তিন মাসেও চালু হয়নি জরুরি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার

চট্টগ্রাম রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল সাধারণ রোগীরা পাচ্ছেন না ওষুধপত্র, শুধু আউটডোর সার্ভিস চলছে

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৬ জুলাই, ২০২৫ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার তিন মাসের মধ্যেও চট্টগ্রাম রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালে এখনো ইনডোর সার্ভিস, জরুরি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার চালু করা সম্ভব হয়নি। সাধারণ রোগীরা পাচ্ছেন না সরকারি কোনো ওষুধপত্র। সব রোগীর জন্য নেই খাবারের ব্যবস্থা। তবে হাসপাতালের আউটডোর সার্ভিস সবার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। প্রতিদিন আউটডোরে দেড় শতাধিক রোগী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ইবনে সফি আব্দুল আহাদ।

গত মে মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং নার্স দেয়ার পর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় সিআরবিস্থ রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালটি। তখন থেকেই আউটডোরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত রোগীদের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে।

এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম আজাদীকে বলেন, রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য বিভাগগুলো চালুর জন্য আমাদেরকে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে। এখন বিশেষ করে জরুরি বিভাগ চালু হওয়া দরকার। আগামী মাস থেকে জরুরি বিভাগ চালু করবো। জরুরি বিভাগের জন্য লজিস্টিক সপোর্ট দরকার; বিশেষ করে ওষুধপত্র দরকার। কিন্তু ওষুধপত্র পাচ্ছি না। সব রোগী যেন ওষুধ পায় এবং খাবারদাবার পায় এ জন্য আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। রেলওয়ের পক্ষ থেকেও উনারা চিঠি দিয়েছেন। ওষুধ এবং রোগীদের খাবারের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেয়া হবে। আমাদের হাসপাতালগুলোতে সরকারি এসেনসিয়াল ড্রাগস্‌ কোম্পানি থেকে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। অত্যাবশ্যকীয় ওষুধগুলো এসেনসিয়াল ড্রাগস্‌ কোম্পানি থেকে দেয়া হয়। এখন শুধুমাত্র রেলওয়ের নিজস্ব কর্মচারীরা ওষুধ পান রেলওয়ে থেকে। বাইরের সাধারণ রোগীরা ওষুধ পাচ্ছে না। সব রোগী যাতে ওষুধ পায় এই জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে লিখেছি। জরুরি বিভাগঅপারেশন থিয়েটার চালুর ব্যাপারে কাজ চলছে। এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ইবনে সফি আব্দুল আহাদ আজাদীকে বলেন, আমাদের এখনো শুধুমাত্র আউটডোর সার্ভিস চালু রয়েছে। প্রতিদিন এক থেকে দেড় শতাধিক রোগী আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। যার মধ্যে শতাধিক রেলের নিজস্ব রোগী; আর ৩০ থেকে ৫০ জনের মত বাইরের রোগী। এখনো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ওষুধপত্র আসেনি। এখনো ইনডোর, জরুরি বিভাগ চালু করা যায়নি। অপারেশন থিয়েটার চালু করা দরকার। সার্জন নেই; আমাকে সার্জন হিসেবে কাজ করতে হয়। গাইনি সার্জন দরকার।

জরুরি বিভাগ চালু হলে এবং অপারেশন থিয়েটার চালু হলে অনেক মেশিনারিজইক্যুইপমেন্ট দরকার। ওষুধ দরকার হবে। সরকারি ওষুধ না পাওয়ায় এখন বাইরের রোগীদের ওষুধ দেয়া যাচ্ছে না। তবে রেলের নিজস্ব রোগীদের রেলওয়ে থেকে কিছু কিছু ওষুধ দেয়া হচ্ছে বলে জানান ডা. ইবনে সফি আব্দুল আহাদ।

তিনি জানান, শুরুতেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৬ জন মেডিকেল অফিসার এবং ৮জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেয়া হয়েছিল। ৮জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মধ্যে ২ জন চলে গেছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন কিন্তু সিনিয়র কোনো নার্স নেই।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীনে পরিচালিত হাসপাতালসমূহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও রেলওয়ের যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার উদ্দেশ্যে গত ২১ এপ্রিল উভয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এই সমঝোতা স্মারকের আলোকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালের যৌথ ব্যবস্থাপনায় সর্বসাধারণের চিকিৎসাসেবার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করে ‘রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতালচট্টগ্রাম’ করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হাসপাতালটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স পদায়ন করলেও সেই সাথে আনুষঙ্গিক চিকিৎসা সরঞ্জাম বৃদ্ধি ও সুবিধা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, ইনডোর চালু করতে একটু সময় লাগবে। ইনডোর চালু করতে গেলে রোগীদের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। রোগীদের থাকার জন্য বেডের প্রয়োজন আছে। এসব কিছুর জন্য একটু সময় লাগবে। খাবার সরবরাহের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করতে হবে।

এখন প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত শুধুমাত্র আউটডোর কার্যক্রম চালু রয়েছে। বর্তমানে অর্থপেডিঙ, গাইনি এন্ড অবস, মেডিসিন, চর্ম ও যৌন, কার্ডিওলজি, ইএনটি, ডেন্টাল এবং সার্জারি সেবা প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান চিকিৎসকরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৫ আগস্ট অথবা দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা দরকার
পরবর্তী নিবন্ধবাইকে টেক্সির ধাক্কা, ট্রাকের নিচে পিষ্ট মামা ও দুই ভাগিনা