লোকাল বয় তামিম ইকবালের সেঞ্চুরির দিনে বাংলাদেশ উজ্জ্বল সময় পার করেছে প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনে। তিন উইকেট হারিয়ে দলের রান তিনশ পার হয়েছে। তামিমের সেঞ্চুরির পর ফিফটি পেয়েছে আরও তিনজন। তবে দলের এমন ব্যাটিংয়ের দিনে নাজমুল হোসেন শান্তর ১ ও অধিনায়ক মোমিনুল হকের ২ রান দৃষ্টিকটু ঠেকেছে। এ দুজনের ব্যর্থতার পরও বাংলাদেশ কাটিয়েছে স্বস্তির দিন।
চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৩১৮। শ্রীলংকার প্রথম ইনিংসের রান পেরিয়ে যেতে বাংলাদেশের প্রয়োজন আর ৮০ রান। ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরিতে ১৩৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে হাতে ক্র্যাম্প করায় খেলায় বিরতি দেন তামিম ইকবাল। আবার ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংস আরও বড় করার সুযোগ তার আছে। বাংলাদেশের শুরুর জুটিতে শতরান না পাওয়ার দীর্ঘদিনের আক্ষেপ মিটিয়ে মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে ১৬২ রান যোগ করেন তামিম। জয়ের বিদায়ের পর শান্ত ও মোমিনুলও খুব দ্রুত বিদায় নেন। তাদের ব্যর্থতায় আরেকটি ধসের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। তবে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে তা হতে দেননি তামিম, মুশফিকুর রহিম ও লিটনরা। চা বিরতির পর তামিম আর মাঠে নামেননি। মুশফিক ও লিটনের দৃঢ়তায় শেষ সেশনে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। দুজনই পেরিয়ে গেছেন ফিফটি। দিনের শুরুতে সহজ ফিফটি পান তামিম ও জয়। আগের দিন বিকেলে ৭৬ রানের জুটিটা এ দিন সকালে আরও এগিয়ে নেন দুজন। দারুণ কিছু শট খেলেন এ দুজন। তবে দিনের শুরুতে উইকেটের আশায় ছিল সফরকারীরা। কিন্তু প্রথম ১০ ওভারেই তামিম-জয়ের ব্যাটে বাউন্ডারি আসে ৯টি। তামিম ফিফটি করেন ৭৩ বলে। ৪৮ রানে ১৯ বল আটকে থাকার পর জয় ফিফটিতে পা রাখেন ১১০ বলে। দুজনের জুটি পেরিয়ে যায় শতরান। ৫ বছরের বেশি সময়ে ৬১ ইনিংসের পর উদ্বোধনী জুটিতে একশ ছুঁতে পারে বাংলাদেশ। ফিফটির পরপরই ধৈর্য হারান জয়। আসিথা ফার্নান্দোর ফাঁদে পা দেন জয়। কিন্তু ফাইন লেগ সীমানায় সহজ ক্যাচ ছাড়েন লাসিথ এম্বুলদেনিয়া। কোনো উইকেট না হারিয়ে লাঞ্চে যায় বাংলাদেশ। লাঞ্চের পরপর আসিথার শরীর তাক করা বলেই উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন জয় ১৪২ বলে ৫৮ রান করে। এরপর কাসুন রাজিথার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আলগা শটে আউট হন শান্ত। রাজিথারই ভেতরে ঢোকা বলে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হয়ে যান মোমিনুল।
এ সময়টা ছিল বাংলাদেশের জন্য বেশ শংকার। শ্রীলংকার বিপক্ষে দাপুটে ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি উপহার দেন তামিম ইকবাল। তামিম সেঞ্চুরিতে পা রাখেন বাংলাদেশে ছোট্ট ধসের আগেই। ১৬২ বলে আসে তার সেঞ্চুরি। ১৬ টেস্ট ইনিংস পর তিনি পান তিন অঙ্কের স্বাদ। সেঞ্চুরির পরপরই হাতে ক্র্যাম্প হয় তার। ব্যহত হয় ছন্দ। দ্রুত কয়েকটি উইকেট চলে যাওয়ায় সাবধানী পথও বেছে নিতে হয়। মুশফিককে নিয়ে ওই সময়টা লড়াই করে সেশন পার করেন তামিম। এরপর আর প্রচন্ড গরমে ক্রিজে ফেরার শারীরিক অবস্থা তার ছিল না। তিনি থেকে যান ড্রেসিং রুমে। একটি মাইলফলকও তাতে রয়ে যায় অপেক্ষায়। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫ হাজার রানের মাইলফলক আর স্রেফ ১৯ রানের দূরত্বে। তামিম ক্রিজে না ফিরলেও নির্ভরতা যোগান মুশফিক আর লিটন। মুশফিক এক প্রান্তে চালিয়ে যান লড়াই। আরেক পাশে লিটন সাবলীল ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। তবে তামিমকে ড্রেসিং রুমে রেখেই আগে ৫ হাজার হয়ে যেতে পারে মুশফিকের। ২ বাউন্ডারিতে ১২৫ বলে ফিফটি ছুঁয়ে তিনি অপরাজিত ৫৩ রানে। ৫ হাজার হতে তার প্রয়োজন আর মাত্র ১৫ রানের। লিটন ৩৩ রানে একবার জীবন পান।
লংকানদের সেটির খেসারতও বুঝিয়ে দিয়ে তিনি অপরাজিত আছেন ৫৪ রানে। চতুর্থ দিনে বাংলাদেশের প্রথম লক্ষ্য হবে শ্রীলংকার ইনিংস পেরিয়ে যাওয়া। এরপর আরো বেশি রানের যোগান দেওয়া। ম্যাচের লাগাম নিতে হলে এমনটা করতেই হবে বাংলাদেশকে।