তিনি মিশে আছেন মানুষের অন্তরে

মো. মুজিবুর রহমান ফারুকী | বুধবার , ১০ জুলাই, ২০২৪ at ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বোয়ালখালী উপজেলা তথা সমগ্র চট্টগ্রামে একজন বিশিষ্ট সমাজ সেবক হিসেবে আহলা শেখ চৌধুরী পাড়ার এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আলহাজ্ব আবদুস সোবহান চৌধুরী সুপরিচিত ছিলেন। বিভিন্নমুখী কর্মকুশলতার কারণে তিনি পরবর্তী জীবনে বিত্তবান হয়েছিলেন। একাধিকবার আমুচিয়াকড়লডেংগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে কর্তব্যকর্ম সম্পাদনে তিনি নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন। এলাকার উন্নয়ন, অসামাজিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ এবং তরুণ সমাজ যাতে বিপথগামী না হয় সেদিকে ছিল তাঁর প্রখর দৃষ্টি। তিনি ছিলেন এক মহৎ শিক্ষানুরাগী ও বিদ্যুৎসাহী। ১৯৬৯ সালে নিজস্ব অর্থায়নে পূর্ণচন্দ্র সেন সারোয়াতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে দেন যা আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর এই মহান অবদানের জন্য তাঁকে আজীবন দাতা সদস্য হিসেবে গ্রহণ করেন এবং পববর্তীতে একাধিকবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি পদে তিনি নির্বাচিত হন। তিনি শিক্ষার্থীদের সর্বদা লেখাপড়ায় উৎসাহিত করতেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আহলা আছাদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি মাটির দালান হতে পাকা দালানে রূপান্তরিত হয়। মানব দরদী ও হিতৈষী জনাব চৌধুরী ১৯৬৮ সালে বন্যায় যখন সারা দেশ একাকার হয়ে যায় তখন তিনি এলাকার আশ্রয়হীনদের আশ্রয় এবং খাদ্য সামগ্রী দিয়ে বন্যার্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন অকুতোভয়ে এলাকায় অবস্থান করে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী, বুদ্ধিদীপ্ত জনাব চৌধুরী এলাকার নিরাপত্তায় কৌশলী হয়ে খড়কুটো, খড়ের গাদা জ্বালিয়ে হানাদার বাহিনীর প্রবেশকে নিরুৎসাহিত করতে সক্ষম হন। সভাসমিতিতে স্কুলকলেজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদিতে তিনি সভাপতি অথবা প্রধান অতিথির পদ অলংকৃত করার জন্য আমন্ত্রিত হতেন। এ ধরনের অনুষ্ঠানে তিনি সহজ সরল ভাষায় জনসাধারণ তথা ছাত্র সমাজকে সৎকাজে উৎসাহিত করতেন। তাঁর আবেগপূর্ণ বক্তৃতা উৎসুক জনতা নীরবে গভীর আগ্রহে শুনতেন। তাঁর বক্তৃতা দানের বাচনভঙ্গী ছিল অদ্ভুত এবং আঞ্চলিক ভাষায় বিভিন্ন রসে ভরপুর। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি এলাকার ছাত্রছাত্রীদের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আত্মনির্ভরশীল জাতি গঠনের লক্ষে তিনি ১৯৮৮ সালে স্থানীয় দাশের দিঘির পাড়ে তাঁর নামে একটি কারিগরি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যা এখনও কালের সাক্ষী হয়ে চলমান আছে। তিনি ১৯৯০ সালের ৩১ মে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেন। মাতা পিতার পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তিনি চির নিদ্রায় শায়িত আছেন। এ মহান কর্মবীর মরহুম আবদুস সোবহান চৌধুরীর সৎকর্মগুলো এখনো এলাকাবাসী স্মরণ করে, তিনি মিশে আছেন মানুষের অন্তরে অন্তরে। মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের উঁচু আসন দান করুন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রকৃতিতে বর্ষার অপরূপ সৌন্দর্য
পরবর্তী নিবন্ধবৃষ্টি বিড়ম্বনা