কক্সবাজারের টেকনাফে ২১ কোটি টাকা মূল্যের সোয়া আট কেজি ওজনের বিক্রয় নিষিদ্ধ তিমি মাছের বমি বা অ্যাম্বারগ্রিস উদ্ধার করেছে বিজিবি। এসময় এক পাচারকারীকেও হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। বাংলাদেশে অ্যাম্বারগ্রিস উদ্ধারের ঘটনা এটিই প্রথম বলে জানায় বিজিবি। আটক শামশুল আলম (৩৫) টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপের মির আহমদের ছেলে।
বিজিবির টেকনাফ–২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, গত রোববার বিকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ বাজারপাড়া সীমান্ত দিয়ে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারীরা কিছু মালামাল পাচার করার খবরে বিজিবির একটি দল অভিযান চালায়। এসময় সন্দেহজনক এক ব্যক্তিকে বস্তা কাঁধে বাজারপাড়ার দিকে আসতে দেখে বিজিবির সদস্যরা তাকে থামার নির্দেশ দিলে সাথে থাকা বস্তাটি ফেলে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। পরে তাকে ধাওয়া দিয়ে আটক করা হয়।
তিনি বলেন, বস্তাটি উদ্ধারের পর বিক্রয় নিষিদ্ধ ৮ কেজি ৩৯৮ গ্রাম অ্যান্বারগ্রিস বা তিমি মাছের বমি পাওয়া যায়। উদ্ধার করা এসব অ্যাম্বারগ্রিসের আনুমানিক বাজার মূল্য ২০ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, সোমবার সকালে উদ্ধার করা অ্যাম্বারগ্রিসগুলো কক্সবাজারের পেঁচার দ্বীপস্থ বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বুরি) পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। সেখানে উদ্ধার অ্যাম্বারগ্রিস শনাক্ত করা হয়। উদ্ধার অ্যাম্বারগ্রিসগুলো কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ট্রেজারি শাখায় জমা দেয়া হয়েছে। আটক পাচারকারীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে টেকনাফ থানায় মামলা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিজিবি জানিয়েছে, বিক্রয় নিষিদ্ধ এই তিমি মাছের বমি বা অ্যাম্বারগ্রিস হতে বিভিন্ন মূল্যবান পারফিউম ও ঔষধ তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে এ ধরনের মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য জিনিসের চোরাচালান অত্যন্ত বিরল ঘটনা।
বিএফআরআই’র সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আশরাফুল হক জানান, তিন প্রজাতির স্পার্ম হুয়েল বা শুক্রাণু তিমি থেকে এ্যাম্বারগ্রিস উৎপাদিত হয়। যার মধ্যে দুই প্রজাতির তিমি আমাদের বঙ্গোপসাগরেও পাওয়া যায়। তিমি দুটি হল– ফিসেটার ম্যাক্রোসেফালাস (Physeter macrocephalus) ও কোজিয়া সিমা (Cogia sima)।
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী ‘ভাসমান স্বর্ণ’ নামে পরিচিত তিমির বমি। স্বর্ণের সাথে তুলনা করা হলেও বাস্তবে এর বাজারমূল্য স্বর্ণের চেয়েও বেশি। বিশ্বে দেশভেদে এই তিমির বমি বা এ্যাম্বারগ্রিস বিক্রি হয় প্রতি কেজি ১ লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ ডলারে, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় হয় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা। বর্তমানে এই মূল্যবান সম্পদটি সংগ্রহের অভাবে প্রকৃতিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দেশের সুনীল অর্থনীতিতে অ্যাম্বারগ্রিসের ভূমিকা নিয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে দৈনিক আজাদীতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে সরকারী উদ্যোগে এখনও অ্যাম্বারগ্রিসের ব্যবহার শুরু না হওয়ায় চোরাচালানীরা এর সুযোগ নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে এর বিক্রয় নিষিদ্ধ হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অ্যাম্বারগ্রিস বৈধ।
২০২১ বছরের মার্চ মাসে থাইল্যান্ডের ৪৯ বছর বয়সী এক নারী সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গিয়ে এক খন্ড অ্যামবারগ্রিস বা তিমির বমি খুঁজে পান। যার বাজারমূল্য ছিল আড়াই লাখ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় হয় আড়াই কোটি টাকার কাছাকাছি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিপর্ন নিয়ামরিন নামের ওই নারী থাইল্যান্ডের নাখন সি থাম্মারাট প্রদেশের বাসিন্দা। এর কয়েক মাস আগে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়, তিমির বমি পেয়ে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গেছেন থাইল্যান্ডের এক জেলে। নারিস নামের ওই জেলে তিমির বমি খন্ডটি প্রায় ২৪ লাখ পাউন্ড বা ২৭ কোটি ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করেন।
গবেষকরা বলছেন, বঙ্গোপসাগর থেকে তিমির বমি বা এ্যাম্বারগ্রিস সংগ্রহের মাধ্যমে বদলে যেতে পারে দেশের ভাগ্য।