: নাহ্ , আর পারা গেল না , সেই সকাল থেকে লুবনাটাযে কোথায় গেল!
সকালের নাস্তার সময় লুবনাকে ডাইনিং টেবিলে না পেয়ে খুব বিরক্ত হন মা । হঠাৎ সেন্ডেলের খস্ খস্ শব্দ । ধপাস্ করে খুলে যায় দরজাটা । লুবনার মা দরজার দিকে তাকিয়ে বলেন –
: কে? কে ওখানে ?
: আমি লুবনা মা ।
: সাত সকালে কোথায় গিয়েছিলে?
: মিঠুদের বাড়িতে
: কেন?
: মিঠু ও মিতুর উপরের পাটির একটি করে দাঁত পড়ে গেছে ।
: দাঁত পড়েছে তো কি হয়েছে?
: দাঁতটা ইঁদুরের গর্তে ফেলতে আমরা গেছি জমিদারের পোড়াবাড়ি ।
: জমিদার বাড়ি?
: হ্যাঁ, জমিদারের বিশাল পোড়াবাড়ি । বাড়ির সামনে বড় বড় থাম আর বটগাছ । মানুষ থাকেনা বলে ওটা এখন ইঁদুর ছুঁচোর দখলে। আমরা সেখানে গিয়ে ইঁদুরের গর্ত খুঁজে বের করেছি ।খানিক পর রোদ উঠলে দাঁতগুলো ফেলতে হবে ইঁদুরের গর্তে চোখ বন্ধ করে । তবেই নতুন সুন্দর দাঁত উঠবে পাটিতে।
মা হেসে বললেন
: পাগল কে বললো ওসব তোমাদের?
: কেন–মিঠুর বুড়ো দাদী বললো ।
: হুম বুঝেছি–এখন খেয়ে নাও ।
লুবনাকে নাস্তা দিয়ে মা গেছেন ছাদে কম্বল রোদে দিতে। শীতের সকাল বেলা । মিষ্টি রোদের ঝিকিমিকি চারদিকে। নাস্তা সেরে লুবনা চলে গেল রোদ পোহাতে মিঠু ও মিতুর বাড়িতে। লুবনাকে দেখে মিঠু ও মিতু সটান বেরিয়ে আসে দাঁত দুটো নিয়ে। ধানক্ষেতের আঁকা বাঁকা আলপথে রওনা দেয় লুবনাকে নিয়ে জমিদারের পুরনো পোড়াবাড়ি।
পোড়াবাড়ির সামনে অর্ধভগ্ন বড় বড় থাম। বট অশ্বথের শেকড় জড়িয়ে আছে আষ্টেপৃষ্ঠে । চিলেকোঠায় সবুজ ঘাস, আগাছা উদ্ভিদ। তার উপর ঠিকরে পড়ছে রোদের আলো । সে আলো ঝিলিক মেরে ওঠে মহুয়া পাতায়। চেউর বাঁশ আর খাগড়ার বন পেরিয়ে ওরা পৌঁছে যায় পোড়াবাড়িতে । মহুয়া পাতার নীচে চোখ পড়তেই বটগাছ থেকে একটা হুতুম পেচা আছড়ে পড়ে আঁকপাঁক করে। থমকে দাঁড়ায় ওরা একটু এগিয়ে দেখে ঝোপের ভেতর দুটো গর্তের উপর বালিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাকা সোনালী ধান। ওরা নিশ্চিত হয় ওটা ইঁদুরের গর্ত । খুশিতে হাততালি দিয়ে মিঠুর দাতটি গর্তে ফেলে ছড়া কাটে সকালে
‘ ইঁদুর ভাইয়া ইঁদুর ভাইয়া
বারেক ফিরে চাও,
আমার মোটা দাঁতটি নিয়ে
চিকন একটি দাও।’
ছড়াটি শেষ হতেই তিড়িং করে লাফিয়ে একটা ইঁদুর উধাও হলো অশ্বথের ডাল বেয়ে। ধারনা করা হলো মিঠুর আবেদন মঞ্জুর করেছে ইঁদুরটি। হাততালি দিয়ে পালাক্রমে ফেলা হলো মিতুর দাঁতটি অন্য গর্তে ।গর্তের ভেতরে গহীন ফোকর ও জমকালো অন্ধকার । ছড়া পড়া হলো সমস্বরে ুএকবার –দুইবার –তিনবার । কিন্তু ইঁদুরের ছায়াও দেখা গেল না । মিতুর টোলপড়ামুখের নিষ্পাপ হাসি হঠাৎ হারিয়ে গেল। মিতু ভাবলো – ইঁদুর মঞ্জুর করেনি ওর আবেদন। ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেললো সে। তারপর মান অভিমান– দাঁতটা ফেরত নেবেই। হাতটা ঢুকিয়ে দিলো গর্তের গহীন ফোকরে । হঠাৎ কালো মেঘের ছায়া ঢেকে দিলো মিষ্টি রোদ । ফোঁ –শ–স…শব্দে ‘মা’ বলে চিৎকার করে লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। মিতুর অমন অবস্থা দেখে মিঠুকে রেখে লুবনা ছুটে গিয়ে আশেপাশের লোকজনকে খবর দিলো । পাড়ার ওঁঝা ুসুন্দর আলীকে সংগে নিয়ে এলেন প্রতিবেশীরা । সুন্দর আলী দুধভরা বাটি রেখে সাপুড়ে নাগিণী সাপিনী বীন বাজালেন আর মন্ত্রপড়লেন বিড় বিড় করে। সেকী মন্তর!-
‘হুংকারে খাইলাম , ঝংকারে ধাইলাম
পর্বতের মাথায় লাথি,
হাতির কান্ধে রামধা ধরাই
আমি বাঞ্ছারামের নাতি
আয় আয় আ… য়..।’
মন্ত্রশুনে সুড় সুড় করে বেড়িয়ে এলো সাত ফুট লম্বা কালনাগ। সুন্দর আলী ছলাকলা করে সাপের বিষ তুলে নিলেন মিতুর শরীর থেকে। তারপর বাক্স বন্দী করলেন নাগটাকে। খবর পেয়ে বাবা ছুটে এসে বাড়িতে নিয়ে গেলেন সবাইকে।
পরদিন খুব সকালে ঘুম থেকে জেগে লুবনা ছুটে যায় মিতুদের বাসায়। বাইরে টিপ টিপ বৃষ্টি । জানালার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে মিতু। লুবনাকে পেয়ে মিতু বলে –
: সাপটাতো রা পড়েছে , চল না দেখে আসি দাঁতটা ..
: ফের যাবো ওখানে?
বাব্বাহ্
কী ভ.য়..ং..ক..র!