তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লিগ নিয়ে সাধারণত কারো তেমন কোন মাথা ব্যথা থাকার কথা নয়। কিন্তু গত বৃহষ্পতিবার স্টেডিয়াম পাড়ায় হঠাৎ আলোচনায় আসে তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লিগ। সবার মুখে মুখে একটা কথা শুনছিলাম লিগের সুপার থ্রি পর্বের শেষ ম্যাচটি নাকি পাতানো হবে। তৃতীয় বিভাগ লিগের একটি ম্যাচ পাতানো হবে, এ এমন কি ? কিন্তু গতকাল দেখলাম এই ম্যাচটি নিয়ে দারুণ হৈ চৈ চলছে স্টেডিয়াম পাড়ায়। সত্যি সত্যি ম্যাচটিতে পাতানো খেলেছে দু’দল মাদারবাড়ি শোভনিয়া ক্লাব এবং সাউথ এন্ড ক্লাব। পরে জানা গেল এই ম্যাচটি পাতানো খেলার পেছনে কারণ কি। লিগের সুপার থ্রি পর্বের তিন দলের অপরটি বাঁশখালী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা। আগের দুই ম্যাচের দুটিই ড্র হয়েছে। ফলে বাঁশখালী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার পয়েন্ট দুই ম্যাচে দুই আর শোভনীয়া ক্লাব এবং সাউথ এন্ড ক্লাবের পয়েন্ট এক করে। এই দুই দলের মধ্যকার শেষ ম্যাচে যে দল জিতবে তাদের একটি আর বাঁশখালী উপজেলা দল দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হবে। কিন্তু শোভনীয়া ক্লাব এবং সাউথএন্ড ক্লাব পরিচালনা করেন একজন। তিনি মোশারফ হোসেন লিটন। তিনি আবার দু’দলের কাছেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দু’দলকেই দ্বিতীয় বিভাগে তুলবেন। তাই শেষ ম্যাচটিতে শোভনীয়া এবং সাউথ এন্ড ক্লাব ড্র করলে তিন দলের পয়েন্ট সমান হয়ে যাবে। আর সেক্ষেত্রে আবার তিন দলের মধ্যে খেলা অনুষ্ঠিত হবে। আর সে সুযোগটা কাজে লাগিয়ে শোভনীয়া এবং সাউথ এন্ড ক্লাবকে দ্বিতীয় বিভাগে তুলবেন। কিন্তু কপাল বোধহয় মন্দ এই দুই দলের কন্ট্রাক্টর লিটনের। কারণ এই ম্যাচটি দেখার জন্য চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম শহীদুল ইসলাম, সহ সভাপতি নজরুল ইসলাম লেদু, সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ দুলাল, সিজেকেএস যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সিজেকেএস নির্বাহি সদস্য নাসির মিয়া সহ অনেকেই হাজির ছিলেন। আর তাদের সামনেই একেবারে ন্যক্কারজনকভাবে পাতানো খেলেছে শোভনীয়া ক্লাব এবং সাউথ এন্ড ক্লাব। মাঠে হাজির সকল কর্মকর্তা একবাক্যে স্বীকার করছেন এটি একটি লজ্জাজনক পাতানো ম্যাচ। শুধু তাই নয় এই ম্যাচের রেফারীও ছিল ন্যক্কারজনক ভূমিকায়। জেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা অবাক হচ্ছেন তাদের দুঃসাহস দেখে। এতজন কর্মকর্তার সামনে নির্বিঘ্নে পাতানো ম্যাচ খেলে যাচ্ছে তৃতীয় বিভাগের দুটি দল। বল নিয়ে একবার এদিকে যাচ্ছেতো আরেকবার ওদিকে যাচ্ছে দু’দলের খেলোয়াড়রা। গোলে কোন শট নেই। যে যার যার মত বল নিয়ে মাঠে ঘুরছে। একজন আরেকজনের কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়ারও যেন কোন প্রবণতা নেই। মাঠের বাইরে থেকে লিটন যেভাবে ইশারা করছে ঠিক সেভাবেই যেন খেলছে দু’দলের খেলোয়াড়রা। বেপরোয়া ভাব। ভাবখানা এমন কে কি দেখল তাতে কি আসে যায়? আমি আমার কাজ করি। কারণ দুই দলকে দ্বিতীয় বিভাগে উন্নীত করতে পারলে পকেটে মোটা অংকের টাকা ঢুকবে।
কিন্তু বিধি বাম। দুই সংস্থার কর্মকর্তা, সাংবাদিক, ক্রীড়া সংগঠক, বিভিন্ন দলের খেলোয়াড় কারো চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি এই দুই দল। গতকাল সিজেকেএস এবং সিডিএফএ কর্মকর্তারা একযোগে স্বীকার করেছেন এমন জঘন্য পাতানো ম্যাচ তারা আগে কখনো দেখেননি। আর এই পাতানো ম্যাচের সাথে রেফারীর সংশ্লিষ্টতাও দেখছেন কর্মকর্তারা। না হয় সে ম্যাচের নির্ধারিত রেফারীকে বাদ দিয়ে কেন একেবারে আনকোরা একজন রেফারীকে মাঠে নামিয়ে দেওয়া হবে? আর সে রেফারীও দু’দলের খেলোয়াড়দের সাথে সমান তাল দিয়েছেন। মাঠের এদিক থেকে ওদিকে ছুটোছুটি করা ছাড়া আর কোন কাজ ছিল না তার। যেহেতু দুটি সংস্থার একেবারে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সামনে এমন জঘন্য ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তাই তারা এখন এই ঘটনার কঠোর শাস্তি দাবি করছেন। এদিকে দু’এক দিনের মধ্যে জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন সভা আহবান করতে যাচ্ছে আর তাতে কঠিন শাস্তির মুখে পড়তে পারে শোভনীয়া ক্লাব এবং সাউথ এন্ড ক্লাব। কারণ লিগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পাতানো খেলার শাস্তি সাসপেন্ড সহ আরো কঠিন। এখন দেখার বিষয় কোন পথে হাঁটে জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন।