কানপুর টেস্ট শুরুর আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে সাকিব। হঠাতই বিরাট এক ঘোষণা দিলেন। শেষ দেখছেন টেস্ট এবং টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের। যদিও টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শেষ করেই ফেলেছেন। টেস্টের শেষটা দেশের মাটিতে করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা বুঝি আর হচ্ছেনা। কারণ সাকিবের দেশে ফেরা এবং দেশ থেকে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সে নিশ্চয়তা তিনি চেয়েছেন সেটা বোধহয় পাবেননা সাকিব। তাই হয়তো শেষ টেস্টটা ভারতের কানপুরেই খেলে ফেললেন এই অল রাউন্ডার। যদিও সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ার এভাবে শেষ হোক তার শত্রুও চায়নি। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা ক্রিকেটারদের অন্যতম সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের খেতাব দীর্ঘদিন ধরে নিজের কাছে ধরে রাখার রেকর্ড গড়েছিলেন। সব ফরম্যাটেই তিনি একজন সেরা ক্রিকেটার। বলা হয়, অনুশীলন ছাড়া খেলতে নামলেও দলের অন্যদের চেয়ে ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেন তিনি। এর প্রমাণও বেশ কয়েকবার দিয়েছিলেন। বিশ্বের প্রায় সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলা বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটারও তিনি। সেই সাকিব আল হাসান নোংরা রাজনীতির মারপ্যাঁচে পড়ে ঘরের মাঠ থেকেও বিদায় বলতে পারছেন না। পাকিস্তান এবং ভারতের বিপক্ষে দুটি সিরিজ অ্যাওয়ে হওয়ার কারণে দেশের জার্সি গায়ে তুলে খেলতে পেরেছিলেন। কিন্তু ঘরের মাঠ থেকে টেস্ট ক্রিকেট বিদায় বলার যে আকাঙ্খা তার, সেটা কী তবে পূরণ হচ্ছে না? ভারতের কানপুরের গ্রিনপার্ক স্টেডিয়ামেই কি তবে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলে ফেললেন তিনি? গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মাগুরা–১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন সাকিব। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নাম লেখানোর পরই সাকিব আল হাসান রাজনৈতিকভাবে একটি পক্ষের বিরাগভাজন হয়ে ওঠেন। এরপর জুলাই–আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে সাকিবের ভূমিকা ছিল পুরোপুরি আওয়ামী সরকারের পক্ষে। আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে নিউইয়র্ক এবং কানাডায় সময় কাটিয়েছেন তিনি। ছাত্র–জনতার প্রত্যাশা ছিল তিনি অন্তত সরকারের গণহত্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন এবং ছাত্র–জনতাকে নৈতিক সমর্থন জানাবেন। কিন্তু তার প্রতি প্রত্যাশার ছিটে–ফোটাও পূরণ হয়নি। ফলে ৫ আগস্ট অভ্যুত্থান পরবর্তীসময়ে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। এমনকি তার নামে হত্যা মামলা পর্যন্ত করা হয়। ওই সময় তিনি ছিলেন পাকিস্তানে বাংলাদেশ দলের হয়ে সিরিজ খেলতে। তখন তাকে দল থেকে বাদ দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বিসিবির কাছে লিগ্যাল নোটিশও পাঠানো হয়। সর্বশেষ সাকিবের নামে দুদকেও দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। এমনকি শেয়ার কারসাজিতে সাকিবকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। এত সব পরিস্থিতিতে সাকিব আল হাসান আর কতদিন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারবেন, সে শঙ্কাই দেখা দেয় সবচেয়ে বেশি। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ খেলার জন্য তিনি ইংল্যান্ড থেকে চেন্নাইতে এসে দলের সঙ্গে যোগ দেন। চেন্নাই টেস্টের পর সবাই যখন কানপুর টেস্টের জন্য অপেক্ষায়, তখনই সাকিব নিজে জানিয়ে দেন টি–টোয়েন্টি এবং টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায়। গত বিশ্বকাপেই জাতীয় দলের জার্সিতে সর্বশেষ টি–টোয়েন্টি খেলেছেন। আর টেস্টকে বিদায় জানাতে চান অক্টোবরে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ খেলে। এ নিয়ে বিসিবির সঙ্গে তার কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন সাকিব। সে সাথে আশা করেছিলেন, তার জন্য বিসিবি সুন্দর একটি আয়োজন করবে। অন্তত টেস্ট ক্রিকেটকে ঘরের মাঠ থেকে বিদায় জানানোর অনেক বেশি আকাঙ্ক্ষা তার। সাকিবের এমন চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়ে দেন, তারা সব আয়োজন করতে প্রস্তুত। কিন্তু সাকিবের নিরাপত্তার দায়িত্ব তারা নিতে পারবেন না। এ নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সর্বশেষ যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কথায় পরিষ্কার হলো, সাকিবের দেশে ফেরা আর হবে না হয়তো। কারণ তিনি জানিয়েছেন খেলোয়াড় সাকিবের নিরাপত্তা দেওয়াই আছে। কিন্তু রাজনীতিবিদ সাকিবের নিরাপত্তা তারা দিতে পারবেন না। জনমনে যে ক্ষোভ রয়েছে সেটা সঞ্চারিত হলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতেও পারে। সাকিব আল হাসান যদি দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেলতে দেশে আসতে না পারেন এবং অবসর ঘোষণা নিয়ে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, তাহলে কানপুরেই শেষ টেস্ট খেলে ফেলেছেন এক সময়ের বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। বলা যায় খুবই অপ্রত্যাশিতভাবে নীরবে–নিভৃতে টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় ঘটে গেলো বিশ্বের অন্যতম সেরা এক অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে ৭১টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ১৩০ ইনিংসে ব্যাট করে ৩৭.৭৭ গড়ে করেছেন ৪৬০৯ রান। সেঞ্চুরি ৫টি, হাফ সেঞ্চুরি ৩১টি। সর্বোচ্চ রান ২১৭। উইকেট নিতে পেরেছেন ৩১.৭২ গড়ে ২৪৬টি। ৫ উইকেট নিয়েছেন ১৯ বার, ৪ উইকেট ১১ বার এবং এক ম্যাচে ১০ বার তার বেশি উইকেট নিয়েছেন ২ বার।