তারুণ্যের মানবিক বিকাশ অপরিহার্য

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শনিবার , ৬ নভেম্বর, ২০২১ at ৯:০৭ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বকবি রবিঠাকুরের ‘অন্তর মম বিকশিত করো’ অমূল্য কাব্যগাথার পংক্তি ‘অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে। নির্মল করো, উজ্জ্বল করো, সুন্দর কর হে।/ জাগ্রত করো, উদ্যত করো, নির্ভয় করো হে।/ মঙ্গল করো, নিরলস নিঃসংশয় করো হে।/ অন্তর মম বিকশিত করো, অন্তরতর হে’ উপস্থাপনে নিবন্ধের প্রেক্ষাপট নিবেদন করতে চাই। প্রতিষ্ঠিত সত্য হচ্ছে, হৃদয়ে নিগূঢ় অন্ধকারের চাষাবাদ কখনো মনুষ্যত্ব-মানবিকতার আলো প্রজ্জ্বলন করতে পারে না। এটি অবিশ্বাস করার কোন অবকাশ নেই যে, শুধু দেশে নয়; সমগ্র বিশ্বে মানবতার সঙ্কট সভ্যতার সকল অনুষঙ্গসমূহকে প্রচন্ড পর্যুদস্ত করে চলছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজের মনন-সৃজনে পরিশুদ্ধ আদর্শের আচ্ছাদনে আধুনিকতায় ঋদ্ধ করার সকল প্রদ্বীপ যেন ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে। বিপরীতে ক্রমবর্ধমান নৃশংসতা-সহিংসতা-অর্থলোভ-ভোগবিলাস-অবাঞ্ছিত বিনোদন তারুণ্যের অপ্রতিরোধ্য শক্তিমানতার অগ্রযাত্রায় নির্মম অন্তরায় দুর্ভেদ্য প্রাচীর হিসেবে কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের সচেতন মহলের ধারণা, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে অজানা-অদৃশ্য অবয়বে নিম্ন থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত তরুণদের প্রাণস্পন্দন-কর্মস্পৃহা নিষ্প্রভ করার অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পক্ষান্তরে সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিদের অশুভ ক্ষমতায়ন লুম্পেন-অনগ্রসর সমাজের মত দুর্বলের শাসন-শোষণ পাকাপোক্ত করার অসম প্রতিযোগিতা পরিলক্ষিত।
স্বজন-বন্ধু-অর্থ-কদাচার-অনাচারপ্রীতি তরুণ প্রজন্মকে কতটুকু বিভৎসতায় অযৌক্তিক-অপাংক্তেয় পথ নির্দেশিত করছে; তা বোধগম্য নয়। অন্তরের শক্তিকে জাগ্রত করে মানবিক বিকাশ ব্যতিরেকে আগামী দিনের দেশ-জাতি পরিচালনায় যুক্তি-আস্থার নেতৃত্ব যথার্থ অগ্রগণ্য ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে কিনা; তা গভীর পর্যালোচনার বিষয়। মনো:সমীক্ষণ বিশ্লেষণে মনের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা সজ্ঞান, অর্ধ-সজ্ঞান ও নির্জ্ঞান বা চেতন-অবচেতন-অচেতন স্তরে কলুষিত-অযাচিত-অসংলগ্ন-পাপাচারযুক্ত উপলব্ধি উৎপাটন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। মানবতার প্রকৃষ্ট চর্চা-পরিচর্যা-পরিশীলিত করে তরুণ কর্মবীর তৈরিতে দৃশ্যমান কর্মকৌশল অবশ্যই মানবকল্যাণের লক্ষ্যে নিবেদিত হতে হবে। স্মরণযোগ্য শিক্ষা হচ্ছে; জীবন-জীবিকার শেষ হিসেব অর্থ নয়, কর্মের মধ্যেই অনুসন্ধিৎসু। অন্যথায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, তরুণদের বিরোধ-বিচ্ছেদ, যারপরনাই কুৎসিত-হিংস্র মনোবৃত্তির ফলশ্রুতিতে পারস্পরিক আক্রমণ-আঘাত-হত্যার মতো জঘন্য ঘটনাসমূহ রোধ করা অসম্ভব। জীবন প্রবাহের প্রতিটি পর্যায়ে তরুণদের মনস্তাত্ত্বিক প্রেষণায় ইতিবাচক দৃষ্টান্তসমূহ সমুজ্জ্বল করেই আগামী দিনের রাষ্ট্র পরিচালনায় পারদর্শী-পারঙ্গম নেতৃত্বের উপমায় দূরদর্শী-বিজ্ঞানমনস্ক যুগোপযোগী ব্যক্তিত্ব উন্নয়নের সর্বাধিক প্রাধান্য চলমান সময়-পরিবেশ-পরিস্থিতির জোরালো দাবি।
আমরা সকলে সম্যক অবগত, দেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশই তরুণ যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে। এসব যুবদের নানামুখী দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল যুব নীতিমালা প্রণয়নে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। যুব উন্নয়নে সরকারের কর্মকৌশল সম্পর্কেও এই নীতিমালায় সুস্পষ্ট গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। উন্নত যুবসমাজ তৈরিতে এই নীতিমালা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। বিভিন্ন বিশ্লেষণ অনুযায়ী যথার্থ কর্মপরিকল্পনার অভাব, ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা, বৈষম্যমূলক নীতি, অপর্যাপ্ত গবেষণা, অপ্রতুল বরাদ্দ ও বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয়হীনতাসহ নানা অব্যবস্থাপনা দেশের তরুণদের সামগ্রিক উন্নয়নে প্রধান অন্তরায় হিসেবে বিবেচ্য। বেসরকারি সংস্থা ব্রাক, বিআইজিডি এবং ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সূত্রে জানা যায়, প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে বাংলাদেশী তরুণ-তরুণীরা চাকরির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষার্থীরা যে শিক্ষা পাচ্ছে, তাতে তারা চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ১৬ শতাংশ কম্পিউটার ও ইংরেজি ভাষায় আত্মবিশ্বাসী। এর জন্য দক্ষতার ঘাটতির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগও সমানভাবে দায়ী।
৭ অক্টোবর ২০২১ গণমাধ্যমে প্রকাশিত অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের গবেষণা অনুসারে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশ তরুণ জনগোষ্ঠী। তারা আর্থিকসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন। ৩৬ শতাংশ শহরের তরুণ এবং ৪২ শতাংশ গ্রামের তরুণ কর্মসংস্থান কিংবা কর্মমুখী শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। যুবা নারীদের মধ্যে ৬৬ শতাংশ এবং যুবা পুরুষদের ৩৩ শতাংশের কোনও ধরনের আয়-উপার্জন করতে পারছে না। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের জরিপে দেশের ৪৭ শতাংশ তরুণের মতামতে প্রতিফলিত হয়েছে যে, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সুযোগের অসমতা তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। অর্ধেকের বেশি তরুণদের ধারণা; দেশের নীতিনির্ধারকরা তাদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে ভাবেন না। নীতিনির্ধারকদের বৈষম্যমূলক এই নীতিতে তারা উৎকন্ঠিত। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা যায়, স্বনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ৬৬ বা দুই-তৃতীয়াংশই বেকার। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরি পেয়েছে মাত্র ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং নিজ উদ্যোগীর সংখ্যা ৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত বিশ্বব্যাংক জরিপেও স্নাতক পাস করা ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থীদের বেকারত্বের চিত্র ফুটে ওঠে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ যা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে প্রকাশ, দেশে শিক্ষিত মানুষের মধ্যে বেকারত্বের হার ৪৭ শতাংশ। প্রতিবছর দেশে শ্রমশক্তিতে যোগ হচ্ছে ২০ লাখ মানুষ। কিন্তু সে অনুপাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় বড় একটি অংশ বেকার থেকে যাচ্ছে। গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন তথ্যসূত্রের পরিসংখ্যানে এটি সুস্পষ্ট যে, বাংলাদেশে ৭৫ লাখেরও বেশি মাদকসেবী রয়েছে। ২ এপ্রিল ২০১৯ বেসরকারি সংগঠন মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা মানস এর তথ্যমতে দেশের মাদকসেবীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক যাদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ বেকার এবং ৫০ শতাংশ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। মাদকের মরণ ছোবলে আক্রান্ত তরুণ প্রজন্ম আজ কঠিন বিপর্যয়ে নিপতিত। সমাজসেবা অধিদপ্তরের গবেষণা মতে, শহর-গ্রাম থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত মাদকাসক্ত হচ্ছে। স্বনামধন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে রমরমা মাদক বাণিজ্য। নিত্যদিন বসছে নেশার আসর। অনেকে নেশার টাকা জোগাড়ে জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাই-চুরি-ডাকাতি-খুনসহ দেহব্যবসার মতো বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে। বিপুল সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী নিজেদের জীবনকে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিচ্ছে। ফলশ্রুতিতে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ আশা-আকাঙ্খার ভরসাস্থল তরুণপ্রজন্ম অন্ধকারের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে।
কোভিড-১৯ অতিমারির চরম দু:সময়ে শিশু-কিশোর-তরুণ সমাজের অপরাধের ভয়াবহ দৃশ্যপট এই অতিমারির চেয়েও দুর্বিষহ পরিপ্রেক্ষিত তৈরি করে চলছে। রাষ্ট্র-সমাজ-পরিবারসহ সামগ্রিক পরিবেশ-প্রতিবেশকে প্রচন্ড ক্ষত-বিক্ষত করে যুব সমাজের অপরাধের অপ্রতিরোধ্য গতিভঙ্গি ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতি ও মাত্রিকতায় প্রকাশ পাচ্ছে। ১৪.০১.২০২১ গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, কিশোর অপরাধের গতিময়তা হত্যা-ধর্ষণসহ মারাত্মক কুৎসিত অপরাধে কলুষিত। ১১ জানুয়ারি দেশের মাননীয় পুলিশ প্রধানের বক্তব্য ছিল, ‘পুলিশের জন্য এই কিশোর গ্যাং বা কিশোর অপরাধীরাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন’। পরিবার-সমাজ কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয়-পর্যাপ্ত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হলে এর নেতিবাচক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার চৌহদ্দি নির্ধারণ অসম্ভব হয়ে উঠবে। কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের তথ্যমতে, কেন্দ্রে অবস্থানরত ১৪-১৬ বছর বয়সী কিশোরদের ২০ শতাংশ হত্যা এবং ২৪ শতাংশ নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক সেবন-ক্রয় ও বিক্রয়, অস্ত্র ব্যবহার-ব্যবসা ইত্যাদি জঘন্য অপরাধে জড়াতে এরা বিশেষ মহল কর্তৃক প্রতিনিয়ত প্ররোচিত হচ্ছে।
আমাদের জানা যে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৪ কোটি বা প্রায় ৩০-৩২ শতাংশ শিশু-কিশোর। এদের এক তৃতীয়াংশের অধিক ১ কোটি ৩০ লাখ শিশু বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। ফলশ্রুতিতে অতি সহজেই এদের যে কোন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা অতি প্রকট। সূত্রমতে, বরগুনার নয়ন বন্ড তার ০০৭ গ্রুপ নিয়ে জনসম্মুখে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ হত্যার জন্য ১১ কিশোরকে কারাদন্ড দিয়ে বরগুনার আদালত বলেছেন, ‘সারাদেশে কিশোর অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। গডফাদাররা এই কিশোরদের ব্যবহার করছে।’ এ ধরনের ঘটনা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রায় সংঘটিত হচ্ছে। চলমান কঠিন মানবিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি নবতর সঙ্কট হচ্ছে এই কিশোর অপরাধ। ‘কিশোর গ্যাং উপ-সংস্কৃতি’ সমসাময়িক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার প্রতিকূলে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ প্রপঞ্চ। এর সঠিক অনুধাবন-গতি-প্রকৃতি-মাত্রিকতা-কারণ ইত্যাদির বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা ব্যতিরেকে সংশ্লিষ্ট সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং সমাধানের স্বরূপ উম্মোচন অতিশয় দুরূহ ব্যাপার। দেশের নগর-শহর-জেলা-উপজেলাসহ প্রান্তিক অঞ্চলে এই উপ-সংস্কৃতির বিকাশ ও বিস্তার ইতিমধ্যে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে।
১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস-২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, বিশ্বে প্রতিবছর দশ লাখেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। সমগ্র বিশ্বে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর চতুর্থ কারণ হিসেবে আত্মহত্যাকে বিবেচনা করা হচ্ছে। ২০১৯-২০ সময়কালে করোনার সময়ে বাংলাদেশে আত্মহত্যা করেছে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন। যাদের মধ্যে ২০-৩৫ বয়সীরাই সবচেয়ে বেশি। ১২ জুন ২০২১ গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধকালীন ১৫ মাসে অন্তত ১৫১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে স্কুল শিক্ষার্থী ৭৩, বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ৪২, কলেজ শিক্ষার্থী ২৭ এবং মাদরাসার শিক্ষার্থীর সংখ্যা হচ্ছে ২৯ জন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ২০১৮ সালের জাতীয় জরিপ আনুযায়ী ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী মানুষের প্রায় ৫ শতাংশ একবারের জন্য হলেও আত্মহত্যা করার চিন্তা করেছেন। পারিবারিক নির্যাতন, কলহ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, পরীক্ষা ও প্রেমে ব্যর্থতা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, প্রাত্যহিক জীবনে অস্থিরতা, নৈতিক অবক্ষয়, মাদক ইত্যাদি কারণে দেশের তরুণ সমাজ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।
১ নভেম্বর ‘জাতীয় যুবদিবস ২০২১’ উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে দেশের যুব সমাজের প্রতি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নপূরণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রাম ও অগ্রগতির পথে এ দেশের যুবসমাজের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। মহান ভাষা আন্দোলন হতে স্বাধীনতা সংগ্রামসহ এদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যুবরা যেমন জীবন উৎসর্গ করতে কার্পণ্য করেনি, তেমনি অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামেও তারা নিরলসভাবে ব্যাপৃত।’ তিন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার বৃহৎ অংশই যুবসমাজ। ২০৪৩ সাল পর্যন্ত যুবসমাজের সংখ্যাগত অধিক্যের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ-উন্নত দেশে উন্নীত করতে এ জনমিতিক সুবিধাকে কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে যুবসমাজের জন্য অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত ও উদ্ভাবনী উন্নয়ন নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। যুবসমাজকে কর্মবিমুখতা, কুসংস্কার, মাদকসন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রেখে দক্ষ, আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক, পরমতসহিষ্ণু, উদার ও নৈতিকতাসম্পন্ন বিবেকবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’ মহামান্য রাষ্ট্রপতির উদাত্ত আহ্বানকে যথাযথ মূল্যায়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যুব-তরুণ সমাজের মানবিক বিকাশে সম্ভাব্য সকল পন্থার কার্যকরণ আবশ্যক। বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র যথাযথভাবে তরুণ সমাজের জন্য সঠিক আদর্শ নির্ধারণ এবং প্রায়োগিক পরিক্রমায় তাদের এগিয়ে যাওয়ার পথকে নির্লোভ-নির্মোহ-মনুষ্যত্ব-মানবিকতা ও দেশপ্রেমে পরিপুষ্ট মানবসম্পদ রূপান্তরে ব্যর্থ হলে সুদূরপ্রসারী কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেই।
লেখক: শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে
পরবর্তী নিবন্ধদীপাবলির রাতে প্রেমে মশগুল রণবীর-আলিয়া!