রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী পাসপোর্ট পেতে সহযোগিতার অভিযোগে তিন পুলিশ পরিদর্শক, একজন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এ মামলাটি দায়ের করেন ওই কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রতারণার মাধ্যমে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যকে অন্যায়ভাবে লাভবান করে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধমূলক অসদাচরণের মাধ্যমে ভুয়া জাতীয় সনদপত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদানপূর্বক সনদ প্রদানের বিপরীতে বালাম বই ও মুড়ি বই গায়েব করে জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে ও ভুয়া পরিচয়, নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি, জাতীয় পরিচয়পত্র ও স্মার্ট কার্ড প্রদান এবং মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তারা।
মামলার আসামিরা হলেন, কক্সবাজার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার সাবেক পরিদর্শক এসএম মিজানুর রহমান, রুহুল আমিন, প্রভাষ চন্দ্র ধর, কক্সবাজার জেলার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন। তাছাড়া আসামিদের মধ্যে ১৬ রোহিঙ্গা হলেন- মো. তৈয়ব, তার তিন ভাই মোহাম্মদ ওয়াসেস, মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, মোহাম্মদ রহিম, স্ত্রী নূর হামিদা, সন্তান আব্দুর রহমান, আবদুস শাকুর, নূর হাবিবা, বোন আমাতুর রহিম, ভগ্নিপতি নুরুল আলম ও বোনের তিন ছেলে মেয়ে আসমাউল হুসনা, আমাতুর রহমান ও মো. ওসামা। তাছাড়া মামলার এজাহারে কক্সবাজারের ইসলামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুর ছিদ্দিক নিজে লাভবান হয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে তাদেরকে জাতীয়তা সনদপত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করে ও নিবন্ধন বালাম বই গায়েব করে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে লাভবান হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
আসামিদের মধ্যে পুলিশ পরিদর্শক এস এম মিজানুর রহমান বর্তমানে পটুয়াখালী জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে, পরিদর্শক রুহুল আমিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার পরিদর্শন (তদন্ত), প্রভাষ চন্দ্র ধর রংপুর ডিআইজি অফিসে পদায়িত আছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে কক্সবাজারের সাবেক জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের কুমিল্লা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে পদায়িত রয়েছেন।
মামলার বাদী শরীফ উদ্দিন বলেন, কক্সবাজারের সদর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওই পরিবারটি রোহিঙ্গা হলেও দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। পরিবারটির সদস্যরা বাংলাদেশি পাসপোর্ট, স্মার্ট কার্ড গ্রহণ করে অনেকেই প্রবাস জীবন যাপনও করছেন। তারা মিয়ানমার থেকে পরিচিত লোকজনদের নিয়ে এসে পরিবারের সদস্য পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেতেও সহায়তা করেন। রোহিঙ্গা পরিবারটির সদস্যদের পাসপোর্ট পেতে পুলিশ জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই সহায়তা করেছেন। তারা নির্বাচন কমিশনের অনিবন্ধিত ল্যাপটপের মাধ্যমে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন এবং স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করেছেন। তারা পুলিশ প্রতিবেদন পেয়ে পাসপোর্টও পেয়েছেন। যাচাই-বাছাই না করে পুলিশ পরিদর্শকরা প্রতিবেদন দিয়েছিলেন।’