প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ, জাল জালিয়াতি সম্পর্কিত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন এমন ভুক্তভোগীর ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে আদালত। এ রকম অনেক অপরাধের বিচার চাইতে আদালতকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।
আদালত থেকে প্রাপ্ত নথিতে মিলেছে এই চিত্র। ২০২৩ সালের নথিতে দেখা যায়, থানার চেয়ে আদালতে মামলা দায়েরের সংখ্যা তিন গুণ বেশি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সিএমএম) ২০২৩ সাল শেষে প্রস্তুতকৃত নথিতে দেখা যায়, নগরীর ১৬ থানায় দায়ের হওয়া মামলার (জিআর) পূর্বের জের ছিল ৫ হাজার ১৩৪টি। বছরজুড়ে নতুন মামলা দায়ের হয় ৫ হাজার ৬০৪টি। নিষ্পত্তি হয় ৫২৪টি। বদলি হয় ৫ হাজার ২৬১টি। বছর শেষে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ হাজার ৯৫৩টি। এর মধ্যে তদন্তাধীন ২ হাজার ৫৩টি। তদন্তাধীন ব্যতীত প্রকৃত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৯২১টি। এর মধ্যে পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে বিচারাধীন থাকা মামলার সংখ্যা ৭৩টি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত মামলার সংখ্যা ছিল ৪১টি। একই সময় সিএমএম আদালতে দায়ের হওয়া মামলার (সিআর) পূর্বের জের ছিল ১২ হাজার ৬৫১টি। ২০২৩ সাল জুড়ে নতুন দায়ের হয় ১৬ হাজার ১টি। নিষ্পত্তি হয় ৪ হাজার ৮৬৮টি। বদলি হয় ৯ হাজার ৮৭০টি। বছর শেষে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৯১৪টি। তদন্তাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৪৪৯টি। তদন্তাধীন ছাড়া বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ হাজার ৪৬৫টি। এর মধ্যে পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৮৪টি ও উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত মামলার সংখ্যা ছিল ১০৪টি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, থানার চেয়ে আদালতে মামলা দায়েরের সংখ্যা বেশি হওয়ার পেছনে মূলত ভূমিকা রেখেছে এনআই অ্যাক্টের (নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্ট) মামলা। একে সংক্ষেপে চেকের মামলা বলা হয়। এ মামলা অবশ্যই আদালতে দায়ের করতে হয়। আদালতে দায়ের হওয়া অসংখ্য মামলা হচ্ছে চেকের মামলা। এরপর ভূমিকা রাখে যৌতুকের মামলা। এ ধরনের মামলাও আদালতে দায়ের হয়। এসব কারণে থানার চেয়ে আদালতে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা বেশি।
সংশ্লিষ্টদের অপর একটি পক্ষ বলছেন, শুধু এনআই অ্যাক্ট বা যৌতুকের মামলার জন্য আদালতে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা বেশি তা নয়। এখতিয়ার রয়েছে এমন অনেক অপরাধের ক্ষেত্রে থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে অভিযোগকারীকে আদালতে পাঠিয়ে দেন। এছাড়া ভুক্তভোগীদের একটি অংশ আস্থা খুঁজে না পেয়ে থানাকে পাশ কাটিয়ে আদালতে চলে যান। এসব কারণে থানার চেয়ে আদালতে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা বেশি।
আদালত সূত্র জানায়, আদালতে এনআই অ্যাক্ট, যৌতুক, প্রতারণা, আত্মসাৎ, জাল জালিয়াতি ইত্যাদির অভিযোগে বেশি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা। অন্যদিকে খুন, মাদক, বিশেষ ক্ষমতা আইন, দ্রুত বিচার ও চোরাচালানের মামলা থানায় বেশি হয়। মারধর বা হুমকি ধমকি এসব আদালত ও থানায় দুই জায়গাতেই হয়। অপরাধ গুরুতর নাকি ছোটখাট সেটাও একটা বিষয়। গুরুতর বিষয়ে থানায় আর ছোটখাট বিষয়ে আদালতে মামলা দায়ের হচ্ছে। মূল কথা হচ্ছে, ওয়ারেন্ট ছাড়া পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে না এমন অপরাধের মামলাগুলো থানায় দায়ের হয় না।
মহানগর পিপি আব্দুর রশিদ আজাদীকে বলেন, অভিযোগ করতে গেলে অনেক সময় পুলিশ কোয়ারি করতে থাকে, গড়িমসি করে। আরো অনেক বিষয় রয়েছে। ভয়ের কারণে মানুষ থানায় না গিয়ে আদালতে চলে যায়। আদালতে সহজে মামলা দায়ের করা যায়। নিরাপদ অনুভব করে, আস্থা খুঁজে পায়। এজন্য আদালতে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা।
তিনি বলেন, এনআই অ্যাক্ট ও যৌতুকের অভিযোগের মামলা দায়ের হয় আদালতে, থানায় হয় না। প্রতিদিন এসব অপরাধের অসংখ্য মামলা দায়ের হয়। এ কারণেও আদালতে মামলা দায়েরের সংখ্যা থানার চেয়ে বেশি।