শৃঙ্খলা রক্ষায় দর্শনার্থী প্রবেশে ফের পাস চালুর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল প্রশাসন। এর আগে একাধিকবার ওই নিয়ম (পাস) চালু করলেও সেটি খুব বেশি দিন ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এখন নতুন করে চতুর্থ দফায় আবারো এই পাসের নিয়ম চালুর কথা ভাবছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ তথ্য নিশ্চিত করে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, হাসপাতালে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দর্শনাথী বা রোগীর স্বজনদের প্রবেশের বিষয়টি আমরা একটি নিয়মের মধ্যে আনার চিন্তা করছি। সেক্ষেত্রে পাস সরবরাহের কথা ভাবছি আমরা। দর্শনার্থী বা রোগীর স্বজনরা পাস সংগ্রহ করে হাসপাতালে প্রবেশ করবেন। অল্প সময়ের মধ্যেই এ নিয়ম চালু করা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন হাসপাতাল পরিচালক।
হাসপাতাল প্রশাসনের তথ্য মতে, হাসপাতাল প্রশাসন কর্তৃক সরবরাহকৃত একটি পাস সংগ্রহ করেই হাসপাতালে প্রবেশ করতে হবে রোগীর স্বজন ও দর্শনাথীকে। প্রতিটি পাসের বিনিময়ে জামানত হিসেবে নির্দিষ্ট অংকের টাকা ধার্য করার চিন্তা-ভাবনা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নতুন নিয়ম চালু হলে এখনকার মতো হাসপাতালে ফ্রি প্রবেশের সুযোগ থাকবে না আর।
প্রসঙ্গত, আগেও জামানত নিয়ে পাসের বিনিময়ে প্রবেশের নিয়ম চালু ছিল হাসপাতালে। কিন্তু চালুর পরপরই এ নিয়ম খুব বেশি দিন ধরে রাখা যায়নি। কখনো তিন মাস, কখনো ৬ মাস আবার কখনো সর্বোচ্চ বছর খানেক পরই ওই নিয়ম বাতিল করে ফ্রি প্রবেশের সুযোগ করে দেয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সামপ্রতিক সময়ের মধ্যে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে হাসপাতালে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিনামূল্যে পাসের নিয়ম চালু করতে উদ্যোগ নেয় হাসপাতাল প্রশাসন। কিন্তু জনবল সংকটে সে উদ্যোগ আর গতি পায়নি। তাছাড়া পাসের বিনিময়ে কোন ধরনের জামানত না নেয়ায় পাসগুলো আর ফেরত পাওয়া যায়নি। ওই সময় (২০১৭ সালের এপ্রিলে) প্রায় ৬ হাজার পাস সরবরাহ করা হলেও সবকয়টি পাস হারিয়ে গেছে বলে জানান হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জালাল উদ্দিন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১৮ নভেম্বর ফের জামানতের বিনিময়ে পাস সংগ্রহ করে প্রবেশের নিয়ম চালু করে হাসপাতাল প্রশাসন। তবে তাও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দুই মাস না যেতেই আবারো ওই নিয়ম বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে হাসপাতালে প্রবেশ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। তবে দর্শনার্থী প্রবেশ নিয়মের মধ্যে আনতে ২০১৯ সালের ১৭ মার্চ থেকে তৃতীয় দফায় জামানতসহ পাসের নিয়ম চালু করে হাসপাতাল প্রশাসন।
ওই সময় ২০ টাকা জামানতের বিনিময়ে একটি পাস সংগ্রহ করতে হয় দর্শনার্থীকে। হাসপাতালের মূল প্রবেশ পথে (মাঝখানের গেটে) নিচতলায় ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানের পার্শ্ববর্তী তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র থেকে এই পাস সংগ্রহ করতে হয়। হাসপাতালে প্রবেশের ক্ষেত্রে সংগৃহীত পাস দেখাতে হয়েছে গেটে নিয়োজিত আনসার সদস্যদের। একটি পাস নিয়ে একজন দর্শনার্থীকে হাসপাতালে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়। পাসটি ফেরতের সময় সংশ্লিষ্ট দর্শনার্থীকে তার জামানতের ২০ টাকা ফেরত দেয়া হয়। পাস ছাড়া কোন দর্শনার্থীকে হাসপাতালে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়নি। তৃতীয় দফায় জামানতসহ পাসের এ নিয়মও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বছর না ঘুরতেই এ নিয়ম বন্ধ হয়ে যায়। ফের উন্মুক্ত হয়ে যায় হাসপাতালে প্রবেশ। এখন চতুর্থ দফায় জামানতসহ পাসের জমানায় ফেরার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন। এবার জামানত হিসেবে ফেরতযোগ্য একশ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে বলে হাসপাতাল প্রশাসন আভাস দিয়েছে। অর্থাৎ একশ টাকা জামানত রেখে একটি পাস সংগ্রহ করেই হাসপাতালে প্রবেশ করতে হবে দর্শনার্থীকে। আর পাসটি ফেরতের সময় জামানাত হিসেবে জমা দেয়া ওই একশ টাকা সংশ্লিষ্ট দর্শনার্থী ফেরত পাবেন।