সরকারি ছুটির দিনে দেশের সবচেয়ে বড় কন্টেনার টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটির কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, আন্তঃমন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনা করেই বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানো হচ্ছে। ট্যারিফ যা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বিশ্বের অনেক বন্দরের তুলনায় কম বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক অপারেটর দরকার বলেও সাংবাদিকদের জানান।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা আমাদের বন্দরগুলো দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করছি। তবে আরও দক্ষতা অর্জনের জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রবেশ করতে হবে। যখনই একটি আন্তর্জাতিক অপারেটর নিয়োগ করা হবে, তখনই একটি বন্দর আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রবেশ করতে পারবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বেসরকারি অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের কাছ থেকে নিয়ে নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন চিটাগাং ড্রাইডক লিমিটেডের মাধ্যমে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের (এনসিটি) কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয় গত ৭ এপ্রিল থেকে। গতকাল সকালে নৌপরিবহন উপদেষ্টা টার্মিনালের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। নৌপরিবহন উপদেষ্টার এনসিটি পরিদর্শনকালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী, বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বর্তমানে এনসিটি পরিচালনায় নিয়োজিত চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডের (সিডিডিএল) কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কেবল পুরোনো অপারেটরের পরিবর্তে নতুন অপারেটর নিয়োগ করতে যাচ্ছি। এর একমাত্র উদ্দেশ্য দক্ষতা বৃদ্ধি। কারণ, আমি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বন্দরের কার্যক্রম পরিদর্শন করেছি। আমার এতে কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই, এমনকি আমি চট্টগ্রামের বাসিন্দাও নই।’ তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের নিজস্ব বন্দর। এটি আমাদের সম্পদ এবং এটি আমাদের হাতেই থাকবে। কেউ যদি ভিন্নভাবে অপপ্রচার করে, আমি আশা করি তারা দেশের স্বার্থে আর এমনটি করবে না।’
নৌ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এগিয়ে যেতে চাই। আমরা বৈশ্বিক অঙ্গনে প্রবেশ করতে চাই। নিজেদের মধ্যে আটকে থাকতে চাই না।’
সাইফ পাওয়ারটেক প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘১৭–১৮ বছর ধরে এনসিটি এবং আরেকটি টার্মিনাল পরিচালনাকারী এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটির তুলনায় আরও দক্ষতার সাথে যাতে টার্মিনাল পরিচালিত হয় সরকার সে উদ্যোগ নিয়েছে।’
‘ড্রাইডক কর্তৃপক্ষ এনসিটির দায়িত্ব নেওয়ার পর কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ গড়ে ৩০ শতাংশ বেড়েছে উল্লেখ করে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, আগামীতে যে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ পাবে, তার অধীনে এই উন্নয়ন ধারাবাহিক থাকবে।’
বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানো প্রসঙ্গে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, মন্ত্রণালয় এককভাবে মাশুল বাড়ায়নি। আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা হয়েছে। ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বন্দরের মাশুল বাড়ানো হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রধান বন্দরের চেয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল এখনো অনেক কম বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী বলেন, সিডিডিএল দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৭ দিনে নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালে জাহাজের গড় অবস্থান গড়ে ১০ ঘণ্টা সময় কমেছে। কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই বন্দর কর্তৃপক্ষ নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব ছয় মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডকে (সিডিডিএল) দিয়েছে। এর আগে এটি পরিচালনা করত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড।
সরকার বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।