঁশের সাঁকোটির স্থলে সেতু নির্মাণ না হওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের শেষ নেই। এলাকাবাসীর দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিগত স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর নোবেল বিজয়ী ডক্টর ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত বর্তমান সরকার আমাদের এই বৈষম্য দূর করে একটি সেতু নির্মাণ করে দিবেন–এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
চাতরি ইউনিয়নের কেয়া গড়ের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ঋষিকেশ দত্ত জানান, বাকখাইন খালের স্লুইচ গেটি ভেঙে তলিয়ে যাওয়ায় বছরে ৯ মাসের বেশি সময় পর পুরো এলাকা জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। বর্তমানে কেয়াগড়ে সড়কের চিহ্ন মাত্র নেই। কাদা পানিতে প্রতিদিন আমাদের যাতায়াত করতে হয়। আমাদের দুঃখ কষ্টের শেষ নেই। জোয়ারের পারি উঠানামা করায় শত শত একর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না। আমরা সরকারের কাছে আমাদের জীবন জীবিকা রক্ষায় তলিয়ে যাওয়া স্লুইচ গেটটি নির্মাণের দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।
জানা যায়, জুঁইদন্ডী ও রায়পুর ইউনিয়নের ৫০ হাজার মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম সাপমারা খালের সাঁকোটি। এ সাঁকো দিয়ে রায়পুরের সরেঙ্গা গ্রামের শত শত শিক্ষার্থী জুঁইদন্ডীর জে কে এস উচ্চ বিদ্যালয় ও আনোয়ারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় পড়েন। বর্ষা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সাঁকোটি বছর বছর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এতে এলাকার নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও শিক্ষার্থীদের সাঁকো পারাপারের ঝুঁকি সৃষ্ঠি হয়। তাই বর্ষার আগে স্থানীয়রা দুশ্চিন্তায় পড়েন। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থী ও পথচারীরা সাঁকো থেকে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে।
অপরদিকে বাকখাইনের স্লুইচ গেটটি তলিয়ে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের কেঁয়াগড়, বাঘখাইনসহ ৫ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ এই ভোগান্তিতে রয়েছেন। বর্ষাকাল ছাড়াও প্রতি অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে কেঁয়াগড়, ইছামতি, সিংহরা ও চাতরি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়া গত ৩ বছর ধরে মোল্লাপাড়ার ২০০ পরিবার উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আনোয়ারা উপজেলা প্রকৌশলী তসলিমা জাহান জানান, সাপমারা খালের প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছে। তবে এখনো মন্ত্রণালয় থেকে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ জানান, সাড়ে ২২ কোটি টাকায় স্লুইচ গেট নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন হলেও কবে নাগাদ তার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হবে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। চলমান প্রকল্পগুলো অব্যাহত থাকবে।