দিনে টোকাই সেজে বাসা-বাড়িতে রেকি

৫২ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ চোর চক্রের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:১৬ পূর্বাহ্ণ

দিনে তারা কাগজ কিংবা পরিত্যক্ত জিনিসপত্র কুড়ানোর আড়ালে বাসাবাড়ি রেকি করে। এর পর রাতে সুযোগ বুঝে দলবদ্ধ হয়ে বাসায় চুরি সংঘটিত করে। নগরীর সদরঘাট থানা এলাকায় একটি চুরির ঘটনায় জড়িতদের ধরতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ এমন একটি চক্রের ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে নগরীর চকবাজার থানা এলাকার একটি বাসা থেকে ১২৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরির চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

পুলিশ জানায়, সংঘবদ্ধ এ চোরচক্রই ১২৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনা ঘটায়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৫২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, যেগুলো মাটির গর্তে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। গ্রেপ্তার ছয় জন সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্য। গ্রেপ্তার ছয়জন হলোআরিফ হোসেন মেহেদী (২৬), মো. শরীফ (২০), মেহেদী হাসান রুবেল (২৩), সাইদুল ইসলাম রিগ্যান (২২), হান্নান হোসেন (২৩) ও রিয়াদ হোসেন (১৯)। গতকাল শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ডিসিদক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নগরীর সদরঘাট থানার একটি বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনায় গত ৩ জানুয়ারি দায়ের হওয়া মামলায় জড়িতদের ধরতে অভিযানে নেমেছিল পুলিশ। শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকা থেকে ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের একটি পাইপগান ও একটি কার্তুজ এবং বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ চক্র নগরীতে দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধভাবে চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাদের কেউ কেউ দিনে টোকাই সেজে বিভিন্ন বাসাবাড়ি রেকি করে। এ জন্য তাদের আলাদা একটি টিম আছে। যে সব বাসায় লোক থাকে না কিংবা নির্জন এলাকা, সে সব জায়গা রেকি করে তারা অন্য সদস্যদের জানায়। ছোট শিশুদেরও তারা এ কাজে ব্যবহার করে।

গ্রেপ্তার হওয়া আরিফ হোসেন মেহেদী জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দেয়, তার হেফাজতে কিছু চোরাই স্বর্ণালঙ্কার আছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে নগরীর ডবলমুরিং থানার বারেক বিল্ডিং মোড়ে সানাই সিনেমা হলের পেছনে কনকর্ড গ্রুপের একটি খালি জায়গায় মাটি খুঁড়ে প্রায় ৫২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার স্বর্ণালঙ্কারগুলো গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজার থানার মেহেদীবাগের আমিরবাগ হাউজিং সোসাইটির একটি বাসা থেকে চুরি হয়েছিল বলে জানান উপপুলিশ কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান।

সিএমপির কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার অতনু চক্রবর্তী জানান, গ্রেপ্তার আরিফ হোসেন মেহেদী উদ্ধার করা ৫২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ঢাকা থেকে চুরি করেছে বলে দাবি করে। তবে আমিরবাগ হাউজিং সোসাইটি থেকে চুরি হওয়া স্বর্ণালঙ্কারের ছবির সঙ্গে মেলানোর পর পুলিশ নিশ্চিত হয় আরিফের দাবি সঠিক নয়, স্বর্ণালঙ্কারগুলো তারা আমিরবাগ থেকেই চুরি করেছে। তিনি বলেন, পরে আরিফ আমাদের কাছে আমিরবাগে চুরির কথা স্বীকার করে। সে জানায়, চুরির আগে শরীফ কাগজ ও প্লাস্টিকের বোতল কুড়ানোর ভান করে ওই বাসায় গিয়ে রেকি করে। তার কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে চুরি সংঘটিত করে। আরিফ, শরীফ, শাকিল ও পিচ্চি জাহিদ মিলে চুরি করে। এদের মধ্যে শাকিল চুরির পরদিনই মাদকের একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়। পিচ্চি জাহিদ এখনও পলাতক। আরিফ ও শরীফকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। এ চক্রের গডফাদার মনির ও তারেক। তাদের দু’জনকে পুলিশ আগেই গ্রেপ্তার করেছে। আরিফ ও শরীফ ছাড়া গ্রেপ্তার বাকি চার জন সংঘবদ্ধ ওই চক্রের সদস্য হলেও তারা আমিরবাগে চুরির ঘটনায় জড়িত ছিল না বলে জানান সহকারী পুলিশ কমিশনার অতনু চক্রবর্তী।

পুলিশের তথ্যানুযায়ী, আমিরবাগে চুরির পর আরিফ চট্টগ্রামের বাইরে চলে যায়। বৃহস্পতিবার সে চট্টগ্রামে ঢোকার তথ্য পেয়ে পুলিশ তাকে ধরতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। এক পর্যায়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। তার নামে বন্দর, ইপিজেড, ডবলমুরিং ও হালিশহর থানায় ১০টিরও বেশি চুরির মামলা আছে। শরীফের নামে দুটি অস্ত্র মামলা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় আবাদি জমির টপসয়েল কাটায় তিন জনকে কারাদণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধমহেশখালীতে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৫