এক গ্রামে মনা মিয়া নামে এক দিনমজুর বাস করতো। তার ছয়টি মেয়ে একটি ছেলে ছিল। সে অত্যন্ত দরিদ্র ছিল। এমন দরিদ্র ছিল, অনেক সময় না খেয়ে পরিবার সহ উপবাস থাকতে হতো। তবে মনা মিয়া খুবই বুদ্ধিমান ছিল। ঘরে তার এবং তার পরিবারের কারো ভালো জামা কাপড় ছিল না। সব ছেঁড়া–ফাটা। একটি মশারী আছে তাও ছেঁড়া–ফাটা। তার দেশের রাজা ছিল সহজ সরল প্রকৃতির। সবাইকে বিশ্বাস করতো। একদিন তার মনে দুষ্ট বুদ্ধি এলো। কিভাবে রাজাকে ঠকিয়ে রাজ্য দখল করা যায়। যে চিন্তা সেই কাজ। তার ঘরের ছেড়া–ফাঁটা মশারিটাকে তালি জোড়া দিয়ে ঠিক করে নিল। রাজার বাস ভবনের সামনে গিয়ে তেলেসমাতি মশারি আছে বলে চিল্লাতে থাকলো। রাজা এমন আজব মশারীর নাম পূর্বে কখনো শোনে নাই। রাজার মনে কৌতূহল জাগলো। মশারি দেখার জন্য শাহজাদাকে পাঠালো। শাহজাদা তালি জোড়া মশারিটা দেখে অবাক হয়ে গেলো। মশারীটার এমন বিশ্রী গন্ধ। শাহজাদার অবস্থা দেখে মনা মিয়া বলল, এই মশারির অলৌকিক ক্ষমতা আছে। শাহজাদা প্রশ্ন করলো, কি অলৌকিক ক্ষমতা? মনা মিয়া বলল, এই মশারিতে প্রবেশ করলে বেহেশত দেখা যায়। ইচ্ছা করলে নানারকম বেহেশতের খাবার খেতে পারবে। তবে কিছু নিয়ম আছে, মশারিতে প্রবেশ করলে সেগুলো মানতে হবে। শাহজাদা বললো, কী নিয়ম মানতে হবে। মনা মিয়া প্রথমে পাক–পবিত্র হতে হবে, দ্বিতীয়ত মশারিতে ভালো করে দামি আতর, সেন্ট দিতে হবে। তবেই বেহেশত দেখবে। বেজন্মা হলে দেখবে না। শাহজাদা রাজাকে গিয়ে মশারির ব্যাপারে বিস্তারিত বললো। রাজা এসে মনা মিয়াকে মশারির দাম জিজ্ঞেস করলো, মনা মিয়া বললো ২০০ লক্ষ মি. মার্কিন ডলার দিতে হবে। এমন দাম শোনে রাজা অবাক। রাজা বললো, তোমাকে এখন ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার দিব। বাকি ১৫০ লক্ষ মা. ডলার পরে দিব। মনা মিয়া বললো এমনি দেয়া যাবে না। তার জন্য চুক্তি করতে হবে। রাজা রাজি হলেন।
রাজা মন্ত্রি পরিষদকে নিয়ে সভা ডাকলেন। সভায় দিন তারিখ ঠিক করা হলো। রাজ্যে ঘোষণা করা হলো অমুক দিন রাজা ও রানি তেলেসমাতি মশারিতে প্রবেশ করবেন। যথাসময়ে সবাইকে রাজার মেহমান খানায় উপস্থিত থাকার জন্য। যেই কথা সেই কাজ। যথাসময়ে দেশের জনগণ রাজার মেহমানখানায় উপস্থিত হলেন। এদিকে রাজা রানীর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল কে আগে মশারিতে প্রবেশ করবে। শেষ পর্যন্ত রাজা রানিকে মশারিতে প্রবেশ করতে দিলেন। তবে, রানি সবার অগোচরে কিছু ফলমূল নিয়ে মশারিতে প্রবেশ করলেন। মশারিতে প্রবেশ করে রানি বেহেস্ত দেখলেন না। রানির মনে পড়ে গেল যে বেহেস্ত দেখবে না সে বেজন্মা। কি আর করা রানি বুদ্ধি করে বেহেস্ত দেখার ভান করলেন। নানারকম বেহেস্তীয় ফল খাচ্ছে বলে আর হাসছে। রাজা, মন্ত্রী পরিষদ সহ দেশের জনগণ উৎসুক হয়ে দেখছেন আর তালি দিচ্ছেন। রানি মশারি থেকে বের হওয়ার পর রাজা প্রবেশ করলেন। রাজা কিছু দেখতে পেলেন না। রানির মত রাজাও বুদ্ধি করে কিছু ফলমূল নিয়ে প্রবেশ করেছিল। এবার রাজাও রানির মতো অভিনয় করলেন। রানি, মন্ত্রী পরিষদ সহ দেশের জনগণ উৎসুক হয়ে দেখছেন আর তালি দিচ্ছেন। রাজার ধারণা রানি বেহেস্ত দেখেছেন আবার রানির ধারণা রাজা বেহেস্ত দেখেছন। চুক্তি মোতাবেক একদিন মনা মিয়া রাজার দরবারে আসলেন বাকী টাকা নেওয়ার জন্য। রাজা এত টাকা দিতে অক্ষম হওয়ায় অর্ধেক রাজ্য মনা মিয়াকে লিখে দিলেন। মনা মিয়া হলেন দেশের রাজা।