তিন বাহিনীর কর্মকর্তারাই পেলেন ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা

| মঙ্গলবার , ১ অক্টোবর, ২০২৪ at ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ

সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌ ও বিমান বাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরও গ্রেপ্তার ও বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার মত সুযোগ দিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার এক আদেশে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের (সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদুর্ধ্ব সমপদমর্যাদার) ৬০ দিনের জন্য এ ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর কমিশন পাওয়া কর্মকর্তাদের সারাদেশে দুই মাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। সোমবারের নতুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর কমিশন্ড কর্মকর্তারাও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। ফৌজদারি কার্যবিধির যে ১৭ নম্বর ধারায় সেনা কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তাতে তারা নির্বাহী হাকিম হিসেবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অর্থাৎ জেলা প্রশাসকের অধীনে থাকবেন। ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ এবং ১৪২ ধারার অধীনে তাদের কার্যক্রম চলবে বলে জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। এসব ধারায় গ্রেপ্তার ও গ্রেপ্তারের আদেশ, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করা, তল্লাশি পরোয়ানা জারি, অসদাচরণ ও ছোটোখাটো অপরাধের জন্য মুচলেকা আদায়, মুচলেকা থেকে অব্যাহতি, বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ, স্থাবর সম্পত্তি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বাধা অপসারণ এবং জনগণের ক্ষতির আশঙ্কা করলে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা বাড়তে থাকলে শেখ হাসিনার সরকার ১৯ জুলাই কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। এরমধ্যেই আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে, বিক্ষোভ ও সহিংসতা বাড়তে থাকে। মাসব্যাপী সেই আন্দোলন এক পর্যায়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। পরে ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার তুমুল আন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। সরকার পতনের পর দেশজুড়ে থানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আক্রমণের শিকার হতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা। আগুন দেওয়া হয় থানা ও পুলিশের স্থাপনায়। লুট করা হয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ। আন্দোলনের মধ্যে মানুষের ব্যাপক সেই ক্ষোভের সময় পুলিশের বেশির ভাগ সদস্য কাজে ফেরেননি। পরে কর্মবিরতিতে যায় পুলিশ। তাদের অনুপস্থিতিতে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে।

সরকার পতনের তিন দিন পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নতুন সরকারের সময় কারফিউ না থাকলেও দেশজুড়ে সেনা মোতায়েন থাকে। পুলিশের অনুপস্থিতিতে শুরুর দিকে থানায় থানায় দায়িত্ব পালন করেন সেনা সদস্যরা। পরে আন্দোলন শেষে পুলিশ কাজে ফিরলেও হারানো সেই মনোবল ফেরেনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। এরমধ্যে বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটছে। এমন প্রেক্ষাপটে সশস্ত্র বাহিনীর কমিশন্ড কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্বাহী ম্যাজেস্টেটের ক্ষমতা দেওয়া হল। সেনাবাহিনী দেশজুড়ে অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মিলে যৌথ অভিযানেও অংশ নিচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবিতে সভা-সমাবেশ করতে লাগবে অনুমতি
পরবর্তী নিবন্ধক্যাডেট সৌরভ চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন দুই মাস আগে