দিনে ২২ কোটি টাকা গচ্ছা বিপিসির

ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল বিক্রি

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২১ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে হু হু করে। আন্তর্জাতিক বাজারে পরিশোধিত ডিজেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৭২ ডলার হলে বাংলাদেশে আমদানির পর তা বিক্রি করলে লাভ কিংবা লোকসান হয় না। সেখানে প্রতি ব্যারেল পরিশোধিত ডিজেলের মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯৬ ডলারে। অন্যদিকে প্রতি মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েলের মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫১০ ডলার। এসব জ্বালানি বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রিতে প্রতিদিন প্রায় ২২ কোটি টাকা গচ্ছা দিচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। এতে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানটিতে তারল্য সংকটে জ্বালানি তেল আমদানিতে জটিলতার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বে জ্বালানির দাম নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইনডেস্ক মুডিস। আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন অনুযায়ী আন্তর্জাতিকভাবে জ্বালানির দর নির্ণয় করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ইনডেস্ক মুডিসের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ২০২০ সালের মে মাসে বিশ্বে জ্বালানির দরপতন হয়ে সর্বনিম্ন পর্যায়ে দাঁড়ায়। ওই মাসে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৩০ ডলার ৩৮ সেন্ট। এরপর থেকে দাম বাড়তে থাকে জ্বালানির।
বিপিসির কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০২০ সালে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ায় থমকে দাঁড়ায় পুরো বিশ্ব। লকডাউনে পড়ে বিশ্বের দেশে দেশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চাহিদা দ্রুত কমে যাওয়ায় জ্বালানির দামও কমতে থাকে। পরে ধীরে ধীরে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু হওয়ায় আস্তে আস্তে চাহিদা বাড়তে থাকে জ্বালানির। এতে জ্বালানি তেলের দাম পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে এ জ্বালানির দাম বাড়তে বাড়তে দেশে ‘ব্রেক ইভেন্ট পয়েন্ট’ ছাড়িয়ে যায়।
বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে পরিশোধিত ডিজেলের মূল্য প্রতি ব্যারেল ৭২ ডলার হলে আমদানির পর যাবতীয় ব্যয় সংযোজিত হয়ে বাংলাদেশে বিক্রি মূল্যের সমান হয়ে যায়। যাকে হিসাবের সুবিধার্থে ‘ব্রেক ইভেন পয়েন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করে বিপিসি। তথ্য মতে, গত ২৭ মে থেকে পরিশোধিত ডিজেলের মূল্য ‘ব্রেক ইভেন পয়েন্ট’ পেরিয়ে যায়। গত ২৮ মে তারিখে পরিশোধিত জ্বালানির দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ৭২ ডলার ৬০ সেন্ট। দুইদিন পর পুনরায় ৭২ ডলারে নামলেও পরবর্তীতে বাড়তে বাড়তে সর্বশেষ ১৫ অক্টোবর পরিশোধিত ডিজেলের মূল্য দাঁড়ায় ৯৫ ডলার ৭৭ সেন্ট। একইভাবে দাম বেড়ে প্রতি মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েলের মূল্য দাঁড়ায় ৫০৯ ডলার ৮১ সেন্ট। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে দেশে প্রতিমাসে গড়ে ৪ লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত ডিজেল বিক্রি হয়। বর্তমানে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য ৬৫ টাকা এবং ফার্নেস অয়েল ৫৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিন গড়ে ১৪ হাজার টন ডিজেল ও ২ হাজার টন ফার্নেস অয়েল বিক্রি হয়।
বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) মণি লাল দাশ দৈনিক আজাদীকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম ৭২ ডলারে থাকলে আমাদের ব্রেক ইভেন পয়েন্ট থাকে। ৭২ ডলারের বেশি উঠলে ডিজেল বিক্রিতে বিপিসিকে লোকসান গুণতে হয়। ৭৩ ডলারে গেলে প্রতি লিটারে ৬০ পয়সা, ৭৫ ডলারের উঠলে লিটারে আড়াই টাকার মতো লস দিতে হয়। সর্বশেষ ১৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বাজারে পরিশোধিত ডিজেল বিক্রি হয়েছে ৯৫ ডলার ৭৭ সেন্টে। এতে বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেলে ১৪ টাকা ৪৫ পয়সা এবং ফার্নেস অয়েলের ৮ টাকা লস দিতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিসির আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল বিক্রিতে প্রতিদিন প্রায় ২২ কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। এতে মাসে সাড়ে ৬শ কোটি টাকা লোকসান দিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম যে হারে বাড়ছে তাতে ডিজেল ব্যারেল প্রতি একশ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এতে ডিজেল বিক্রিতে লোকসানও বেড়ে যাবে। ধারাবাহিক এ লোকসানের ফলে বিপিসিতে তারল্য সংকট তৈরি হচ্ছে।’ এই কর্মকর্তা বলেন, গত দুই বছরে মন্ত্রণালয়ের আদেশে বিপিসি থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে দিতে হয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রিতে যে লোকসান হচ্ছে, তাতে বিপিসিতে তারল্যের সংকট তৈরি করছে। এতে সামনের দিনগুলোতে জ্বালানি আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খুলতে জটিলতা তৈরি হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহলে ফিরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা
পরবর্তী নিবন্ধআল্লামা সাবির শাহ চট্টগ্রামে