তাপদাহ, সাথে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা। চট্টগ্রামে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যস্ততায় তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে ব্যাপকভাবে। তীব্র গরমের মাঝে নগরীর অনেক এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। যখন তাপদাহে মানুষ হাঁপিয়ে উঠছে ঠিক তখনই গতকাল নগরীর অনেক এলাকায় এক ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার ভুক্তভোগীরা এমন তথ্য আজাদীকে ফোন করে জানিয়েছেন।
পিডিবির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরাও তীব্র গরমে লোডশেডিংয়ের কথা স্বীকার করেছেন। পিডিবি জানিয়েছে, কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে।
অন্যদিকে তাপদাহে ক্রেতারা বড় বড় এসিযুক্ত শপিং মহলে চলে যাওয়ায় ক্রেতা সংকটে ভুগছেন ফুটপাতের হকার ও ছোট আকারের দোকানিরা। গরম ও লোডশেডিংয়ে সর্বত্র হাঁপিয়ে উঠেছে মানুষ।
নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভুক্তভোগীরা ফোনে লোডশেডিংয়ের কথা জানান আজাদীকে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, গতকাল নগরীর ঘাটফরহাদবেগ খলিফাপট্টি এলাকায় সকালে, দুপুরে এবং সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি বেশি ছিল। মুরাদপুরের মোহাম্মদপুর এলাকায় ভোর থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিল না বলে জানিয়েছেন এলাকার শিক্ষার্থী মোরশেদ ও ব্যবসায়ী সাইফুল।
বিকেল ৫টার দিকে হাটহাজারীতে গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটলেও চট্টগ্রামে সকাল থেকেই বিদ্যুতের আসা–যাওয়া চলছিল। নগরীর লাভলেইন, মোমিন রোড, হেম সেন লেইন, ঝাউতলা, প্রবর্তক মোড়, মেডিকেল, নাসিরাবাদ, চকবাজার, জিইসি মোড়, চান্দগাঁও, বহদ্দারহাট ফরিদার পাড়া তালতলা, আগ্রাবাদ, বাকলিয়া, উত্তর কাট্টলী, বন্দর, ইপিজেডসহ বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে চকবাজারের মোহাম্মদ আলী শাহ লেইন এলাকার মো. আবদুল হামিদ ফোনে জানান, সকাল ৮টায় বিদ্যুৎ গেছে, দুপুরে এসেছে। সন্ধ্যায় আবার চলে গেছে। বাকলিয়া সাব–স্টেশনে বারবার ফোন করেও কাউকে পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
লোডশেডিংয়ের ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এম রেজাউল করিম বলেন, গতকাল এবং গত শুক্রবার চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কিছুটা কম ছিল। এটি আমাদের কোনো সমস্যা না। আমাদের কয়েকটি পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে। এই কারণে আমরা প্রয়োজনীয় লোড পাচ্ছি না। তাই বিদ্যুতের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তাদের ব্যবসা–বাণিজ্যের অনেক কিছু নির্ভর করে বিদ্যুতের ওপর। কিন্তু অতি মাত্রায় লোডশেডিংয়ের কারণে এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সচল রাখাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল অনেক এলাকায় বেলা ৩টা ২০ মিনিট থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। একদিকে তীব্র গরম, অন্যদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষ কষ্টে ভোগেন। এদিকে রাত পৌনে ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না মোমিন রোড ঝাউতলায়। মধ্যরাতেও এই এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না।
অনেক স্থানে জেনারেটর দিয়ে ভবনে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখতে হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকায় একপর্যায়ে জেনারেটর বন্ধ রাখতে হয়।
এদিকে তীব্র গরমের মাঝে ইফতারের সময়ে বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক এলাকায় মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মানুষও গরমে কাহিল হয়ে পড়েন।