সরকারি হিসেবে শীতকালীন সবজির সময় শুরু হয়েছে গত ১৫ অক্টোবর থেকে। কিন্তু এর অনেক আগে থেকেই শীতকালীন সবজি উৎপাদন শুরু করেছেন চন্দনাইশ উপজেলার শঙ্খ নদী তীরবর্তী অঞ্চলের চাষিরা। সে হিসেবে আগাম সবজি বিক্রিও শুরু করেছেন অনেকে। ইতোমধ্যে পাইকারি বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে মুলা, বেগুন, বরবটি, মিষ্টি লাউ, বাংলা লাউ, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, শষা, ঢেঁড়স, ধনেপাতা, লালশাক, সরিষাশাক, লাউশাক ও পালংশাক। তবে গত মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে অর্ধেক মূল্যে সবজি বিক্রি হওয়ায় উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা।
চাষিরা জানান, শীতকালীন সবজি শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও টমেটো বাজারে আসতে আরো ২৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগবে। চট্টগ্রাম নগরীসহ আশেপাশের সবজির ঘাটতি মেটাতে বড় অবদান রাখে এখানকার নানা প্রজাতির সবজি। এ উপজেলায় গত মৌসুমে ২ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছিল। ১৫ অক্টোবরের পর থেকে রবি মৌসুম শুরু হওয়ায় চলতি মৌসুমে পুরো উপজেলার হিসেব এখনো করা সম্ভব হয়নি। তবে কত হেক্টর জমিতে এবার সবজির চাষ হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা তথ্য সংগ্রহ করছেন বলে জানিয়েছেন চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার। তিনি বলেন, এখানকার চাষিদের সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা পরামর্শ প্রদান করা হয় কৃষি অফিস থেকে। সরেজমিন দেখা যায়, এখন ক্ষেত থেকে সবজি তুলে বাজারে বিক্রি, ক্ষেতের পরিচর্যা, সার, কীটনাশক প্রয়োগ, নতুন চারা রোপণে ব্যস্ত সময় কাটছে এ অঞ্চলের চাষিদের।
শঙ্খচরের সবজি চাষি আহমদ নবী, মো. মোস্তফাজ্জামান ও আবদুল আজিজ জানান, তারা ভাদ্র মাসের শুরু থেকেই মুলা, বেগুন, বরবটি চাষ শুরু করেন। কার্তিক মাসের শুরু থেকেই তা বাজারে বিক্রি করেন। অধিক লাভের আশায় আগাম শীতকালীন সবজির চাষ করেন। এছাড়া ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা আশ্বিন মাসের শেষের দিকে রোপণ শুরু করেন। অনেকে ইতোমধ্যে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা রোপণ শুরু করেছেন। এর আগে একই ক্ষেত থেকে তারা মুলার এক চালান বিক্রি করে দেন। আশ্বিন মাসের শেষের দিকে ও অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকেই সকল প্রকার শীতকালীন সবজি বাজারে পুরোদমে বিক্রি করেন বলে জানান তারা।
দোহাজারী রেলওয়ে মাঠে পাইকারি সবজি বাজারে শঙ্খ তীরবর্তী দোহাজারী, সাতবাড়িয়া, ধোপাছড়ি, বরমা, বরকল বৈলতলী এলাকা থেকে নৌকা ও গাড়িযোগে চাষিরা নানা পদের শীতকালীন শাক-সবজি নিয়ে আসেন। এই বাজার থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দরদাম করে চাষিদের কাছ থেকে সবজি কিনে ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন পরিবহনে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন সবজি বাজারে এবং অন্যান্য সবজি বাজারে সরবরাহ করেন।
রেলওয়ে মাঠে প্রতিদিন সবজির বাজার বসলেও শনিবার ও মঙ্গলবার বেশি সবজি আসে। ওইদিন চাষিরা ক্ষেত থেকে সবচেয়ে বেশি সবজি নিয়ে বাজারে আসেন। কথা হয় কয়েকজন সবজি চাষির সাথে। তারা জানান, শঙ্খচরের মাটি যেকোনো ধরনের সবজি চাষের জন্য আদর্শ। এখানে উৎপাদিত সবজি স্বাদেও অতুলনীয়। তাই শঙ্খচরের সবজির চাহিদা অন্যান্য এলাকা চেয়ে একটু বেশি। বর্ষার মধ্যেই আগাম শীতকালীন সবজি চাষে নেমে পড়েন তারা। এক্ষেত্রে অনেক সময় লাভবান হন, অনেক সময় ভারী বর্ষণে ক্ষতির শিকার হন। চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন বড় সবজি বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরাই তাদের প্রধান গ্রাহক বলেও জানান তারা।
শঙ্খচরের কৃষক মো. মোজাম্মেল হক জানান, গত মৌসুমের তুলনায় চলতি মৌসুমে অনেক কম দামে বিক্রি হচ্ছে শীতকালীন সবজি। এবার উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতি একর (আড়াই কানি) জমিতে উৎপাদন খরচ হয় লাখ টাকার উপরে। অথচ বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি হিসেবে মুলা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, বেগুন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ১৫ থেকে ২০ টাকা, তিত করলা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, শষা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, ঝিঙা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ২০ থেকে ২৫ টাকা, ধনেপাতা ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং মিষ্টি লাউ প্রতিটি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, বাংলা লাউ প্রতিটি ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত মৌসুমের এ সময় এসব সবজি বিক্রি হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ দামে।
এদিকে এ অঞ্চলে এখনো হিমাগার স্থাপিত না হওয়ায় সবজি সংরক্ষণ করাও সম্ভব হয় না। ফলে যেকোনো দরে দিনের সবজি দিনেই বিক্রি দিতে হয় চাষিদের।