দারুণ শুরুর পর মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় হার লিটনদের

কোহলির অপরাজিত সেঞ্চুরিতে টানা চতুর্থ জয় ভারতের

নজরুল ইসলাম, পুনে থেকে | শুক্রবার , ২০ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ

থামানো গেল না ভারতের জয় রথ। একই সাথে রোধ করা গেল না নিজেদের হ্যাটট্রিক পরাজয়। জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা বাংলাদেশ পরের টানা তিন ম্যাচে হেরেছে। অপরদিকে স্বাগতিক ভারত তুলে নিয়েছে টানা চতুর্থ জয়। এবারের বিশ্বকাপে ভারত যেখানে অপ্রতিরোধ্য গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে সেখানে বাংলাদেশ ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। যদিও গতকাল স্বাগতিকদের বিপক্ষে মাঠে নামার আগেই বড় একটা ধাক্কা খেয়েছিল টাইগাররা। শংকাকে সত্যি করে এই ম্যাচে খেলতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ছিলেন না দলের পেস বোলিং এ প্রধান ভরসা তাসকিন আহমেদও। আর আগে থেকেই দলে নেই তামিম। এই অবস্থা হলে দলে আর থাকে কি। এমন দল নিয়ে যে অন্তত ভারতের মতো দলের বিপক্ষে জেতা যায় না সেটা প্রমাণ করল বাংলাদেশ। ৭ উইকেটের পরাজয় বরণ করে হারের হ্যাটট্রিক পূরণ করল বাংলাদেশ। ভারতে চলমান এবারের বিশ্বকাপটা যে ব্যাটারদের সেটা বলা হচ্ছিল আগে থেকেই। এ পর্যন্ত যতগুলো ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে তার প্রায় সবগুলোতেই তার প্রমাণ মিলেছে। তার উপর পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট এসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের উইকেটকে বলা হয়ে থাকে রানের স্বর্গ। এছাড়া মাঠের আকৃতিও অনেকটা ছোট। তাই এখানে রান বেশি হয়। বাংলাদেশ দলও শুরুতে তেমনই আভাস দিয়েছিল। দারুণ শুরুর পর মনে হচ্ছিল ঠিকই তিনশ পার করবে টাইগাররা তাদের স্কোর। কিন্তু সেটা আর হলো না। দারুণ শুরুর পরও মিডল অর্ডারের পুরানো ব্যর্থতা পেয়ে বসল বাংলাদেশ দলকে। আর তাতেই সম্ভাবনাময় শুরুটা শেষ হলো বিষাদে। যেখানে কোনো মতে আড়াইশ পার করা গেল। কিন্তু এই মাঠে আর যাই হোক আড়াইশ রান দিয়ে ভারতকে আঠকানো যাবে না। সেটা দেখিয়ে দিলেন ভারতের ব্যাটাররা। এবারের বিশ্বকাপের চার ম্যাচের চারটিতেই পরে ব্যাট করে জিতেছে ভারত। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ১৯৯, দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের ২৭২ এবং আগের ম্যাচে পাকিস্তানের ১৯১ রান টপকে গেছে ভারত একেবারে আনায়াসেই। যেখানে তারা উইকেট হারিয়েছে যথাক্রমে ৪, ২ এবং ৩টি। ওভার বাকি রেখেছিল যথাক্রমে ৮., ১৫ এবং ১৯.৩। তাই গতকাল দেখার বিষয় ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে কত ওভার এবং কত উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে ভারতীয়রা। ৮.৩ ওভার হাতে রেখেই এ ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। তবে ম্যাচ জয়ের আগে ছোট্ট একটি নাটক বেশ জমেছিল। বিরাট কোহলি সেঞ্চুরি করতে পারবেন কিনা সে শংকাটা জেগেছিল। কিন্তু পাকা খেলোয়াড় কোহলি জানেন কিভাবে অসম্ভবকে সম্ভব করতে হয়। শেষ পর্যন্ত ছক্কা মেরে ক্যারিয়ারের ৪৮ তম এবং বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরিটা তুলে নিলেন বিরাট কোহলি। তাই ম্যাচ জয়ের আনন্দের চাইতে বিরাটের আনন্দটা নিশ্চয়ই বেশি ছিল সেঞ্চুরি তুলে নিতে পারায়। আর বাংলাদেশকে মাঠ ছাড়তে হয়েছে হারের হ্যাটট্রিক পূরণের হতাশা নিয়ে। ম্যাচ সেরাও হয়েছেন বিরাট কোহলি।

টসে জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা দারুণ ছিল। অনেক দিন পর দুই ওপেনার হাফ সেঞ্চুরি পার করেন। শুধু তাই নয় বিশ্বকাপের ইতিহাসে বাংলাদেশের হয়ে উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও গড়েন। যেখানে লিটন এবং তানজিদ তামিম ৯৩ রানের জুটি গড়ে পেছনে ফেলে দেন ২৪ বছর আগে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে মেহরাব হোসেন এবং শাহরিয়ার হোসেনের গড়া ৬৯ রানের জুটি। দীর্ঘ দিন উদ্বোধনী জুটি নিয়ে ভুগতে থাকা বাংলাদেশ দলকে স্বস্তি এনে দিয়েছিলেন তানজিদ এবং লিটন। দারুণ খেলতে থাকা দুজন বিচ্ছিন্ন হন ৯৩ রানে গিয়ে। কুলদিপ যাদবের বলে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন তানজিদ। ফেরার আগে ৪৩ বলে ৫টি চার এবং ৩টি ছক্কার সাহায্যে ৫১ রান করে আসেন এই তরুণ। যা বিশ্বকাপেতো বটেই তার ক্যারিয়ারেও প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। এরপর দলের অধিনায়কত্ব পাওয়া শান্ত যোগ দেন লিঠনের সাথে। কিন্তু লিটনও পারলেন না নিজের হাফ সেঞ্চুরিটাকে সেঞ্চুরির দিকে নিয়ে যেতে। এই টাইগার ওপেনার ফিরলেন ৬৬ রান করে। তার ৮২ বলের ইনিংসে ছিল ৭টি চারের মার। দুই ওপেনার ফেরার পর দ্রুত ফিরেন শান্ত, মিরাজ এবং তাওহিদ হৃদয়। বিনা উইকেটে ৯৩ থেকে ৫ উইকেটে ১৭৯ তে পরিণত হয় বাংলাদেশ। দুই অভিজ্ঞ মুশফিক এবং মাহমুদউল্লাহও পারলেন না দলকে টানতে। মাত্র ২২ রান যোগ করতে পেরেছেন দুজন মিলে। ৪৬ বলে ৩৮ রান করা মুশফিক ফিরেন জাসপ্রিত বুমরাহর প্রথম শিকার হয়ে। নাসুম আহমেদকে নিয়ে সপ্তম উইকেট জুটিতে ৩২ রান যোগ করেন মাহমুদউল্লাহ। ১৮ বলে ১৪ রান করে মোহাম্মদ সিরাজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরেন নাসুম। মাহমুদউল্লাহ পারলেন না শেষ ওভারের শেষ বল পর্যন্ত খেলতে। বুমরাহর করা শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ ৩৬ বলে ৪৬ রান করে। মেরেছেন ৩টি করে চার আর ছক্কা। শেষ বলে শরীফুল ছক্কা মেরে বাংলাদেশের ইনিংস নিয়ে যান ২৫৬ রানে। আর এটাই এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের ১৫৬ রান টপকানোর পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২২৭ এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪৫ রান করেছিল বাংলাদেশ। আর এবার করল ভারতের বিপক্ষে ২৫৬ রান।

২৫৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই মারমুখি ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা এবং শুভমান গিল। গিল কিছুটা রয়ে সয়ে খেললেও রোহিত এক রকম কচু কাটা করছিল বাংলাদেশের বোলারদের। শেষ পর্যন্ত হাসান মাহমুদ থামিয়েছেন সে ঝড়। ইনিংসের ১৩ তম এবং নিজের চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে একটি ছক্কা হজম করেন হাসান মাহমুদ। পরের বলে আবার ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে তৌহিদ হৃদয়ের ক্যাচে পরিণত হন রোহিত শর্মা। থামে ভারতীয় অধিনায়কের ৪০ বলে ৪৮ রানের ঝড়। ৭টি চারের পাশাপাশি ২টি ছক্কা মেরেছেন রোহিত। দ্বিতীয় উইকেটে বিরাট কোহলিকে নিয়ে ৪৪ রান যোগ করেন গিল। তাকে থামান মেহেদী হাসান মিরাজ। লং অনে দারুণ এক ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ। এর আগে নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন গিল। ফিরেছেন ৫৫ বলে ৫৩ রান করে। মেরেছেন ৫টি চার এবং ২টি ছক্কা। এরপর কোহলির সাথে যোগ দেন শ্রেয়াস আইয়ার। দুজনের জুটিটা ৪৬ রানের বেশি হয়নি। তবে রানের চাকা রেখেছিলেন দ্রুত গতিতে সচল। মিরাজ ভাঙ্গেন এ জুটিও। আর ক্যাচও নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। আইয়ার ফিরেছেন ২৫ বলে ১৯ রান করে। এরপর লোকেশ রাহুলকে নিয়ে শুরু হয় বিরাট কোহলির পথ চলা। যেখানে তিনি আর থামেননি। অবিচ্ছিন্ন ৮৩ রানের জুটি গড়ে দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। কোহলি তার শতরান পূরণ করে অপরাজিত থাকেন ৯৭ বলে ১০৩ রান করে। যেখানে তিনি ৬টি চার এবং ৪টি ছক্কা মেরেছেন। অপরদিকে লোকেশ রাহুল অপরাজিত ছিলেন ৩৪ বলে ৩৪ রান করে। বাংলাদেশের পক্ষে সফল বোলার মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪৭ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅ্যাপসে অপরাধের খবর পাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
পরবর্তী নিবন্ধএপিবিএনের এএসআই সাগরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা