দাফনের ৪৫ দিন পর আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে আলফা শাহরিন (২৬) নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। গতকাল ১৩ জুন সকালে বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন চালিতাতলী বাজারের মসজিদ সংলগ্ন নুরুল আমিনের পারিবারিক কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে পুনরায় বিকেলে মরদেহটি দাফন করা হয়েছে। আলফা শাহরিন, একই থানার চালিতাতলী বাজারের দারোগা বাড়ির মো. জাহেদুল মোস্তফার স্ত্রী ও একই এলাকার নুরুল করিমের মেয়ে। গত ২৮ এপ্রিল ভোরে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলফা শাহরিনের মৃত্যু হয়।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের এসআই মো. শাহেদুল্লাহ আজাদীকে বলেন, যৌতুকের টাকা না পেয়ে শাশুড়ি, ননদ ও দেবর মিলে আলফা শাহরিনকে হত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) সকালে ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে গৃহবধূ আলফা শাহরিনের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৬ মে যৌতুকের টাকা না পেয়ে শাশুড়ি, ননদ ও দেবর মিলে শাহরিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–৭ মামলার আবেদন করা হয়। মামলায় আলফা শাহরিনের শাশুড়ি বিবি আয়েশা (৪৮), তার মেয়ে আশফিকা (১৯) ও ছেলে সামিরকে (২১) আসামি করা হয়। মামলাটি গ্রহণ করে নগরীর পাচঁলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সরাসরি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ ও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে মামলা তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। গত ৭ মে পাঁচলাইশ থানায় মামলা হিসেবে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করা হয়।
২০২১ সালের ১৭ জুন নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী বাজারের দারোগা বাড়ির মৃত সিরাজুল মোস্তফার ছেলে মো. জাহেদুল মোস্তফার সঙ্গে বিয়ে হয় আলফা শাহরিনের। এই দম্পত্তির ২ বছরের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দিতে শাহরিনকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের একপর্যায়ে সুখের আশায় মা এবং আত্মীয়–স্বজন থেকে ধার করে ৯ লাখ ২১ হাজার টাকা স্বামী এবং শাশুড়িকে এনে দেন শাহরিন। গত ৯ এপ্রিল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন শাহরিনের স্বামী মো. জাহেদুল মোস্তফা। রিকশার চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে শাহরিনের ফাঁস লেগেছে বলে গত ২৭ এপ্রিল নুরুল করিমকে হোয়াটসঅ্যাপে কল করেন বিবি আয়েশা (শাশুড়ি)। জানান, শাহরিন বেডরুমে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পরে নগরীর চান্দগাঁও থানার বেসরকারি ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড ডেন্টাল হাসপাতালে তাকে নিয়ে যান বাবা নুরুল করিম। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে শাহরিনকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। সেখানে আইসিইউর সিট খালি না থাকায় শাহরিনকে নিয়ে যাওয়া হয় বেসরকারি হাসপাতাল চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৮ এপ্রিল শাহরিনের মৃত্যু হয়। মরদেহের গোসল দেওয়ার সময় প্রতিবেশী ইয়াসমিন আক্তার শাহরিনের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধরের চিহ্ন দেখলে বাবা নুরুল করিমকে জানান। একইদিন পারিবারিক কবরস্থানে শাহরিনকে দাফন করা হয়।