ভয়াবহ এক বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগুচ্ছে পৃথিবী। পরাশক্তিগুলোর মাঝে যুদ্ধের দামামা যেন বেজে উঠেছে। পৃথিবীতে এখন দু’টি যুদ্ধ চলমান। একটি হল রাশিয়া–ইউক্রেন, অপরটি হল ইসরায়েল–হামাস। ইউক্রেনকে মদদ দিচ্ছে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, সামরিক সহায়তা পাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে। দুই বছর পার হতে চলেছে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ। এটি বন্ধ হওয়ার কোন রাজনৈতিক–কূটনৈতিক উদ্যোগ নেই বললেই চলে। যদিও সমপ্রতি সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন হয়েছিল যুদ্ধ বন্ধের জন্যে কিন্তু কোন সমাধান ছাড়াই তা শেষ হয়েছে। পাল্টাপাল্টি বিষ্ফোরক মন্তব্যে জড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের দুই পরাশক্তি রাশিয়া ও আমেরিকা। আর এদিকে ইসরায়েলের সাথে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস এক অসম যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। সামরিক শক্তিতে পরিপূর্ণ একটি শক্তিধর রাষ্ট্র ইসরায়েল। বিশ্বে ৭০ লাখ ইহুদিদের বসবাস। এদের কাছে ১৮০ কোটি মুসলিম আজ চরম অসহায়। এই বিশাল শক্তিধর রাষ্ট্রের সাথে দীর্ঘ আট মাস অসম যুদ্ধ করে আসছে হামাস, যা বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছে। ৩৮ হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা, ৮০ হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনিকে বাস্তচ্যুত করা ও ২০ লাখ গাজাবাসীকে গৃৃহহীন করা ছাড়াও ৮০% এর অধিক ভবন ধ্বংস– এটা হল ইসরায়েলের একমাত্র অর্জন। কয়েক হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করার দাবী করলেও পৃথিবীর একমাত্র মিথ্যুক রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত ইসরায়েলের এই দাবীকে অসাড় বলে মনে করছে পুরো বিশ্ববাসী। ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভেতর ঢুকে যে অভিযান চালিয়েছিল তা পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এতে হতভম্ব হয়ে পড়েছিল বিশ্ব। কয়েক হাজার ইহুদি সেনা জাহান্নামবাসী হলেও তা লুকিয়ে রাখার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বর্বর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। হামাস যোদ্ধারা নিজ মাতৃভূমি রক্ষার জন্যে কাফের ইহুদিদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করে আসছে অনেক বছর ধরে। এতে হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে, নিহত কিংবা আহত হয়েছে, বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ৭
অক্টোবর ছিল দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও বেদনার বহিঃপ্রকাশ। ইহুদি বর্বরদের বন্ধু না বানানোর জন্য আল্লাহতায়ালা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন তাঁর পবিত্র কালামে পাকে, ‘হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা ইহুদী খ্রিস্টানদের নিজেদের বন্ধু হিসাবে গ্রহণ কর না। এরা নিজেরা একে অপরের বন্ধু; তোমাদের মধ্যে কেউ যদি এদের কাউকে বন্ধু বানিয়ে নেয়, তাহলে সে অবশ্যই তাদের দলভুক্ত হয়ে যাবে আর আল্লাহতায়ালা কখনও জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দান করেন না’–সূরা মায়েদা – ৫১। অথচ আজ মুসলিম নামধারী আরব রাষ্ট্রগুলো ইসলাম বিরোধী শক্তি কাফের ইহুদী রাষ্ট্রকে বন্ধু বানিয়ে রেখেছে। তুরুস্ক ইসরায়েলকে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে কতিপয় মুনাফেক আরব রাষ্ট্র জায়নবাদী ইসরায়েলের সাথে পণ্য রপ্তানির মাত্রা বাড়িয়েছে। অতএব ১৪০০ বছর আগে আল্লাহতায়ালার সেই আয়াতের পরিপন্থী কাজ করে যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, সৌদিআরবসহ কয়েকটি আরব রাষ্ট্র। তারা বিশ্ব মুসলিমদের সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এরা যেন বর্বর ইসরায়েলদের দল হয়ে গেছে। আল্লাহতায়ালার ঘোষণা অনুযায়ী এদেরকে তিনি হেদায়েত দান করবেন না। রক্তপিপাসু নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের জমিন নিরীহ ফিলিস্তিনবাসীদের তথা নিরপরাধ শিশু ও মহিলা, আবাল–বৃদ্ধ–বণিতার রক্তে রঞ্জিত করেছে। এখনো মরদেহ পড়ে আছে কংক্রিটের নিচে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছে, লেবাননেন সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে লেবাননকে এমনভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে যেন তাদের মনে হবে প্রস্তর যুগে তারা ফিরে এসেছে। এই হুঁশিয়ারীর আগে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসারাল্লাহ ইসরায়েলকে কড়া হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছে এভাবে– ইসরায়েল যদি লেবাননে আঘাত আনে তাহলে ইসরায়েলের প্রতি ইঞ্চি জনপদও নিরাপদ থাকবে না। ইসরায়েলের প্রতিটি সামরিক স্থাপনা, অবৈধ ইহুদি বসতি নিমিষেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। এসব পাল্টাপাল্টি হুমকিতে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ জমতে শুরু করেছে। মধ্যপ্রাচ্য যেন এখন আতঙ্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধে না জড়ানোর জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। যদি লেবাননের সাথে ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে বিশ্বের আরেক পরাশক্তি দেশ ইরানও বসে থাকবে না। মুখে যদিও ফিলিস্তিনবাসীর জন্য মায়াকান্না করে তবুও পশ্চিমারা এই ভয়াবহ আসন্ন যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে যাবে–এতে কোন সন্দেহ নেই। অতএব ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে ইসরায়েল–লেবানন ভয়ংকর যুদ্ধে মেতে উঠলে আবারও অশান্ত হয়ে উঠবে মধ্যপ্রাচ্য। আর এতে হিজবুল্লাহর সাথে যোগ দেবে লেবাননে অবস্থানরত স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনি যুবকরা, হামাস যোদ্ধারা, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা, ইরান সমর্থিত ইরাকী মিলিশিয়ারা, ইরান সমর্থিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং এমনকি আফগানিস্তানের তালেবানরাও এতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সামরিক সহায়তা পাঠাতে পারে তুরস্ক, রাশিয়া ও চীন। আইডিএফ এর মতে হামাসের যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই বললেও তাদের বক্তব্য যে অন্তঃসারশূন্য, তা হামাসের সাম্প্রতিক গেরিলা হামলাগুলো থেকে প্রমাণিত হচ্ছে। এখন হামাস যোদ্ধারা নতুন নতুন সুড়ঙ্গ তৈরি করছে, নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে মারণাস্ত্র তৈরি করছে, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি যুবক যুদ্ধ করার জন্য হামাসে যোগ দিচ্ছে–এসব যেন ইসরায়েল বর্বর বাহিনী দেখেও না দেখার ভান করছে। ৭০ হাজার ইসরায়েলি সেনা যুদ্ধে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এই লজ্জা তাদের ঢাকার কোন জায়গা নেই। আবার আরেকটি যুদ্ধের জন্য তারা হুংকার দিচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে–হিজবুল্লাহর সাথে ইসরায়েল নাও টিকতে পারে কারণ অতীত ইতিহাস তাই বলে দিচ্ছে।
এখন বিশ্বে দরকার হযরত ওমর (রাঃ) এর মতন একজন সাহসী সিপাহসালার–যার আহ্বানে ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান ও শাহাদাতের তামান্না পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় মগ্ন সতেজ ঈমানউদ্দিপ্ত, আল্লাহর পথে জীবন দানে উন্মুখ যুবকরা ঝাঁপিয়ে পড়বে কাফের ইহুদীদের বিরুদ্ধে আর এই যুদ্ধে জয়লাভ করবে আল্লাহর উপর ভরসাকারী নিপীড়িত মুসলিম জাতি। এরই মধ্যে পুতিনের উত্তর কোরিয়া সফর শেষে চরম উৎকন্ঠা বিরাজ করছে দুই কোরিয়ার মাঝে, ওদিকে চলছে চীন ও তাইওয়ানের মাঝে যুদ্ধংদেহী মনোভাব। অনেক রাষ্ট্রে অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা চলছে। বলিভিয়া, কেনিয়া, মেক্সিকোতেও গণ–অসন্তোষ চলছে। এ কিসের আলামত? আমরা কি একটি ভয়াবহ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগুচ্ছি? মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের এই চরম বিপদ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
লেখক: সভাপতি–রাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি),
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল