তুরস্কের এই ভূমিকম্পের কারণ কী?

| মঙ্গলবার , ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

সাধারণত একটি স্থানে ভূমিকম্প হলে এর উৎপত্তিস্থলের ভূউপরিভাগের অংশটি ‘এপিসেন্টার’ বা ‘উপকেন্দ্র’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে গতকাল সোমবার তুরস্কের ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা একে ‘এপিসেন্টার’ নয় বরং ‘এপিলাইন’ বা ‘উপরেখ’ হিসেবে বর্ণনা করছেন।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর এর যে ‘আফটারশক’ বা পরাঘাত তার মাত্রাও ছিলো ৭ দশমিক ৫। একে আরেকটি ভূমিকম্পই বলছেন তুরস্কের কর্মকর্তারা।

সিএনএনের আবহাওয়াবিদ ও দুর্যোগকালীন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ চ্যাড মেয়ারস ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন, কেন এই ভূমিকম্পের পরাঘাতও আরেকটি ভূমিকম্পের মতো শক্তিশালী হয়েছে। তিনি বলেন, ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ‘আফটার শক’টি নিজেই আরেকটি ভূমিকম্প। ওই অঞ্চলে ১৯৯৯ সালের পর এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার ঘটনা। আমরা সাধারণ উপকেন্দ্রের (পৃথিবীর কেন্দ্রে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের বিবেচনায় ভূপৃষ্ঠের যে স্থান) কথা বলে থাকি, কিন্তু এই ভূমিকম্পের বেলায় আমাদের একে ‘উপরেখ’ বলা উচিৎ। খবর বিডিনিউজের।

পৃথিবীর ভূভাগের বাইরের পৃষ্ঠটি অনেক টুকরো দিয়ে গঠিত, যেগুলোকে টেকটোনিক প্লেট বলা হয়। পৃথিবী সৃষ্টির আদিতে এই প্লেটগুলো একসঙ্গে ছিল, এগুলো ক্রমে সরতে সরতে এখন বিভিন্ন মহাদেশের আলাদা অবস্থান তৈরি করেছে। সঞ্চালনশীল এই প্লেটগুলোর সীমানা ‘সিস্টেম অব ফল্টস’ হিসেবে পরিচিত। ফল্ট হচ্ছে দুই প্রস্থ পাথরের মধ্যখানের ফাটল বা চ্যুতি। টেকটোনিক প্লেটের এই ফল্টগুলোর হঠাৎ যে কোনো নড়াচড়াই ভূমিকম্পের কারণ।

তুরস্কের ভূতল দিয়ে এমনই দুটি ফল্ট লাইন চলে গেছে যার নাম ‘নর্থ আনাতোলিয়ান ফল্ট লাইন’ ও ‘ইস্ট আনাতোলিয়ান ফল্ট’। তুরস্ক এই দুই ফল্ট লাইনের উপর অবস্থিত হওয়ায় বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।

আবহাওয়াবিদ মেয়ারস বলেন, অ্যারাবিয়ান ও ইউরেশিয়ান এই দুই বিশাল টেকটোনিক প্লেট তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশের ভূঅভ্যন্তরে মিলিত হয়েছে। এই ‘ফল্ট লাইন’ বরাবর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ১০০ মাইল জুড়ে নড়াচড়া করেছে। ভূকম্পনবিদরা এই ঘটনাকে একটি ‘স্ট্রাইক স্লিপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যেখানে দুই টেকটোনিক প্লেট পরস্পরকে স্পর্শ করছে, এবং হঠাৎই তারা পাশাপাশি ‘স্লাইড’ করেছে বা পিছলে গেছে। কিন্তু একটি ‘স্ট্রাইক স্লিপ’ তখনই ঘটে যখন প্লেট দুটো পাশাপাশি উলম্বভাবে নয় বরং অনুভূমিকভাবে পিছলে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভূকম্পনের বৈশিষ্ট্যের কারণে আফটার শক পরের কয়েক সপ্তাহ, এমনকি কয়েক মাস পর্যন্তও অনুভূত হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউদ্ধারকর্মীরা সময়ের সাথে লড়াই করছেন
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ খেলবে আজ ভুটানের সাথে