তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে প্রকৃতি। গরমে কাহিল মানুষসহ প্রাণীকুল। কিন্তু এই সীমাহীন তাপপ্রবাহ আশির্বাদ হিসেবে ধরা দিয়েছে লবণচাষীদের কাছে। চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে কক্সবাজার ও বাঁশখালী অঞ্চলে লবণের বাম্পার উৎপাদন হচ্ছে। অন্যদিকে বেড়েছে দামও। ১৭০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে মণ ২৬০–২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে লবণ। এতে চাষীদের মনে খুশির শেষ নেই। যতই গরম পড়ুক লোকসান কাটিয়ে উঠতে তা সহ্য করে আরো লবণ উৎপাদন করতে চায় তারা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে (১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত) কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় ৬৮ হাজার ৫০৫ একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। গত ১৭ এপ্রিল বৃষ্টিসহ ঝোড়ো বাতাসে লবণ উৎপাদন ৭ দিন বন্ধ ছিল। এরপর আবার শুরু হয়। বর্তমানে দৈনিক প্রায় ২৬ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত মৌসুমের পাঁচ মাসে ২১ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ বি হান্নান বলেন, গতকাল সোমবার কক্সবাজারে তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৫৮ শতাংশ। এই অতি উচ্চ তাপমাত্রার কারণে জমিতে খুব দ্রুত ও প্রচুর লবণ উৎপাদন হচ্ছে। চলমান আবহাওয়া বিরাজ থাকলে প্রতিদিন উৎপাদনের মাত্রা আরও বাড়বে।
মহেশখালীর হোয়ানকের চাষী আমান উল্লাহ বলেন, বৃষ্টির পর প্রখর তাপের কারণে তীব্র গরম পড়ছে। এতে লবণ উৎপাদনে ভিন্ন চিত্র বিরাজ করছে। উৎপাদন হচ্ছে অত্যধিক এবং উৎপাদিত লবণও বেশ পরিপক্ক। সেই সাথে বেড়েছে দাম। তাই আমাদের চাষীদের মনে এখন স্বস্তি ফিরেছে। কুতুবদিয়া বড়ঘোপের চাষী আবদুল হামিদ বলেন, এতদিন দাম কম ছিলো। তার সাথে বেশ কিছুদিন টানা বৃষ্টি হয়েছে। এতে আমরা চরম হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আল্লাহ রহমতে এখন সিজন বেশ ভালো। এতে আমাদের হতাশা অনেক কেটে গেছে। আর কয়েক দিন পেলে লোকসান কেটে উঠা যাবে।
মহেশখালী লবণচাষী ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, লবণের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে মৌসুমের শুরু থেকে চাষীরা মারাত্মক রকম হতাশ ছিলেন। লোকসানের কারণে অনেকে উৎপাদন বন্ধ রেখেছিলেন। তাই দাম বাড়াতে আমরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে নানা তদবির করেছি। আমাদের দাবি আমলে নিয়ে লবণের দাম বাড়ানো হয়েছে।
বিসিকের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু গত শনিবার পর্যন্ত চলতি মৌসুমের পাঁচ মাসে লবণ উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ২১ লাখ মেট্রিক টন। সে হিসাবে লবণের ঘাটতি থাকে ৪ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। এ প্রসঙ্গে বিসিকের লবণ উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, আবহাওয়ার অফিসের তথ্য মতে মৌসুম শেষ হতে সময় আছে মাত্র ৩/৪ দিন। এখন দৈনিক ২৬ হাজার মেট্রিক টন করে লবণ উৎপাদিত হচ্ছে। তাপপ্রবাহ আরও ৪দিন বিরাজ থাকলে ২ লাখ মেট্রিক টন লবণ পাওয়া যাবে। তারপরও ঘাটতি থেকে যেতে পারে।
তবে উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম আবারো কমতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, উৎপাদনের সাথে দামের বিষয়টি বেশিরভাগ সময় নির্ভর করে। উৎপাদন বাড়লে দাম কমে এটা স্বাভাবিক। যেহেতু এখন বেশ ভালো উৎপাদন হচ্ছে, তাতে দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমদানি না হলে বর্ষার শুরুতেই দাম ৬০০–৭০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে লবণের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার লবণ কিনতে পারে বলে জানিয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান। তিনি গত রোববার কঙবাজার সফর করে লবণের দামে ন্যায্য পর্যায়ে রাখতে সরকারের করণীয় সম্পর্কে অবহিত করেন। এ সময় তিনি বলেন, চাষীদের টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে লবণ ক্রয় এবং দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে লবণমাঠের বর্গা মূল্য নির্ধারণ, চাষিদের প্রণোদনা, স্বাস্থ্যসেবা ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদানসহ নানা সুযোগ–সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।