চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে গতকাল বুধবার। অন্যান্য শিক্ষার্থীর মত প্রকাশিত তালিকায় রয়েছে হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার নামও। মার্কশিটে তার নামটি আছে, রোল নম্বরও ঠিক। কিন্তু হৃদয় তরুয়া আর নেই। হৃদয় এখন শুধুই ইতিহাস–একটি আন্দোলনে শহীদ হওয়া শিক্ষার্থীর নাম। তার শহীদি স্বীকৃতি মিলল ফলাফলের মার্কশিটেও।
মার্কশিটে দেখা যায়, ৩০১ থেকে ৩০৮ নম্বর সব চার ক্রেডিটের কোর্সে ‘এফ’ গ্রেড পেয়েছেন হৃদয়। সব পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকায় এমনটা এসেছে। টিউটোরিয়াল মার্কসের ঘরে ১৫ লেখা রয়েছে। জিপিএ ০.০০। এর নিচে রয়েছে জবসধৎশং এর ঘর। এতে লেখা রয়েছে, ‘ঐব ংধপৎরভরপবফ যরং ষরভব রহ ঃযব অহঃর–উরংপৎরসরহধঃরড়হ ঝঃঁফবহঃং গড়াবসবহঃ–২০২৪.’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার বাড়ি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার ঘটকের আন্দুয়া গ্রামে। বাবা রতন চন্দ্র তরুয়া একজন কাঠমিস্ত্রি এবং মা অর্চনা রানী তরুয়া অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। পরিবারটি চরম অর্থকষ্টে থাকলেও হৃদয়ের মেধা ও অধ্যবসায়ে আশার আলো দেখছিল। হৃদয় ছিলেন একমাত্র সন্তান। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করে হৃদয় ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। নিজের স্বপ্ন ছিল একদিন বিসিএস দিয়ে বড় কর্মকর্তা হবেন, অভাব ঘুচাবেন পরিবারের। হতদরিদ্র পরিবারটিও তাকিয়ে ছিল– ছেলে একদিন বড় চাকরি করে তাদের দুঃখ দূর করবে। টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতেন এবং মাঝে মাঝে বাড়িতে টাকা পাঠাতেন।
হৃদয় ছিলেন শান্তশিষ্ট, বইপ্রেমী এবং ন্যায়ের প্রশ্নে আপসহীন। ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন নতুন করে দানা বাঁধে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে রাস্তায় নামে। হৃদয়ও এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তার ফেসবুক পোস্টগুলোতে দেখা যায়, তিনি রাষ্ট্র ও সমাজের অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট মোড়ে আন্দোলন চলাকালে পুলিশ ও তৎকালীন ক্ষমতাসীন লোকজন আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়। সংঘর্ষ চলাকালীন হৃদয় গুলিবিদ্ধ হন। গুলিটি তার বাম পাশে ঢুকে ফুসফুস ছিঁড়ে বের হয়ে যায়। তাকে প্রথমে পার্কভিউ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পর দিন সন্ধ্যায় তাকে আইসিইউ এ্যাম্বুলেন্স করে ঢাকায় বক্ষ্যব্যাধি হাসপাতালে পাঠানো হয়। তারপর সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকায় সিএমসিতে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বছরের ২৩ জুলাই ভোর ৫টা ২১ মিনিটে হৃদয় মৃত্যুবরণ করেন।
হৃদয়ের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তার গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। তার নামে নতুন কলা অনুষেদের নামকরণ করা হয়েছে। বন্ধুরা তাকে বিপ্লব ও তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে স্মরণ করছেন।












