বিশ্বকাপে আবারো ঘটলো অঘটন। তিন দিনে দ্বিতীয় অঘটন। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৮ রানে হারিয়ে চমকে দিল নেদারল্যান্ডস। গত রোববার আফগানিস্তানের কাছে হেরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। প্রতিযোগিতার প্রথম দু’টি ম্যাচে শ্রীলংকা এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দাপুটে জয়ের পর তুলনায় দুর্বল দলের কাছে হেরে গেলেন বাভুমারা। ধর্মশালায় উড়তে থাকা সাউথ আফ্রিকাকে রীতিমতো মাটিতে নামিয়ে ডাচরা যেন রূপকথার জয় পেল। নেদারল্যান্ডসের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার পরাজয় জমিয়ে দিল বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের লড়াই। নেদারল্যান্ডসের ২৪৫ রানের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস শেষ হল ২০৭ রানে।
জয়ের জন্য ২৪৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম থেকেই নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারাতে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩১ বলে ১৬ রান করে আউট হয়ে যান বাভুমা। অন্য ওপেনার কুইন্টন ডিককও রান পাননি ধর্মশালায়। ২২ বলে ২০ রান করেন তিনি। দলের ইনিংসকে ভরসা দিতে পারেননি তিন নম্বরে নামা ভ্যান ডার ডসেন (৪) এবং এডেন মার্করামও (২)। দক্ষিণ আফ্রিকা কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে পঞ্চম উইকেটের জুটিতে। হেনরিক ক্লাসেন (২৮) এবং ডেভিড মিলার (৪৩) জুটিতে তুললেন ৪৫ রান। তার আগে ৪৪ রানেই ৪ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ক্লাসেন ৪টি চার মারেন। মিলারের ব্যাট থেকে আসে ৪টি চার এবং ১টি ছয়। রান পাননি মার্কো জানসেনও (৯)। ক্লাসেন এবং মিলারের জুটি ভেঙে যাওয়ার পর আর কোনও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। শেষ দিকে জেরাল্ড কোয়েটজির মরিয়া চেষ্টা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট ছিল না। তিনি করেন ২৩ বলে ২২ রান। চেষ্টা করেন কেশব মহারাজও। লাভ অবশ্য কিছু হয়নি। মহারাজ শেষ পর্যন্ত করেন ৩৭ বলে ৪০ রান। তিনি ৫টি চার এবং ১টি ছয় হাঁকান। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিকাংশ ব্যাটার এ দিন শট খেলে উইকেট ছুড়ে দেন। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ৪৩ ওভারও ব্যাটিং করতে পারেননি তারা।
নেদারল্যান্ডসের বাস ডি লিড ৩৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। সফলতম বোলার রোয়েলফ ভ্যান ডার মেরউই ২ উইকেট নেন ৩৪ রান দিয়ে। অন্য বোলাররাও সাফল্য পান দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। পল ভ্যান মিকেরেন ৪০ রানে ২ উইকেট নেন। ৪৩ রানে ২ উইকেট লোগান ভ্যান বিকের। ১টি উইকেট নিয়েছেন কলিন অ্যাকারম্যানও।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করে নেদারল্যান্ডস তোলে ৮ উইকেটে ২৪৫ রান। ধর্মশালার বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়ায় শুরুটা ভালো করতে পারেনি নেদারল্যান্ডসের ব্যাটাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের দাপটে ৫০ রানেই ৪ উইকেট হারায় তারা। যদিও মিডল অর্ডারের ব্যাটারদের দৃঢ়তায় লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছায় তাদের ইনিংস। নেদারল্যান্ডসের ইনিংস টানেন মূলত অধিনায়ক স্টক এডওয়ার্ডস। সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে তিনি করেন ৬৯ বলে অপরাজিত ৭৮। ১০টি চার এবং ১টি ছক্কা আসে তার ব্যাট থেকে। তিনি ছাড়া নেদারল্যান্ডসের আর কোনও ব্যাটারই উল্লেখযোগ্য রান করতে পারেননি। তবু ২৪৫ রান উঠে দলগত প্রচেষ্টায়। এডওয়ার্ডসের পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মেরউই। ৩টি চার এবং ১টি ছয়ের সাহায্যে তিনি করেন ১৯ বলে ২৯ রান। বাকিরা তেমন রান না পেলেও পঞ্চম উইকেট থেকেই ছোট ছোট জুটি তৈরি করেন নেদারল্যান্ডসের ব্যাটারেরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের মধ্যে সফলতম মার্কো জানসেন ২৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন। লুনগি এনগিডি ৫৭ রানে ২ উইকেট এবং কাগিসো রাবাডা ৫৬ রান খরচ করে ২ উইকেট নিয়েছেন। ১টি করে উইকেট মহারাজ এবং কোয়েটজির। এ দিন টস হওয়ার পরেই ধর্মশালায় শুরু হয় বৃষ্টি। নির্ধারিত সময়ের ২ ঘণ্টা পর বিকাল ৪টায় শুরু হয় খেলা। ওভার সংখ্যা কমিয়ে করা হয় ৪৩। ম্যাচ সেরা হন নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ক স্টক এডওয়ার্ডস।