দলের প্রধান প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না এমন চর্চা দেখা যায় না মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, তার দল মনে করে দলীয় প্রধানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত থাকা দরকার। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কোনো দলের সংসদীয় কমিটি যদি মনে করে তারা দলীয় প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবে, তাহলে গণতান্ত্রিক এ প্রক্রিয়ার সুযোগ বন্ধ করা ঠিক হবে না বলে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেন তিনি।
গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের পঞ্চদশ দিনের আলোচনা শেষে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকটি পদে থাকা নিয়ে কিছু প্রস্তাব আসছে। অধিকাংশের মধ্যে একটা মতামত আসছে, প্রধানমন্ত্রী এবং তার সাথে সংসদ নেতার ভূমিকাটা প্রায় অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িত, এই দুই ক্ষেত্রে একত্রে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সংসদ নেতা থাকতে কোনো অসুবিধা নেই। এক্ষেত্রে প্রায় সকলেই একমত, কিন্তু দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন কিনা এক্ষেত্রে কিছু বিতর্ক হচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।
এ বিষয়ে বিএনপির প্রস্তাব কমিশনকে আগে জমা দেওয়া হয়েছে বলেও তুলে ধরেন তিনি। বিশ্বের গণতন্ত্রের সুতিকাগার হিসেবে যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে সংস্কার কমিশনের সংলাপে নেতৃত্ব দেওয়া বিএনপির এই নেতা বলেন, সেখানেও দলীয় প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী একই ব্যক্তি হয়ে থাকেন। কয়েকটি দেশে মাঝেমধ্যে এটার ব্যতিক্রম হয়ে থাকে। সংসদীয় কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয় দল কাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করবে। যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয় সংসদে অথবা জোট হয় তারা পার্লামেন্টারি পার্টি করে সিদ্ধান্ত নেয় কোন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হবেন। এখন সেই ব্যক্তি যদি কোনো একটা দলের প্রধান হন, সেই ক্ষেত্রে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় না বা তার অযোগ্যতা থাকে না। কারণ এটা একটা গণতান্ত্রিক চর্চা। গণতন্ত্রে কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হলে তাকে অপশন হিসেবে রাজনৈতিক দলের প্রধানের পদটা ছাড়তে হবে এ রকম কোনো চর্চা সাধারণত দেখা যায় না। দুই একটা ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকতে পারে। কারণ এটা (দলীয় পদ) একটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার।
তিনি বলেন, দলীয় প্রধান হওয়ার কারণেই কি তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদেও যোগ্যতা ঘোষণা করা হচ্ছে? এ রকম একটা প্রশ্ন আসতে পারে। আর দলীয় প্রধান সবসময় প্রধানমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করবেন এমন তো কথা নয়। সংসদীয় কমিটিতে সিদ্ধান্ত হবে কোন এমপি প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু অপশনটা থাকা ভালো। দলীয় প্রধানের যাতে তার অধিকারটা পূর্ণ থাকে তিনি ইচ্ছা করলে প্রধানমন্ত্রী পদ পাবেন। সেজন্য আমরা বলেছি, এটা উন্মুক্ত থাকা ভালো। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে বলেও তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগের জন্য জাতীয় কমিশন একটা খসড়া সবার মতামতের প্রেক্ষিতে প্রণয়ন করেছে। তাতে কোনো মতামত আছে কিনা, ছোটখাট কোনো সংশোধনী আনতে হবে কিনা, সেটা যার যার দলীয় ফোরামে আলোচনা করে আগামীকাল (সোমবার) পরশুদিন সকালে উপস্থাপনের জন্য সময় নির্ধারণ করেছে কমিশন।
দলের প্রধান আলাদার পক্ষে জামায়াত
প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলের প্রধান এই তিন গুরুত্বপূর্ণ পদে একই ব্যক্তি বহাল থাকলে রাজনৈতিক ভারসাম্য থাকে না বলে মনে করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। এ নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, এতে সংসদ সদস্যরা মুখ খুলতে পারেন না, দলীয় নেতাকর্মীরাও আতঙ্কে থাকেন। আমরা মনে করি, একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা হতে পারেন। তবে একইসঙ্গে দলের প্রধান থাকা যাবে না। এতে রাজনৈতিক কাঠামোতে ভারসাম্য ফিরে আসবে, নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ তৈরি হবে। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নির্বাচনে ভোট নয়, রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রক্রিয়াকেই একমাত্র গ্রহণযোগ্য পথ হিসেবে তাদের অবস্থান তুলে ধরে তাহের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান গঠনে ৫ বা ৭ সদস্যের কমিটির যে দুটি প্রস্তাব এসেছে, আমরা কোনোটিরই বিরোধিতা করছি না। আমাদের মূল কথা একটাই–কমিটির সদস্য মনোনয়ন হোক সর্বসম্মতভাবে, কোনোরকম ভোটাভুটির মাধ্যমে নয়।
বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে জামায়াতের এই নেতা বলেন, যদি কমিটিতে রাজনৈতিক ঐকমত্যে উপনীত হওয়া সম্ভব না হয়, তবে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করা যেতে পারে। পাঁচ সদস্যের কমিটি হলে সরকার ও বিরোধী দল থেকে দুজন করে এবং তৃতীয় বৃহত্তম দল থেকে একজন সদস্য রাখা যেতে পারে। সাত সদস্যের কমিটির ক্ষেত্রেও সরকার ও বিরোধী পক্ষ থেকে তিনজন করে এবং তৃতীয় দলের একজন সদস্য রাখা যেতে পারে।