দিবা নিশি জপি

নাজনীন আমান | বৃহস্পতিবার , ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

ঘড়ির কাঁটা ১২.০০ ছুঁইছুঁই। অনেক রাত। সারা দিনের কোলাহল ছাপিয়ে নিশ্চুপের চাদরে ঢাকা রাতের আকাশ। জানালার ফাঁক দিয়ে জোছনার আলোয় আলোকিত ঘর আমাদের। বাচ্চাদের নিয়ে শুয়ে দোয়া পড়তে বললাম। হঠাৎ চিনচিন করে উঠলো বুকে দুই ছেলের একজন কে বলতেই সে আমাকে সাহস ও অভয় দিল আর দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে দিল।একটু পরে আবার জিজ্ঞেস করল “আচ্ছা মা রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বিয়ানি সাগীরা ” এর অর্থ কি?” তার উত্তর দিয়ে দুজনেই বিপরীত পাশে ফিরে গেলাম। ঘুম আর আসে না আসে শুধু অশ্রুজল।দোয়া পড়ছি আর কান্না করছি নিভৃতে।
করোনার এই পরিস্থিতিতে আব্বু আম্মুর সাথে দেখা হয় না অনেক দিন। হে আল্লাহ! এই অবস্থায় বাবা মা কে তুমি ভালো রেখ। আরোও কিছু দিন তার সাথে সময় কাটানোর সুযোগ দিও। আমি যে বড্ড অসহায় তাদের ছাড়া। আজ কেন জানি তাদের মুখ খানা ভেসে উঠছে চোখের সামনে। ফিরে যেতে মন চাইছে ফেলে আসা দিনগুলোতে। ইচ্ছে করে আম্মুর অবসর দিন গুলো নিই, আব্বুর হাত ধরে কলোনীর রাস্তায় হাঁটি, ইচ্ছে করে ভাইয়ের সাথে ক্রিকেট খেলি, ইচ্ছে করে মন পাগলের গান গুলো আজ গাই। কত কষ্ট করেছেন কিন্তু কোন দিন বলেন নি,দেখান নি। আর আমি তার বিনিময়ে, কিছুই কি করেছি? মাঝে মাঝে ছেলেদের সাথে রাগ করে বলি “আমি চলেই যাব তোদের ছেড়ে, তোদের পালার চাইতে মা বাবার সেবা করা অনেক সওয়াব প্রাপ্তির।” কিন্তু তাতে ও তাদের আপত্তি।
এক দুপুরে তন্দ্রাচ্ছন্ন ঘোরে আব্বুকে দেখেছি আমার বাসায় এসেছেন নাতিদের সাথে গল্প করছেন। আনন্দে ছুটে গিয়ে দেখি আব্বু নেই। অজান্তেই দুচোখ ছাপিয়ে অশ্রু বয়ে যায় আর তা লুকাতে, সবার মঙ্গল কামনায় ধৈর্য ধরছি। আর আমার,আমাদের সকল শক্তির আলো কে জ্বালিয়ে রাখি- “রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বিয়ানি সাগীরা”।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসুখস্মৃতি নিয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরুক সকল অভিযাত্রী
পরবর্তী নিবন্ধকাল আজকাল