থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগ পাঠানো হলো দুদকে

দায়ী করা হলো ৪ ব্যাংক কর্মকর্তাকে । ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখা থেকে দেড়শ ভরি স্বর্ণালংকার গায়েব

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৪ জুন, ২০২৪ at ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ

ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখা থেকে প্রায় দেড়শ ভরি স্বর্ণালংকার গায়েবের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ব্যাংকের গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারী। এতে চারজন ব্যাংক কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে। তারা হলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ মনিরুল মাউলা, কোম্পানি সেক্রেটারি এফসিএস জে কিউ এম হাবিবউল্লাহ, ব্যাংকের চকবাজার শাখার সিনিয়র অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্রাঞ্চ ম্যানেজার এস এম শফিকুল মাওলা চৌধুরী ও লকারের দায়িত্বরত অফিসার ইউনুস। গতকাল সোমবার রাতে নগরীর চকবাজার থানায় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় তিনি অভিযোগটি দাখিল করেন।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর আজাদীকে বলেন, লকার থেকে সোনা চুরির অভিযোগ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারী একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। বিষয়টি দুদকের শিডিউলভুক্ত হওয়ায় থানায় মামলা রেকর্ড হচ্ছে না। আমরা অভিযোগটি দুদকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

ভুক্তভোগী রোকেয়া বারীর ছেলে মো. রিয়াদ আজাদীকে বলেন, আমরা এজাহার দিয়েছিলাম। কিন্তু ওসি এজাহারটিকে জিডি হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং তিনি বলেছেন এটি দুদকের শিডিউলভুক্ত। তাই তিনি অভিযোগটি দুদকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী এখন দুদক মামলা দায়ের করবে।

রোকেয়া আক্তার বারী নগরীর চট্টেশ্বরী রোডের বিটিআই বেভারলি হিলসের বাসিন্দা। তার স্বামীর নাম মৃত ডা. এম এম বারী। পিতা হচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মৃত আবু বকর সিদ্দিকী। ব্যাংকের কর্মকর্তারা চুরিকৃত স্বর্ণালংকার ফেরত প্রদানসহ দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ও আপোসে বারবার আশ্বাস দেওয়ায় অভিযোগ দাখিলে বিলম্ব হয়েছে জানিয়ে লিখিত অভিযোগে রোকেয়া বারী বলেন, আমি ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখার একজন হিসাবধারী সেবা গ্রহীতা। আমার সঞ্চয়ী হিসাব নং ৮১০০/৭। ২০০৬ সাল থেকে উক্ত ব্যাংকে আমি ও আমার মেয়ে নাসিয়া মারজুকা একটি যৌথ মালিকানার লকার বরাদ্দ পেয়ে ব্যবহার করে আসছি। লকার নং৪৪ এবং চাবি নং, যা অত্র শাখার লকার হিসাব খোলার ফরমের ক্রমিক নং৭৯ তে লিপিবদ্ধ আছে। উক্ত লকারে আমার ও আমার মেয়েসহ আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আনুমানিক ১৬০ ভরি স্বর্ণাংলকার গচ্ছিত ছিল। ২৯ মে দুপুরে আমি আমার কিছু স্বর্ণালংকার আনার জন্য উক্ত ব্যাংকে যাই এবং লকারের দায়িত্বরত অফিসার ইউনুসকে আমার লকার খুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। তিনি তার চাবি দিয়ে লকার কক্ষের দরজা খোলার সাথে সাথে উক্ত ব্যাংক অফিসার আমার নামে বরাদ্দকৃত লকারটি খোলা দেখতে পেয়ে আমাকে বললে আমি তা দেখে হতভম্ব, বিচলিত ও জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ি। পরে জ্ঞান ফিরলে আমি লকার অনুসন্ধান করে উপলব্ধি করি যে, লকার কক্ষে প্রবেশের দরজা ও লকার উভয়ই সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু লকার খোলা এবং লকারে রক্ষিত আনুমানিক ১৬০ ভরি স্বর্ণাংলকারের মধ্যে আনুমানিক ১৪৯ ভরি স্বর্ণাংলকার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে হাতের চুড়ি ৬০ ভরি, জরোয়া সেট ২৫ ভরি, গলার সেট ১০ ভরি, গলার চেইন ২৮ ভরি, আংটি ১৫ ভরি ও কানের দুল ১১ ভরি। এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করার পর তা ম্যানেজার এস এম শফিকুল মাওলা চৌধুরীকে অবগত করার জন্য কর্তব্যরত লকার অফিসার ইউনুসকে অনুরোধ করি। এছাড়া ঘটনাটি তাৎক্ষণিক চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করি। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে দেখেন, লকারটি খোলা অবস্থায় রয়েছে এবং কয়েকটি অলংকার রয়েছে। যার ওজন আনুমানিক ১০/১১ ভরি। বিষয়টি ব্যাংকের ম্যানেজার, কর্তব্যরত লকার অফিসারসহ সকলকে অবহিত করা সত্ত্বেও তারা উক্ত বিষয়ে কোনো সদুত্তর প্রদান করেননি। ব্যাংকের কর্মকর্তাকর্মচারীদের যোগসাজসে একই উদ্দেশ্য পূরণকল্পে স্বর্ণালংকার চুরিসহ অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে; যা দণ্ডবিধি ১৮৬০এর ৩৭৯, ৩৮০, ৪০৬, ৪০৯ ও ৩৪/১০৯ ধারায় শান্তিযোগ্য অপরাধ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালী-লোহাগাড়ায় ভোট কাল
পরবর্তী নিবন্ধকবর দেওয়ার আগ মুহূর্তে ‘মৃত’ নবজাতকের কান্নার শব্দ