দারুণ জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ

তানভীরের প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট

স্পোর্টস ডেস্ক | রবিবার , ৬ জুলাই, ২০২৫ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

ব্যাটিং ধসে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ হারা হতোদ্যম টাইগাররা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গতকাল শনিবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১৬ রানে পরাজিত করেছে বাংলাদেশ। এর ফলে সিরিজে সমতা () এসেছে। গতকাল টসে জিতে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪৫.৫ ওভারে ২৪৮ রান সংগ্রহ করে। জবাবে শ্রীলঙ্কা ৪৮.৫ ওভারে ২৩২ রানে গুটিয়ে যায়। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে লক্ষ্য তাড়ায় দারুণ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। হঠাৎ ধস নামে টাইগার ব্যাটিং লাইনআপে। গতকালও কলম্বোতে লক্ষ্য তাড়ায় উড়ন্ত শুরু পায় শ্রীলঙ্কা। তবে মিডল অর্ডারে ধস নামে। এরপর আর ফিরতে পারেনি লঙ্কানরা। প্রথম ওয়ানডেতে এগিয়ে থেকে হারার পর এবার পিছিয়ে থেকেও ফেরার গল্প লিখল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের মাঝারি মানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই পাথুম নিশাঙ্কাকে হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তবে তিনে নেমে সেই ধাক্কা সামাল দেন কুশল মেন্ডিস। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে নিশান মাদুশকাকে সঙ্গে নিয়ে ৪৫ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন তিনি। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ৩১ বলে ৫৬ রান করেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। আর মাদুশকা করেন ২৫ বলে ১৭ রান। তিন উইকেট হারিয়ে দলীয় একশ স্পর্শ করা লঙ্কানরা জয়ের পথেই ছিল। তবে হঠাৎ তাদের ব্যাটিং লাইনআপে ধ্বস নামান বাংলাদেশি স্পিনাররা। ৬ রান করা আসালঙ্কাকে ফিরিয়ে শুরুটা করেন শামীম হোসেন। এরপর কামিন্দু মেন্ডিসকে ফেরান তানভীর। আর দুনিথ ভেল্লালেগেকে দ্রুত সাজঘরে ফেরান শামীম। ১৩২ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন জনাইথ লিয়ানাগে। তবে ১৬ বলে ১৩ রানের বেশি করতে পারেননি হাসারাঙ্গা। তাকে ফিরিয়েছেন মিরাজ। মহেশ থিকশানাও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তানভীরের বলে রিশাদের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। এই উইকেট নিয়ে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ফাইফার পেয়েছেন এই স্পিনার। শেষদিকে লিয়ানাগে একাই লড়াই করেছেন। ৮৫ বলে করেছেন ৭৮ রান। তবে তাকে কেউই যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেনি। দুশমন্থা চামিরা ৩১ বলে ১৩ রান করেন। আর আসিথা ফার্নান্দো অপারাজিত ছিলেন ৩ রান করে। বাংলাদেশের হয়ে ৩৯ রানে ৫ উইকেট পান তানভীর। এ ছাড়া ২ উইকেট পেয়েছেন তানজিম সাকিব। একটি করে উইকেট পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদি মিরাজ ও শামীম হোসেন।

এর আগে প্রথম ম্যাচের মতোই গতকালও ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত শুরু করেছিল বাংলাদেশ। এমন শুরুর পরও লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় বড় সংগ্রহ গড়তে ব্যর্থ বাংলাদেশ। পারভেজ হোসেন ইমন ও তাওহিদ হৃদয়ের ফিফটিতে লড়াই করার পুঁজি পায় বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। গত ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা তানজিদ তামিম সুবিধা করতে পারেননি। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই ফিরেন এই ওপেনার। আসিথা ফার্নান্দোর করা অফ স্টাম্পের বাইরের বল আউট সুইং করে আরো বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ড্রাইভ করতে যান তামিম, টাইমিং না হওয়ায় ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটকিপারের গ্লাভসে। সাজঘরে ফেরার আগে ১১ বলে ৭ রান করেছেন এই ওপেনার। তামিম দ্রুত ফেরার পর দলের হাল ধরেন আরেক ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও নাজমুল হোসেন শান্ত। এই দুজনের সাবলীল ব্যাটিংয়ে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। তবে উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি শান্ত। ১২তম ওভারে চারিথ আসালঙ্কাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কাউ কর্ণারে ধরা পড়েন তিনি। ১৯ বলে ১৪ রান করেছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার।

আগের ম্যাচে ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি পারভেজ হোসেন ইমন। তবে গতকাল কিছুটা আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করলেও বলের গুণাগুণ বুঝে খেলার চেষ্টা করছেন। পেয়েছেন ব্যক্তিগত ফিফটির দেখাও। ৪৬ বলে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন ইমন। তবে ফিফটির পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ফেরার আগে ৬৯ বলে ৬৭ রান করেছেন এই ওপেনার। ওয়ানডের নেতৃত্ব পাওয়ার পর এই প্রথম সিরিজ খেলছেন মিরাজ। অধিনায়ক হিসেবে শুরুটা ভালো করতে পারেননি তিনি। অন্তত ব্যাট হাতে ব্যর্থ এই অলরাউন্ডার। প্রথম ম্যাচে ডাক খেয়েছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ ছিল ফেরার। তবে পারেননি। দলের প্রয়োজন ছিল জুটি গড়ার কিন্তু বাজে শট খেলে উল্টো দলের বিপদ বাড়িয়েছেন তিনি। ফেরার আগে ১০ বলে করেছেন ৯ রান। লোয়ার মিডল অর্ডারে খেলেন শামীম। গতকাল তাকে মিডল অর্ডারে খেলানো হয়েছিল। ছয়ে নেমে ভালোই শুরু করেছিলেন। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটার। আসিথা ফার্নান্দোর শট বলে পুল করে ছক্কা মারার চেষ্টায় ফাইন লেগে জানিথ লিয়ানাগের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। সাজঘরে ফেরার আগে ২৩ বলে ২২ রান করেছেন তিনি।

শামীম ফেরার পর জাকের আলীকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন তাওহিদ হৃদয়। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে বড় সংগ্রহের পথেই ছিল বাংলাদেশ। ২৪ রান করে জাকের ফিরলে ভাঙে ৪৫ রানের জুটি। এরপরই ধ্বস নামে। ১৪ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শেষ উইকেট জুটিতে তানজিম সাকিব কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন। মোস্তাফিজকে নিয়ে ৩০ রানের জুটি গড়েন। সাকিব অপরাজিত থেকেছেন ২১ বলে ৩৩ রান করে। শ্রীলঙ্কানদের মধ্যে ফার্নান্ডো ৩৫ রানে ৪টি এবং হাসারাঙ্গা ৬০ রান দিয়ে ৩টি উইকেট পান। চামারা ও আসালাংকা ১টি করে উইকেট নেন। ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছেন বাংলাদেশের তানভীর ইসলাম। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী মঙ্গলবার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইঞ্জিন সংকট, রেলের পণ্য পরিবহন খাতে ধস
পরবর্তী নিবন্ধতুর্কমেনিস্তানকে সাত গোলে হারিয়ে গ্রুপে শীর্ষে বাংলাদেশ