তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দেশের অবস্থান ধরে রাখতে হবে

| শনিবার , ৫ আগস্ট, ২০২৩ at ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ

অনবরত খারাপ খবর শুনতে শুনতে যখন হাঁপিয়ে উঠছি, তখন একটি সুসংবাদ দুয়ারে এসে কড়া নেড়েছে। সংবাদটি হলো ‘গত বছর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ।’ এ রকম দুঃসময়ে দেশের অবস্থান ধরে রাখা অবশ্যই আনন্দজনক খবর। আগের মতোই প্রথম অবস্থানে চীন। তৃতীয় ভিয়েতনাম। ২০২২ সালে বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের হিস্যাও বেড়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ ২০২৩’ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। গত সোমবার প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে হারানো মুকুট ফিরে পায় বাংলাদেশ। ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ আবারও দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে চলে আসে। এর আগে ২০২০ সালে করোনাকালে বাংলাদেশকে টপকে দ্বিতীয় স্থানটি দখল করে নিয়েছিল ভিয়েতনাম।

ডব্লিউটিওর পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২ সালে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের তুলনায় এটি বেড়েছে ২৭ শতাংশ। অন্যদিকে গত বছর ভিয়েতনামের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের। ডব্লিউটিওর প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখে যায়, গত বছর বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের হিস্যা বেশ খানিকটা বেড়েছে। ২০২২ সালে বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। ২০২১ সালে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর আগে ২০২০ সালে ৬ দশমিক ৩০ ও ২০১৯ সালে ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ ছিল এ হার।

তৈরি পোশাক রপ্তানির বিশ্ববাজারে গত বছর বাংলাদেশের মতো ভিয়েতনামের হিস্যাও খানিকটা বেড়েছে। বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানিতে তাদের অংশ দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০২১ সালে যা ছিল ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ।

বরাবরের মতো চীনের তৈরি পোশাক রপ্তানিই সবচেয়ে বেশি। গত বছর ১৮২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে দেশটি। যদিও গত বছর পোশাক রপ্তানির বাজারে তাদের অংশ কিছুটা কমে হয়েছে ৩১ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০২১ সালে যা ছিল ৩২ দশমিক ৮০ শতাংশ।

একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও জোটগতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানির বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। সে হিসাবে বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক, চতুর্থ ভিয়েতনাম। অবশ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোন দেশ কী পরিমাণ রপ্তানি করেছে তা উল্লেখ করা হয়নি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রতিবেদনে।

অন্য দেশগুলোর মধ্যে গত বছর তুরস্ক ২০ বিলিয়ন, ভারত ১৮ বিলিয়ন, ইন্দোনেশিয়া ১০ বিলিয়ন, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তান ৯ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে।

এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে চীন সবার শীর্ষে। তবে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি হয়েছে ইউরোপের বাজারে। তাঁরা বলেন, ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী ইউরোপের ক্রেতারা এখনও বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে। আর এটি সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশে গ্রিন ফ্যাক্টরি বাড়ানোর মধ্য দিয়ে। তাঁরা মনে করেন, ইউরোপের ক্রেতাদের মধ্যে আমাদের পোশাকের চাহিদা বাড়ার আরেকটি কারণ বাংলাদেশের পোশাকের গুণগতমান আগের চেয়ে বেড়েছে।

এদিকে গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) এক স্টাডিতে বলা হয়েছে, একক দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। ২০২১২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের বাজারে ৪.৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি করেছে। ব্রেক্সিটের পর এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর জন্য জিএসপি’র (জেনারেলাইজড সিস্টেম অফ প্রিফারেন্সেস) আদলে ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস) নামে একটি স্কিম চালু করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য, যার ফলে সেখানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির শর্ত আরো সহজ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর ফলে দেশটিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে আড়াই গুণ বাড়তে পারে।

ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারই মূলত বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির মূল লক্ষ্য। অতীতে দেখাও গেছে তাই। এই অঞ্চল থেকেই দেশের পোশাকখাতের আয় বেশি। তবে এবার চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ। যেসব দেশে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি নিয়ে তেমন আশা করা হয় না সেসব দেশেই এবার বেশি রপ্তানি হয়েছে। অপ্রচলিত বাজারে পোশাক রপ্তানি করে চমক সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত। আগামীতে আরো চমক দেবে এই খাতসেই প্রত্যাশা আমাদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে