৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে নবজাতক কন্যাসন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাবার বিরুদ্ধে। দুই কন্যার পর তৃতীয়বার কন্যাসন্তান হওয়ায় তিন কন্যার দায় এড়াতে নবজাতককে বিক্রি করেছেন তিনি। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের কুলালপাড়া এলাকার বাসিন্দা সিএনজি টেক্সি চালক মো. সাদ্দামের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ৩ দিন বয়সী ওই নবজাতককে হাসপাতাল থেকেই টাকার বিনিময়ে হস্তান্তর করেন তিনি।
এই বিষয়ে জানতে রাতে সাদ্দামের বাড়িতে গেলে তিনি বিষয়টি শিকার করেন। তবে তার দাবি, অভাবের সংসারে নবজাতক শিশুর হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পারায় তিনি এমনটি করেছেন। যারা নবজাতককে নিয়ে গেছেন তাদের বাড়ি উপজেলার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নে। তাদেরও ১৪ বছরের সংসারে কোনো সন্তান না থাকায় বাচ্চাটাকে দত্তক নেন। তবে টাকার বিনিময়ে নয়, ৫০ হাজার টাকা হাসপাতালের বিল ও চিকিৎসা বাবদ নিয়ে নিকটাত্মীয়ের কাছে তার কন্যাসন্তানকে দিয়েছেন বলে জানান অভিযুক্ত পিতা সাদ্দাম।
এ খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ওই টাকা ফেরত দিয়ে নবজাতক কন্যাকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন রেজায়ে মোস্তফা প্রবাসী পরিষদ–ওমানসহ বেশ কিছু সংগঠন ও স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। তবে টাকা দিলেও নিজ কন্যাকে ফেরত পাবেন কিনা সংশয় প্রকাশ করেন নবজাতকের মা সুমি আক্তার (২৪)। এ সময় দত্তক নেওয়া পরিবারের সাথে তারা যোগাযোগ করলে বুধবার দিনে এই ব্যাপারে কথা বলবেন বলে জানানো হয়। এর আগে গতকাল বিকালে চন্দ্রঘোনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সুমি আক্তার নামের এই গৃহবধূকে ২৭ জুন রাত ১টার দিকে হাসপাতালের গাইনী চিকিৎসক ডা. নিফা দেওয়ানের রেফারেন্সে ভর্তি করা হয়। এরপর ২৯ জুন দুপুর ১টায় সিজারের মাধ্যমে জন্ম হয় নবজাতক কন্যাসন্তানের। চিকিৎসা শেষে গতকাল বাড়ি যাওয়ার ছাড়পত্র দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তৃতীয় কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে শিশুটির পিতা সাদ্দাম বাচ্চাটিকে অন্যত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া চালালে কান্না করতে থাকেন মা সুমি আক্তার।
পাশের এক রোগীকে রক্ত দিতে যাওয়া পারভেজ হোসাইন নামে এক যুবক বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেন। তিনি এ বিষয়ে নবজাতক শিশুর পিতার সঙ্গে কথা বলেন। পিতা তাকে জানিয়েছিলেন, হাসপাতালের বিলের টাকা দিতে না পারায় অন্যত্র বাচ্চাটিকে দিয়ে দিচ্ছেন তিনি। এ সময় পারভেজ চেষ্টা করেন নিজে টাকার ব্যবস্থা করে বাচ্চাটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে। কিন্তু বাবা রাজি না হওয়ায় তা পারেননি বলে জানান। বিষয়টি উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিলে তা সবার নজরে আসে।
পারভেজ হোসাইন বলেন, বাচ্চা বিক্রির বিষয়ে বুঝতে পেরে মায়ের সাথে কথা বলেছিলাম। মা বলেছিল প্রয়োজনে বাপের বাড়ি গিয়ে তিন কন্যাকে মানুষ করবেন, তবুও তিনি বাচ্চা দেবেন না। অন্যদিকে শিশুটির পিতার সাথে কথা বলতে হাসপাতালের নিচতলায় গিয়ে দেখি দুজন লোক বাচ্চাটিকে নিতে এসেছেন। পরে বাবাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে বাচ্চাটি নিয়ে যান তারা। আমি বিল পরিশোধের ব্যবস্থার কথা জানালেও তিনি রাজি হননি। তিনি বাচ্চাটিকে দিয়ে দেন। বিষয়টি খুবই খারাপ লেগেছে, তাই ফেসবুকে শেয়ার করেছি।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা. বিকে দেওয়ানজি বলেন, বাচ্চা বিক্রির ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। স্বাভাবিক নিয়মে ১৪ হাজার টাকা বিল আসে। ডাক্তারের রেফারেন্সে ২০০০ টাকা মওকুফ করে ১২ হাজার টাকায় ছাড় দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত সাদ্দাম হোসেন জানান, হাসপাতালের বিল এসেছে ১৪ হাজার। ঔষধ খরচ এবং চিকিৎসকের বিল বাবদ আরও ১০ হাজার টাকা লেগেছে; যা তার কাছে ছিল না। অন্যদিকে আগে থেকেই তার দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে। তৃতীয়টাও কন্যাসন্তান হওয়ায় বাধ্য হয়ে চিকিৎসা খরচ জোগাতে বাচ্চাটিকে খরচের বিনিময়ে নিঃসন্তান আত্মীয়কে দিয়েছেন। রাতে বাচ্চাটিকে ফিরিয়ে আনতে রেজায়ে মোস্তাফা প্রবাসী পরিষদের সদস্যরা তার সাথে যোগাযোগ করেছেন বলে জানান। এছাড়া এরশাদ নামে স্থানীয় একজন তাকে সাহায্যের আশ্বাস দেন। এরপর তিনি বাচ্চাটিকে ফিরিয়ে আনতে দত্তক নেওয়া পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বুধবার দিনে যোগাযোগ করতে বলেছেন। স্ত্রীও তার নবজাতককে ফিরিয়ে আনতে বলছেন বলে জানান। তাই সন্তান ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী তিনি।
মরিয়মনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক হিরু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে ওই পরিবারে ইউপি সদস্য এনামকে পাঠিয়েছি। অভাবের তাড়নায় টাকার জন্য নাকি আত্মীয় বিধায় বাচ্চাটিকে দিয়ে দিল, সেটা খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।