তিনি কখনো সিআইপি কখনো সরকারি কর্মকর্তা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৮ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

কখনো তিনি সিআইপি, কখনো আবার সরকারি কর্মকর্তা। এ পরিচয়ে হোটেল রেডিসন ব্লু’তে রুম ভাড়া নিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিলেন মো. ফারুক। অভিযোগ পেয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। এসময় তার থেকে একটি জাল সিআইপি কার্ড ও দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার ফারুক কুমিল্লার নাঙ্গলকোট মিজী বাড়ির মো. লোকমানের ছেলে।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে বলেন, ফারুক কোন সিআইপি নয়, সে প্রতারক চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। জাল-জালিয়াতি ও মিথ্যা পরিচয় দিয়ে অন্যের রূপ ধারণ করাই তার কাজ। কখনো সরকারি কর্মকর্তা আবার কখনো সিআইপি পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে সে প্রতারণা করে আসছে। তিনি বলেন, সিএমপি’র অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) থাকাকালীন গতবছর ৬ ফেব্রুয়ারি ফারুককে গ্রেপ্তার করেছিলেন। নিজেকে সিআইপি পরিচয় দিয়ে দুবাইয়ে বসবাসরত এক পাকিস্তানি পরিবারকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে ফারুক আবারও চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান নিয়ে একইভাবে প্রতারণা শুরু করেছে। রেডিসন হোটেলে এডিসি পলাশের সামনে পড়ে যাওয়ার পর ফারুকের আসল পরিচয় বের হয়ে যায়। গ্রেপ্তার ফারুকের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার দায়ে একটি মামলা করে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ওসি মোহাম্মদ মহসীন। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সিএমপির একটি অনুষ্ঠানস্থলের অদূরে হোটেলের লবিতে বসে ওই ব্যক্তির আচরণ দেখে সন্দেহ হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তি তার নাম ঠিকানা প্রকাশ করে এবং তার কাছে থাকা একটি আইডি কার্ড দেখিয়ে নিজেকে সিআইপি পরিচয় দেয়। নিরাপত্তা কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামি নিজেকে সিআইপি পরিচয় দিয়ে গত ৫ জানুয়ারি হোটেল রেডিসন ব্লুতে ৮০৩ রুমে অবস্থান করে। আসামির সাথে অনেক লোকজন হোটেল লবিতে এসে দেখা করে। অনেকেই হোটেল কর্তৃপক্ষের নিকট জানতে চান সিআইপি ফারুক কত নম্বর রুমে আছেন। পরবর্তীতে হোটেল কর্তৃপক্ষ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে, ফারুক কোনো সিআইপি নন, তিনি প্রতারক চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। আসামি বিভিন্ন সময় মিথ্যা পরিচয় দিয়ে অপরের রূপ ধারণ করে কখনো সরকারি কর্মকর্তা আবার কখনো সিআইপি পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে।
পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় প্রতারণার অভিযোগে একবছর আগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আগেরবার গ্রেপ্তারের সময় ফারুকের থেকে সরকারি লোগো এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব নমিতা হালদারের সই করা একটি সিআইপি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছিল। এবারও একই ধরনের কার্ড পাওয়া গেছে। ফেনীতে সে ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা করত। সেই সুবাদে মানবপাচারে জড়িয়ে পড়ে। ট্রাভেল এজেন্সির আড়ালে ভিজিট ভিসায় ফারুক আরব আমিরাতের বিভিন্ন দেশে মানবপাচার করত। এছাড়া ভুয়া সিআইপি কার্ড ব্যবহার করে ফারুক দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে প্রাপ্ত সুবিধা নিয়ে বিদেশে গেছে একাধিকবার। ইমিগ্রেশনে সেই কার্ড ভুয়া হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ফের প্রতারণার ফাঁদ পেতে হোটেল রেডিসনে অবস্থান নেয় মানবপাচারে জড়িত এই ব্যক্তি। জিজ্ঞাসাবাদে ওই প্রতারক আরো জানায়- তার কাছে থাকা সিআইপি কার্ড নিজেই তৈরি করেছে। অন্যের রূপ ধারণ করে ইতোপূর্বেও সে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিজেকে সিআইপি পরিচয় দিয়ে অবস্থান করেছে এবং অনেকের সাথে প্রতারণা করেছে। তার বিরুদ্ধে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় এবং সিএমপির আকবর শাহ থানায় আরো দুইটি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুকুর খননের অনুমতি চেয়ে পাহাড় কেটে মাটি পাচার
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে বিএনপির দুই গ্রুপের পৃথক কর্মসূচি