দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ফিশিং বোটে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৩০ জন জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময় তাদের হেফাজতে থাকা ২টি ট্রলার থেকে ৮টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫টি কার্তুজসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। গত রোববার ও গতকাল স্থল ও সাগর পথে ৪৮ ঘণ্টার এক রুদ্ধশ্বাস অভিযানে র্যাব ৩০ জন জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে বঙ্গোপসাগরে দস্যুতা করে বেড়াতেন বলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। র্যাব জানায়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা ও বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলের জলদস্যু বাহিনী কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর সম্প্রতি আবারও সাগরে ডাকাতি পরিচালনা করছে। ভুক্তভোগীদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে র্যাব অভিযানটি পরিচালনা করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন করিম, মো. রুবেল, মো. জফুর, শফি আলম, আব্দুর রহিম, মো. শামীম, মো. ইউসুফ, শাজাহান বেগম, মো. সাহাব উদ্দিন, মো. শওকত, মো. ইসমাইল, দেলোয়ার ইসলাম, নুর মোহাম্মদ, আব্দুর রহিম সিকদার, মো. মফিজুর রহমান, ফজল হক, মো. গিয়াস উদ্দিন, মো. কাছেদ, মো. আকিদ খান, মো. দিদারুল ইসলাম, মো. নাঈম, মো. হারুন, মো. ইয়াছিন, মো. খলিলুর রহমান, মো. ইকবাল হোসেন, মো. শাহেদ, মো. হোসেন, মো. আলী হোসেন, আব্দুল মান্নান ও মো. সোলায়মান।
অভিযান শেষে গতকাল পতেঙ্গার ১৫ নং ফিশারিঘাটে র্যাব–৭ এর লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম ব্রিফিংয়ে বলেন, স্থল ও সাগর পথে অভিযান চালিয়ে ৩০ জন জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, তারা পুরো এক–দুই সপ্তাহ বঙ্গোপসাগরে ডাকাতি করে দাঁপিয়ে বেড়ায়। গডফাদারদের কাজ হল অস্ত্র, গুলি এবং ট্রলারের যোগান দেয়া। বিভিন্ন নৌ, লঞ্চ, স্টিমার ঘাটে সোর্সের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাগরে অভিযানে যাচ্ছে কিনা তা তদারকি করা হয়। ডাকাতি করে মাছ এবং মালামাল বিক্রয়ের টাকা ৪০ শতাংশ কথিত গডফাদারের, ২০ শতাংশ তেল খরচ এবং বাকী ৪০ শতাংশ ডাকাতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত সদস্যদের মাঝে বন্টন করা হয়।
র্যাব জানায়, ডাকাতি শেষে লুটপাটকৃত মাছ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ভোলা ও বরিশাল অঞ্চলের দিকে নিয়ে বিক্রয় করা হতো। পরবর্তীতে লভ্যাংশ আনোয়ারা–কুতুবদিয়া এলাকার জলদস্যুদের কাছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হত। এই ডাকাত দল মূলত তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে তাদের দস্যূতার কার্যক্রম পরিচালনা করত। এর মধ্যে প্রথম পর্বের দলনেতা গ্রেপ্তার শাহেদ মাঝি। তিনি মূলত কুতুবদিয়া এলাকার বাসিন্দা। তার দলের কাজ ছিল ডাকাতি করার জন্য অস্ত্র, বোট, জাল এবং আনুসাঙ্গিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা। দ্বিতীয় পর্বের দলনেতা গ্রেপ্তার ইউসুফ মাঝি। তিনি ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী। তিনি প্রথমে ডাকাতির জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিবার্চন করে বিস্তারিত নির্দেশনা প্রদান করে ডাকাতির জন্য প্রস্তুত করে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় একত্রিত করতেন। এরপর ডাকাতির স্থান নির্বাচন করে নিজে সশরীরে হাজির থেকে ডাকাতির কার্যক্রম সম্পন্ন করতেন। আর তৃতীয় পর্বের দলনেতা গ্রেপ্তার করিম মাঝি। তিনি ডাকাতির পরে লুন্ঠিত বোট, মাছ, জাল এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি বিভিন্ন জায়গায় বিক্রয় করে উক্ত টাকা গ্রুপের সকল সদস্যকে সমানভাবে বন্টন করতেন বলেও জানিয়েছে র্যাব।